অবৈধভাবে ব্যক্তি মালিকানা জমি দখলের পাঁয়তারার অভিযোগে মেহেরপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী (এক্স-ইএন) খন্দকার গোলাম মোস্তফা, উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (এসডিই) মিজানুর রহমান ও সার্ভেয়ার মিসকাতুল্লাহকে কারণ দর্শানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।
গতকাল বৃহস্পতিবার গাংনীর সহকারী জজ আদালতের বিচারক এ আদেশ দেন। আদেশের দিন থেকে ১০ দিনের মধ্যে আসামিদের কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে।
এর আগে গত মঙ্গলবার একই আদালতে মামলাটি দায়ের করেন গাংনী উপজেলার তেরাইল গ্রামের কলেজ শিক্ষক কামরুল ইসলাম। যার মামলা নং দেওয়ানি ৭৮/২০২৪।
মামলার বাদি পক্ষের আইনজীবী নজরুল ইসলাম মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলার বিবরনে জানা গেছে, সরকারের কাছ থেকে ১৯৫৮ সালে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত পান তৎকালিন এমএনএ (এমপি) নুরুল হক। নুরুল হক বৃটিশ সরকারের সেনাবাহিনীতে চাকুরির সুবাদে পাকিস্থানে থাকার কারনে সিএস রেকর্ড জনৈক ব্যক্তির নামে হয়। পরে দেশে ফিরে এসে আরএস (খতিয়ান যার নং ১৪৫২, আরএস দাগ নং ৫৭৪২ সংশোধনীতে নুরুল হকের নাম নথিভূক্ত হয়।
পরে নুরুল হক ৮৮ সালে ওই জমি ওলিনগর গ্রামের কয়েকজনের কাছে বিক্রি করেন। সেখান থেকে ২০১২ সালে কামরুল ইসলাম ওই জমি কিনে খারিজ, হোল্ডিং খুলে নিয়মিত সরকারকে খাজনা পরিশোধ করে আসছেন। আরএস ম্যাপেও ৫৭৪২ নং দাগটি ব্যক্তি মালিকানাতেই আছে। মেহেরপুর কুষ্টিয়া সড়কের উন্নয়ন চলমান।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার গোলাম মোস্তফা, উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মিজানুর রহমান ও সার্ভেয়ার মিসকাতুল গাংনী উপজেলার তেরাইল গ্রামে নির্মিত ব্রীজের কাছ বাদীর নিজস্ব জমিতে তৈরী দোকান ঘর ভাঙ্গার জন্য বিনা নোটিশে সীমানা নির্ধারণ করেছেন।
এদিকে, জমির মালিক কামরুল ইসলামের জমি থেকে মার্কেট উচ্ছেদ করার হুমকি দিয়ে এবার এই অবৈধ কাজে ব্যবহার করছেন বামন্দী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম বিশ্বাস ও তার অনুগত কয়েকজন লোকজনকে। সওজের ওই তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের পর সাব ডিভিশনাল প্রকৌশলী মিজানুর রহমান তড়িঘড়ি করে জমির মালিক কামরুল ইসলামের মার্কেট ভেঙ্গে দেওয়ার জন্য প্রশাসনের একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট দিনভর চেষ্টা চালিয়েছেন।
সেখানে ব্যার্থ হয়ে স্থানীয় রাজনীতিক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানকে দিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার (৩০ মে) দুপুরের দিকে গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রীতম সাহার নিকট একটি লিখিত অভিযোগ দেন। তবে সড়ক ও জনপথ বিভাগ ও ব্যক্তি মালিকানা দুই পক্ষেরই কাগজপত্র দেখে আইনগতভাবে ব্যবস্থা নেওয়া এবং ওই স্থানে সড়ক ও জনপথ বিভাগের জমি থাকলে সেটা উদ্ধার করার কথা জানান ইউএনও প্রীতম সাহা।
স্থানীয়রা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, রাস্তার পুরানো ব্রীজের পাশ দিয়ে সড়ক বিভাগের নিজস্ব যায়গা থাকলেও সেটি ফেলে রেখে ব্যক্তি মালিকানা জমি দখলের চেষ্টা চালাচ্ছেন তারা। যেখানে ৫ বছর আগে বাদি ওই জমির উপর মাটি ভরাট করে ৫টি দোকান ঘর তৈরী করে ব্যবসা চালিয়ে আসছেন। তারা বলেন, একটি পক্ষের প্ররোচনায় সড়ক বিভাগের প্রকৌশলী এবং কর্মকর্তারা ওই যায়গা দখলের চেষ্টা চালাচ্ছেন।
মামলার বাদি কামরুল ইসলাম বলেন, স্থানীয় একটি চক্রের সহায়তায় সড়ক বিভাগ তাদের নিজস্ব জমি ফেলে রেখে আমার নিজ নামিয় জমি দখল করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। রাস্তা ও ব্রীজ নির্মাণ প্রায় এক বছর আগে শুরু হয়েছে। রাস্তা ও ব্রীজ নির্মাণের জন্য সীমানা নির্ধারণ করে কাজ শুরু হলেও কাজ শেষ পর্যায়ে এসে আমার জমি ভেঙ্গে তা দখলের চেষ্টা চালাচ্ছেন। এব্যাপারে সুরাহা পেতে আমি মেহেরপুর সহকারি জজ আদালতে মামলা দায়ের করেছি।
মামলার পরে মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ১০ টার সময় উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মোবাইল ফোনে কল দিয়ে আমাকে নানা ধরনের হুমকী দেন। হুমকি দিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেছেন, আপনী নাগরিক হিসেবে আদালতের দারস্থ হতেই পারেন। তবে, আপনি চাইলেও আদালত আপনার পক্ষে ইনজানকশন দেবেনা। এটা আদালতের বিষয় এটি আপনি কিভাবে বললেন এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, এটা আমরা উর্দ্ধতন কর্মকর্তা ও প্রশাসন দিয়ে দেখবো।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়কের তেরাইল বাজারের নিকট একটি ব্রীজ ছিল। পুরানো ব্রীজের বলবৎ থাকলেও পাশে আরেকটি ব্রীজ নির্মাণ করা হয়েছে। নির্মিত ব্রীজ থেকে বাদি কামরুল ইসলামের মার্কেটটি প্রায় দেড় শ ফুট দুরে অবস্থিত। ব্রীজের পাশে প্যালাসাইড দিয়ে মাটি ধরে রাখা হয়েছে। রাস্তার দুপাশে জমি উদ্ধারের সময় সওজের নিজস্ব জমি যতটুকু ছিল সেটি ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে।
দীর্ঘ এক বছর পরে মামলার বাদি কামরুল ইসলামের ক্রয়কৃত জমির উপর নির্মিত দোকান ঘর ভাঙ্গার পাঁয়তারা করছে সওজ। তবে জমি দখল করার চেষ্টা করলেও কেবল তা মৌখিকভাবে। কোন অফিসিয়াল পত্র দেওয়া হয়নি এমনকি এলাকাতে মাইকিংও করা হয়নি সম্প্রতি।
এদিকে, কয়েকদিন আগে বাদিকে এসডিই মিজানুর রহমান অফিসে ডেকে এক্স-ইএনকে দিয়ে নানারকম হুমকিও দিয়েছেন।