তিন বছর মেয়াদে মেহেরপুর পৌর আওয়ামী লীগ গঠন করা হলেও বর্তমানে এই কমিটির বয়স ১৮ বছর। কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে ১৫ বছর অতিবাহিত হলেও গঠন হয়নি মেহেরপুর পৌর আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি। ইতোমধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ও উপদেষ্টা সদস্যদের অনেকেই মৃত্যুবরণ করেছেন। শুধুমাত্র কমিটি না হওয়ার কারণে মৃতরাও গুরুত্বপূর্ণ পদ দখল করে আছেন।
বর্তমান এ কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন অ্যাড. ইয়ারুল ইসলাম। তিনি সদর উপজেলা চেয়ারম্যান। সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মো: আক্কাস আলী।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৩ সালের ৭ আগস্ট তিন বছর মেয়াদে ৬৭ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কার্যকরী কমিটি ও ১৭ সদস্য বিশিষ্ট উপদেষ্টা পরিষদ নিয়ে মেহেরপুর পৌর আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে দীর্ঘ ১৫ বছর অতিবাহিত হলেও নতুন কমিটির মুখ দেখেনি দলটির নেতাকর্মীরা। দীর্ঘ এই ১৮ বছরে কার্যকরী কমিটির ৭জন এবং উপদেষ্টা পরিষদের ৮জন মৃত্যুবরণ করেছেন।
মৃতবরণকারী নেতারা হলেন, কার্যকরী কমিটির সহ-সভাপতি ডাঃ ওমর ফারুক, দপ্তর সম্পাদক খোকন মিয়া, সদস্য খাদেমুল ইসলাম, হারুন অর রশিদ হারু, পন্টু মিয়া, জহির রায়হান সেন্টু, মোশারফ মন্ডল।
উপদেষ্টা পরিষদের মধ্যে আব্দুল মজিদ মাস্টার, মাহাবুবুর রহমান মধু, আব্দুল গণি, আব্দুল মহিত লাল্টু, আমজাদ হোসেন, বাবুল মিয়া, রফিকুল ইসলাম রফিক, শ্রী মহিমা রনজন পাল বাটুল বার্ধক্যজনিত ও বিভিন্ন কারণে মৃত্যুবরণ করেছেন।
দীর্ঘদিন একই কমিটি থাকায় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে স্থবিরতা দেখা গেছে এমন প্রসঙ্গে তুলে কমিটির কয়েকজন সদস্য বলেন, কমিটিতে যিনি সভাপতি বা সেক্রেটারি হন না কেন, নতুন কমিটি হলে কর্মকাণ্ডে গতিশীলতা আসে। একই কমিটি দীর্ঘদিন থাকলে সেই কমিটি নিয়ে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড এগিয়ে নেওয়া কঠিন হয়ে পেড়ে। বর্তমানের পৌর আওয়ামী লীগের সে ধরণের ঘটনায় ঘটছে। দ্রুত কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনের দাবি জানান তারা। তবে কিছ’দিন আগে পৌর এলাকার কয়েকটি ওয়ার্ড সম্মেলন ও কমিটি গঠন করা হলে বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক সেগুলো মানতে নারাজ। তিনি জানিয়েছেন, নতুন কওে সব ওয়ার্ড কাউন্সিল করে কমিটি গঠন করা হবে।
বর্তমান কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আসলাম খান পিন্টু বলেন, কবে কমিটি গঠন হয়েছে তা আমার নিজেরই মনে নেই। দীর্ঘ ১৫ বছর মেহেরপুর শহর আওয়ামী লীগের কমিটি না হওয়া খুবই দুঃখজনক। এর আগে বেশ কয়েকবার কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও বিভিন্ন কারণে তা সম্ভব হয়নি। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দরা এসে কমিটি গঠনের কথা বললেও এখনও পর্যন্ত সম্ভব হয়নি। আমরা চাই দ্রুত কমিটি গঠন করা হোক।
পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আক্কাচ আলী বলেন, নতুন কমিটি গঠনে আমি ৫ থেকে ৭ বার চেষ্টা করেছি। আগামী কমিটিতে আমি সভাপতি প্রার্থী। দলের নেতাকর্মীরা যদি মনে চায় আমাকে রাখবে না হয় রাখবে না, সিদ্ধান্ত তাদের কিন্তু আমি চাই কমিটিটা হোক। মূলত আমি ২০০৮ সাল থেকে চেষ্টা করছি এই কমিটির জন্য। ২০০৮ সালে আগে থেকে বিভিন্ন আন্দোলন বিভিন্ন কার্যক্রম নিয়ে কমিটি হয়নি। কিন্তু পরে কমিটি হওয়ার সুযোগ ছিলো। পরে যেই কাউন্সিলের জন্য সবকিছু রেডি করি তখনই দলের নেতাকর্মীরা ঝামেলা পাকিয়ে বসে। তাছাড়া দলের মধ্যে তো গ্রুপিং আছেই। কেউ চায় কমিটি হোক, কেউ চায় না। অনেকেই চায় তাদের পছন্দের লোক হোক, পকেটের লোক হোক। ২০১৪ সালেও আমাদের প্রতিমন্ত্রী সে সময় এমপি ছিলেন উনিও যথেষ্ট চেষ্টা করেছেন কিন্তু অন্যান্য নেতারা বাধাগ্রস্ত করেছে। বাধাগ্রস্ত করলে তো কোন কাজ হয়না। অন্যান্য নেতার চায় না কমিটি হোক। সবাই চাই পকেটের লোক হোক। তবে আশা করছি আগামী ফেব্রুয়ারি বা মার্চে কমিটি গঠন হবে।
পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাড. ইয়ারুল ইসলাম বলেন, ইতোপূর্বে তিনবার কাউন্সিলের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হলেও তা সম্ভব হয়নি। সর্বশেষ গত নভেম্বরে কাউন্সিল হবার কথা থাকলেও সেটাও সম্ভব হয়নি।