যশোর অঞ্চলের টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্প’-এর প্রকল্প পরিচালক (পিডি) হিসেবে নিয়োগ পেলেন কৃষিবিদ রমেশ চন্দ্র ঘোষ। তিনি কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত।
রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে বুধবার কৃষি মন্ত্রণালয়ের সম্প্রসারণ-১ শাখার উপ-সচিব মো. জসিম উদ্দিন স্বাক্ষরিত স্মারকের এক প্রজ্ঞাপনে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। কৃষি মন্ত্রণালয় এ তথ্য নিশ্চিত করে।
চলতি বছরের ২৮ জুন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) যশোর অঞ্চলে টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্পটির অনুমোদন দেওয়া হয়।
প্রকল্প পরিচালক হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত কৃষিবিদ রমেশ চন্দ্র ঘোষ ২০১৫ সালে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। এরপর থেকে তিনি অদ্যবধি একই পদে কর্মরত। এর আগে, কৃষি ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরষ্কার পেয়েছিলেন মিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রমেশ চন্দ্র ঘোষ।
শিক্ষা জীবনে রমেশ চন্দ্র ঘোষ সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার দেয়াড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ১৯৯৯ সালে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি, পরে কলারোয়া সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) থেকে ২০০৭ সালে স্নাতক (সম্মান) এবং ২০০৯ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃষি সম্প্রসারণ শিক্ষা বিভাগ থেকে তিনি এমএস ডিগ্রি লাভ করেন।
চাকরি জীবনে বিসিএস (কৃষি) ২৯তম ক্যাডার হিসেবে ২০১১ সালে বাগের হাটের রামপাল উপজেলায় উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। পরে দেড় বছরের মাথায় বদলি হয়ে যোগদান করেন খুলনার দৌলতপুর মেট্রোপলিটন কৃষি অফিসে। সেখান থেকে পদোন্নতি পেয়ে ২০১৫ সালে মিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন।
রমেশ চন্দ্র ঘোষ সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার দেয়াড়া ইউনিয়নের দেয়াড়া গ্রামের রাধাপদ ঘোষ এবং স্মৃতি রাণী ঘোষের ছেলে। পারিবারিক জীবনে রমেশ চন্দ্র ঘোষ দুই কন্যা সন্তানের জনক। তার পরিবারে মা, বাবা, ভাই, বোন, স্ত্রী, কন্যাসহ মোট ১৪ জন সদস্য রয়েছে।
জানা গেছে, কৃষক সংগঠন তৈরি, ফল বাগান সৃজন, নিরাপদ ফসল ও সবজি উৎপাদন, কৃষি যান্ত্রিকীকরণ, জৈবসার উৎপাদন, ইঁদুর নিধন, কৃষি বাতায়নের সহায়তায় মিরপুর উপজেলায় কৃষি উন্নয়নে রমেশ চন্দ্র ঘোষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তার উদ্যোগে মিরপুর উপজেলায় ৫৩৬টি কৃষক সংগঠন, ১টি কৃষি পাঠাগার স্থাপন করা হয়েছে। কৃষি বাতায়নে মিরপুর উপজেলার ৫০ হাজার ৮৩০ জন কৃষকের তথ্য দেন তিনি।
বোরো মৌসুমে মিরপুর উপজেলার ১৭ হাজার কৃষকের ধানের ব্লাস্ট রোগ সংশ্লিষ্ট সতর্কবার্তা পাঠিয়েছেন। তার কর্মতৎপরতায় মিরপুর উপজেলায় ২৪২টি ফল বাগান, ২০ হাজার তালবীজ রোপণ, ৩ হাজার ৮০০ হেক্টর শস্যের বহুমুখীকরণ, ৫৭২০ পিট জৈব সার উৎপাদন, ২ হাজার ৭০০ হেক্টর ধৈঞ্চা চাষ, ২১৫টি কৃষি যন্ত্রপাতি বিতরণ, আমন ধানের ক্ষেতে শতভাগ পার্চিং, সবজি ক্ষেতে সেক্স ফেরোমন ফাঁদ স্থাপন এবং ১ লাখ, ২১ হাজার, ৫৩৪টি ইঁদুর নিধন করা হয়েছে।
এছাড়া উঠান বৈঠক, মাঠ দিবস, কৃষক সমাবেশ, কৃষি বায়োস্কোপ ইত্যাদির মাধ্যমে কীটনাশকের ব্যবহার কমিয়ে এনেছেন। রমেশ চন্দ্র ঘোষ বলেন, আমি চাই কৃষকের উন্নয়ন, কৃষির উন্নয়ন।
আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির মাধ্যমে নিরাপদ ফসল উৎপাদন করে কৃষি এবং কৃষকের উন্নয়ন ঘটানোর চেষ্টা করি। যশোর অঞ্চলের টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্পে কৃষি ও কৃষকদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নসহ টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ ঘটবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।