মেহেরপুরে বৈরী আবহাওয়ার কারণে পরিপুষ্ট হবার আগেই ঝরে যাচ্ছে আমের গুটি। লিচু ফেটে যাচ্ছে। দেখা দিচ্ছে নানা রোগ বালাই। গেল বছর অতিবর্ষণ আর চলতি বছরে অনাবৃষ্টি আর তাপদাহে যেমন প্রাণিকুলের জিবন ওষ্ঠাগত, তেমনি প্রকৃতি ও পরিবেশের উপর প্রভাব ফেলেছে। স্বপ্ন ভঙ্গ হচ্ছে বাগান মালিক ও ব্যবসায়িদের। তবে কৃষি অফিস বলছে, চাষিদেরকে গাছে পানি স্প্রে ও বালাই বা ছত্রাক নাশক দেয়ার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
বিভিন্ন আম ও লিচু বাগান ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন জাতের আমের গুটি দুলছে গাছের ডালে ডালে। আবার কিছু গুটি ঝরে গেছে। গাছের আমে ছোট ছোট ছিদ্র দিয়ে পোকা মাকড় উঁকি দিচ্ছে। লিচু পরিপক্ক হবার আগেই ফেটে যাচ্ছে। বাগান মালিকরা পানি ও ছত্রাক নাশক স্প্রে করছেন আম ও লিচু গাছে। তার পরও আশানুরুপ ফল পাচ্ছেন না তারা।
সহড়াবাড়িয়া গ্রামীণ ফলবাগানের মালিক আব্দুল আওয়াল সবুজ জানান, তার ১১ বিঘা আম ও লিচুর বাগান রয়েছে। প্রথমে কোন রোগ বালাই না থাকলেও এখন নানা রোগ দেখা দিয়েছে। আমের গুটি ঝরে যাচ্ছে। লিচু ফেটে যাচ্ছে। কৃষি অফিস যেভাবে পরামর্শ দিয়েছে সেভাবেই কাজ করছি কিন্তু আশানুরুপ ফল পাচ্ছি না।
হেমায়েতপুর গ্রামের আনারুল ইসলাম জানান, তার বাগানের লিচুর ফলন বিপর্যয় হবে। প্রতিটি লিচুর থোকায় পোকা লেগেছে। ছত্রাকনাশক দিয়েও কোন কাজ হচ্ছে না। আবার আমের গুটিতে যে স্বপ্ন বুনছিলাম তাও ভেঙ্গে গেছে। গাছের আমের অর্ধেক গুটি ঝরে গেছে। সেই সাথে দেখা দিয়েছে পোকা।
জুগির গোফা গ্রামের আম ব্যবসায়ি জাহাঙ্গীর ও হজরত জানান, আম ব্যবসায়িদের লোকসানের হাত থেকে বাঁচাতে দু বছরের জন্য আম বাগান লীজ দেয়া হয়। তিনি পাঁচটি বাগান লীজ নিয়েছেন। গেল বছর অতি বৃষ্টির কারণে ফলন বিপর্যয় ছিল। এ বছর সেই লোকসান কাটিয়ে উঠতে গাছের পরিচর্যাও করা হয়েছে। কিন্তু অনাবৃষ্টির কারণে সে আশাও এখন নিরাশায় পরিনত হচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসেব মতে জেলায় এবার ২৩৫০ হেক্টর জমিতে আম ও ৬৮০ হেক্টর জমিতে লিচুর বাগান রয়েছে। গাছে গাছে আমের গুটি আর লিচু ছিল ভরপুর। বাম্পার ফলনেরও আশা করা হয়েছিল। কিন্তু এবার সেই ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে। প্রচন্ড তাপদাহে আমের গুটি ঝরে যাচ্ছে আর লিচুতে পোকা দেখা দিয়েছে। অনেক বাগানের লিচু ফেটে যাচ্ছে।
মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ- পরিচালক স্বপন কুমার খাঁ জানান, পরপর দু বছরই বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করছে। এটাতো প্রাকৃতিক ব্যাপার। চাষিদেরকে ১৫ দিন পরপর গাছে সেচ দেয়ার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। সেই সাথে পানি ও ছত্রাক নাশক স্প্রে করার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।