চলমান শুদ্ধি অভিযান শুরু হওয়ার পর ক্যাসিনোকান্ডে সুবিধাভোগী হিসেবে নাম আসে যুবলীগের প্রতাপশালী চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী। এরপর থেকে কোনঠাসা হয়ে পড়েছেন তিনি। প্রায় এক মাস ধরে যাচ্ছেন না যুবলীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। যাচ্ছেন না নিজের প্রতিষ্ঠিত যুব গবেষণা কেন্দ্রেও।
এদিকে যুবলীগের ৭ম জাতীয় কংগ্রেসের দিনক্ষণ ঘোষণা করা হয়েছে। ২৩ নভেম্বর এই কংগ্রেস হবে। কংগ্রেস সামনে রেখে যুবলীগে চাঙা ভাব লক্ষ্য করা গেলেও সংগঠনটির চেয়ারম্যান আড়ালে দিন যাপন করছেন। নেতাকর্মীরা তার দেখা পাচ্ছেন না। ফোনেও তাকে না পেয়ে ক্ষুব্ধ যুবলীগ নেতাকর্মীরা।
সংগঠনের চেয়ারম্যানকে ছাড়াই হয়েছে যুবলীগের প্রেসিডিয়াম বৈঠক। ওই বৈঠকে তার অনুপস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। তার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার ভার দেয়া হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে।
কংগ্রেসের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা আনতে রোববার গণভবনে যাচ্ছেন যুবলীগের জ্যেষ্ঠ নেতারা। এই বৈঠকে থাকছেন না ওমর ফারুক চৌধুরী। তাকে গণভবনে যেতে বারণ করা হয়েছে বলে যুবলীগের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। এমতাবস্থায় যুবলীগের আসন্ন কংগ্রেসে কে সভাপতিত্ব করবেন এই প্রশ্ন এখন নেতাদের মুখে মুখে।
৭১ বছর বয়সী ওমর ফারুক চৌধুরীকে বাদ দিয়ে সংগঠনের কোনো জ্যেষ্ঠ নেতাকে যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করার গুঞ্জনও শোনা যাচ্চে। সেক্ষেত্রে ওই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানই ২৩ নভেম্বরের কংগ্রেসে সভাপতিত্ব করবেন।
জানা গেছে, রোববার আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতে ওমর ফারুক চৌধুরীকে বাদ দিয়ে প্রেসিডিয়ামের সিনিয়র কোনো সদস্যকে যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করার প্রস্তাব দেবেন সংগঠনটির নেতারা।
পাশাপাশি আসন্ন জাতীয় কংগ্রেসের প্রস্তুতি কমিটি গঠনসহ সার্বিক আয়োজন, যদি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান কাউকে না করা হয়, সেক্ষেত্রে কংগ্রেসে কে সভাপতিত্ব করবেন, ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ যুবলীগের সম্মেলনসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা চাইবেন তারা।
বৃহস্পতিবার বিকালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউর কার্যালয়ে যুবলীগ কেন্দ্রীয় নেতাদের এক অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে এসব বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। বৈঠক সূত্র জানায়, জাতীয় সম্মেলনকে (কংগ্রেস) সামনে রেখে রোববার বিকাল ৫টায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে (গণভবনে) যুবলীগ নেতাদের ডাকা হয়েছে। এ সাক্ষাতের বিষয়ে আলোচনা করতেই মূলত বৈঠকের আয়োজন করা হয়।
এতে উপস্থিত ছিলেন যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক মো. হারুনুর রশীদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী, মো. ফারুক হোসেন, মাহবুবুর রহমান হিরন, আবদুস সাত্তার মাসুদ, মো. আতাউর রহমান, অ্যাডভোকেট বেলাল হোসাইন, ইঞ্জিনিয়ার নিখিল গুহ, অধ্যাপক এবিএম আমজাদ হোসেনসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী বৃহস্পতিবার বিকালে বলেন, এবারের জাতীয় কংগ্রেসের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। তাই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আমরা সার্বিক বিষয়ে তার দিকনির্দেশনা চাইব। তিনি যেভাবে দিকনির্দেশনা দেবেন সেই নির্দেশনা মেনেই পরবর্তী সব কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে কোন নেতারা যাবেন এবং কোন কোন বিষয়ে দিকনির্দেশনা চাওয়া হবে, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে বৃহস্পতিবার বৈঠকে। হারুনুর রশীদের নেতৃত্বে প্রেসিডিয়াম সদস্য, যুগ্ম ও সাংগঠনিক সম্পাদকরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে যাবেন- এ মর্মে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। তবে যুগ্ম ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের বাইরে কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যদেরও নেয়া যায় কিনা- সে ব্যাপারেও সাধারণ সম্পাদকের কাছে প্রস্তাব এসেছে। তবে এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
