মেহেরপুর পৌর কবরস্থান থেকে গায়েব হয়ে গেছে ৮৮ বছরের পুরাতন একটি পাকা কবর। ঘটনাটিতে এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়েছে।
কবরস্থান একটি সংরক্ষিত এলাকা। এখানে কবর দিতে গেলেও অনুমতির প্রয়োজন হয়। কবর পাকা করতে গেলেও যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি প্রয়োজন পড়ে। এমন একটি সংরক্ষিত স্থান থেকে রাতারাতি কবর গায়েব হয়ে যাওয়াতে সাধারণ মানুষের মনে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। পাশাপাশি অনেকেই তাদের স্বজনদের বাঁধানো কবর নিয়েও শংকিত হয়ে পড়েছেন।
স্থানীয়রা জানান, রাতারাতি গায়েব হয়ে যাওয়া কবরটি সুলতান উদ্দিন খাঁ’র ছিলো। সূদৃশ্য বাধানো কবরটি মেহেরপুর পৌর গোরস্তানের প্রাচীনতম কয়েকটি বাঁধানো কবরের একটি। সুলতান উদ্দিন খাঁ বৃটিশ শাসনামলে কাচারির নাজির ছিলেন। তার ছেলে গোলাম মোস্তফা খাঁ মেহেরপুর মহকুমার এসডিও অফিসের নাজির ও মুক্তিযুদ্ধের একজন সংগঠক ছিলেন।
কবর জিয়ারত করতে আসা মোঃ নাজিম ইকবাল বলেন, আমি ছোটবেলা থেকেই সুলতান উদ্দিন খাঁ’র সদৃশ্য বাঁধাই করা কবরটি দেখে আসছি। পাশেই আমার বাবা ও দাদার কবর। আজ কবর জিয়ারত করতে এসে পাশের বাঁধানো কবরটি দেখতে না পেয়ে বিস্মিত হয়েছি। পরে জানতে পারলাম কেউ একজন কবরটি ভেঙে বাড়ি নিয়ে গেছে। আমার মতে যে এই কাজটি করেছে সে প্রকৃতই একজন নিকৃষ্ট ব্যক্তি।
মেহেরপুর পৌর গোরস্তানের কেয়ারটেকার মোঃ হারুন বলেন, কয়েকদিন আগে সুলতান উদ্দিন খাঁর দৌহিত্র কয়েকজন লোক সাথে করে এনে কবরটি ভেঙে ফেলে। পরবর্তীতে ধ্বংসাবশেষ ভ্যানে তুলে নিয়ে যায়। আমি বাধা দিতে গেলে বলে আত্মীয় স্বজনকে আমি সামলাবো। পরবর্তীতে আমি পৌর মেয়রের কাছে বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ দিয়েছি।
স্থানীয় একটি মসজিদের মুয়াজ্জিন ও ইসলামী বক্তা মোঃ রুহুল আমিন বলেন, কবর বাঁধানো নিয়ে নানা ভিন্ন মত আছে। তবে যে কবরটি বাধানো আছে সেটি নিশ্চিহ্ন করা কোন সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষের কাজ হতে পারে বলে আমার মনে হয় না। অপকর্মকরীকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া উচিত। এছাড়াও গোরস্থানের ভাব গাম্ভীর্য বজায় রাখার জন্যও যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।
সুলতান উদ্দিন খাঁ’র দৌহিত্র অ্যাডভোকেট মোখলেসুর রহমান স্বপন বলেন, কাজটি যে করেছে, খুবই অন্যায় করেছে। এর বেশি আমি কিছু বলতে পারব না।
মেহেরপুর পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মন্জুরুল কবির রিপন বলেন, আমি কেয়ারটেকারের সাথে কথা বলে জানতে পেরেছি দিনের বেলাতেই কবরটি ভেঙে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কে ভেঙেছে সে বিষয়টিও জানতে পেরেছি। আরও বিস্তারিত জেনে আগামীকাল আপনার সাথে কথা বলবো।
মেহেরপুর পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এবং পৌরসভার প্যানেল মেয়র-২ নুরুল আশরাফ রাজিব বলেন, ‘ঘটনাটির সম্পূর্ণ দ্বায় সমগ্র পৌর পরিষদের উপরেই এসে পড়ে। আমরা সংরক্ষিত স্থানটির নিরাপত্তা বিধানে ব্যর্থ হয়েছি। যেখানে কবর দিতেই অনুমতির প্রয়োজন হয়, সেখান বিনা অনুমতিতে পাঁকা কবর ভেঙে নিয়ে যাওয়া এবং স্থানটিকে নিশ্চিহ্ন করার ঘটনাটি পৌর গোরস্থানের নিরাপত্তার ঘাটতি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। এটি অবশ্যই একটি অপরাধ।
সদর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আশরাফ বলেন, এ ধরনের ঘটনার ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।