১২তম গ্রেডের কর্মচারী হিসেবে ২১৩৮০ টাকা স্কেল অনুযায়ী সর্বসাকূল্যে ৩১ থেকে ৩২ হাজার টাকা মাসিক বেতন পান মীর হাবিবুর রহমান। বর্তমানে তিনি মেহেরপুর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের প্রধান অফিস সহকারী কাম হিসাবরক্ষক (বড়বাবু) পদে কর্মরত রয়েছেন। করেননা কোন ব্যবসাও। চাকরিবিধি অনুযায়ী ব্যবসাও করতে পারবেন না। কিন্তু আলাদিনের চেরাগ পাওয়ার মত কয়েক কোটি টাকা সম্পদের মালিক বনে গেছেন তিনি। তার এ সম্পদের উৎস কি? এ নিয়ে হাসপাতালের স্টাফদের মধ্যে চলে আলোচনা।
মীর হাবিবুর রহমান হাবিব একই কর্মস্থলে রয়েছেন ১৩ বছর। এর আগে গানী উপজেলা হাসপাতালে ছিলেন ১৪ বছর। একই জেলায় দীর্ঘদিন থাকায় হাসপাতালের মেডিকেল যন্ত্রপাতি (এমএসআর) ঔষধসহ বিভিন্ন দ্রবাদি, রোগীদের খাবার, মেইনটেনেন্স এমনকি সবক্ষেত্রেই ঠিকাদারদের সাথে তৈরি হয়েছে সখ্যতা। সেখান থেকে কমিশন বাণিজ্যর মাধ্যমে তিনি অর্থবিত্তের মালিক বনে গেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও হাসপাতালেল দুটি এ্যাম্বুলেন্সকে তিনি নিজের মত করে ব্যবহার করেন। অভিযোগ রয়েছে এ্যাম্বুলেন্সে করে তার স্ত্রী, মেয়েসহ পরিবারের সদস্যদের গাংনীসহ বিভিন্ন স্থানের যাতায়াত করেন প্রতিনিয়ত।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবছর কমপক্ষে চার কোটি টাকার এমএসআর ক্রয় করা লাগে। কোন কোন বছর অতিরিক্ত বরাদ্দও দিতে হয়।
যখন যে সরকার ক্ষমতায় এসেছে তখন সেই এমপির সাথে সখ্যাতা গড়ে তুলেন মীর হাবিবুর রহমান। ২০১৯ সালে জাতীয় নির্বাচন কালীন সময়ে বিভিন্ন গোয়েন্দা বিভাগের তদন্ত প্রতিবেদনের ফলে তাকে বরিশালে বিভাগে বদিল করা হয়। কিন্তু ক্ষমতাবলে তিনি সেই বদলি আদেশ পরিবর্তন করে একই স্থানে রয়েছেন।
মীর হাবিবুর রহমানের সম্পদ অনুসন্ধান করে জানা গেছে, মেহেরপুর শহরের নতুন পৌর ঈদগাহের সামনে তিন তলা ভবন একটি, পাশেই একতলা আরেকটি ভবন একটি মহিলা মাদ্রাসাকে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। জমিসহ ভবন দুটির মূল্যে কোটি টাকার বেশি হবে। গাংনী বাজারের স্মরণিকা মার্কেটে হাবিবা লেডিস কর্ণার নামের গার্মেন্টস, যেখানে প্রায় অর্ধকোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। নিজ গ্রাম মেহেরপুর সদর উপজেলার শ্যামপুরসহ বিভিন্ন স্থানে ২৫ থেকে ৩০ বিঘা জমি ক্রয় করেছেন। যার মূল্যে কোটি টাকার বেশি। মীর হাবিবুর রহমানের তিন মেয়ে ও এক পুত্র সন্তান। ছেলে একটি নামকরা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে সিএসই কম্পিউটার সায়েন্স এ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের লেখাপড়া করে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালেল কয়েকজন চিকিৎসক ও স্টাফ জানান, হাসপাতালের বড়বাবু হাবিব কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন শুধুমাত্র কমিশন বাণিজ্য করে। দীর্ঘদিন একই কর্মস্থলে থাকার কারণে তিনি এই সুযোগ পেয়েছেন। এছাড়া বড়বাবু হওয়ার কারণে তার বিরুদ্ধে কেউ কোন কথা বলতে পারেন না। দ্রুত তার সম্পদের তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
হাসপাতালের এক এ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার জানান, বড়বাবু যা বলে তাই করতে হয়। হাসপাতালের দুটি এ্যাম্বুলেন্সকেই তিনি নিজের প্রয়োজনের ব্যবহার করেন। আমরা ছোট চাকরি করি। আমাদের চাকরি হারাতে হয় এমন কোন নিউজ করেননা ভাই।
প্রধান সহকারী কাম হিসাবরক্ষক মীর হাবিবুর রহমানের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, মোবাইলে সব কথা বলা যায় না। পৈত্রিক সম্পত্তি পেয়েছি ৮বিঘা। পরে আমি কিছু কিনেছি। সব মিয়ে ১৫ থেকে ১৬ বিঘা জমি হবে। এছাড়া বিভিন্ন সময় বড় জামাইয়ের সাথে ভূষি মালের ব্যবসা করি। এভাবেই টাকা হয়েছে। কমিশন বাণিজ্যসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধার বিষয়ে তিনি বলেন, কিছু লোক আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে এসকল তথ্য রটিয়েছে।
মেহেরপুর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রধান সহকারী মীর হাবিবুরের রহমানের বিরুদ্ধে এখনো পর্যন্ত কোন অভিযোগ পাইনি। কমিশন বাণিজ্য, এ্যাম্বুলেন্স ব্যবহারের বিষয়গুলো প্রথম শুনলাম। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। একই সঙ্গে তিনি যদি এ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার করে থাকেন তাহলেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।