সূত্র আরও জানায়, যুবলীগে যাদের বিরুদ্ধে অনৈতিক কর্মকাÐে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে, শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী তাদের ছাড়াই কংগ্রেসের আয়োজন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী ও সংগঠনের প্রভাবশালী প্রেসিডিয়াম সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন না। এমনকি জাতীয় কংগ্রেস আয়োজনের সব কার্যক্রম থেকেও তাদের দূরে রাখার বিষয়ে আলোচনা হয় গতকালের বৈঠকে।
রাজধানীতে মাদক-দুর্নীতি-টেন্ডারবাজির বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হওয়ার পরও ভোকাল ছিলেন যুবলীগ চেয়ারম্যান। সভা-সমাবেশে জোরালো বক্তব্য দিয়েছেন। শুরুতেই ‘শুদ্ধি অভিযান’ নিয়ে নেতিবাচক বক্তব্য দেয়ায় যুবলীগ চেয়ারম্যান সমালোচনার মুখে পড়েন। অবশ্য বাস্তবতা বুঝতে পেরে দ্রæত নিজেই অবস্থান বদল করেন। অভিযানকে স্বাগত জানিয়ে ওমর ফারুক বলেন, ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় অবৈধভাবে ক্যাসিনোর পেছনে যুবলীগের অনেকে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। সংগঠনের সভাপতি হিসেবে এটি তার ব্যর্থতা বলে তিনি মনে করেন।
১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ওরফে ক্যাসিনো খালেদ গ্রেফতার হওয়ার পর ধাক্কা খান ওমর ফারুক। এর পর আরেক যুবলীগ নেতা জিকে শামীম গ্রেফতার হন। তাদের জবানবন্দি থেকে বেরিয়ে আসে থলের বিড়াল।
পরে দিন পনেরো রাজনৈতিক অঙ্গনে সবচেয়ে বেশি আলোচিত হন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল হোসেন সম্রাট ও যুবলীগের দফতর সম্পাদক কাজী আনিসুর রহমান। এরা দুজনই ওমর ফারুকের আশীর্বাদপুষ্ট। তাকে রাজনৈতিক গুরু মানে এই দুজনই। ওমর ফারুক চূড়ান্ত বেকায়দায় পড়েন ক্যাসিনো সম্রাট গ্রেফতার হওয়ার পর।
যুবলীগের প্রভাবশালী নেতারা ওমর ফারুকের আশকারায় বেপরোয়া হয়ে উঠেন বলে অভিযোগ ওঠে। গ্রেফতার যুবলীগ নেতারা ক্যাসিনোর অবৈধ আয় থেকে ওমর ফারুককে নিয়মিত মাসোয়ারা দিতেন বলে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এসবের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংক হিসাব তলব করা হয় ওমর ফারুকের। বিদেশ যেতে বিধি নিষেধ আরোপ করা হয়। এর পর থেকে অনেকটাই গৃহবন্দি যুবলীগ চেয়ারম্যান। বাসা থেকে বের হচ্ছেন না। সাড়া দিচ্ছেন না ফোনে। রয়েছেন গ্রেফতার আতঙ্কেও। এই আতঙ্ক নিয়েই সময় কাটছে তার।
সর্বশেষ গত ২০ সেপ্টেম্বর উত্তরায় যুবলীগ ঢাকা মহানগর উত্তরের একটি ওয়ার্ড কমিটির সম্মেলনে দেখা গিয়েছিল ওমর ফারুক চৌধুরীকে। এর পর থেকে কেটে গেছে ২৪ দিন। এই সময়ে তার দেখা পাননি নেতাকর্মীরা। শুক্রবার যুবলীগের গুরুত্বপূর্ণ প্রেসিডিয়াম সভায়ও হাজির হননি ওমর ফারুক চৌধুরী। কাউন্সিলের আগে অনুষ্ঠিত রুদ্ধদ্বার ওই বৈঠকে তার অনুপস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। যুবলীগের ইমেজ ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য তাকে দায়ী করা হয়। তার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর ভার দেয়া হয়। শোনা যাচ্ছে, যুবলীগের আসন্ন কংগ্রেসে তাকে সভাপতিত্ব করতে দেয়া হবে না।
গত বুধবার যুবলীগের সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। ২৩ নভেম্বর যুবলীগের ৭ম কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হবে। কংগ্রেসের তারিখ ঘোষণার পর চাঙ্গাভাব দেখা দিয়েছে যুবলীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে। পদপ্রত্যাশীরা সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। নেতাকর্মীদের অনেকে ধারণা করেছিলেন, ওমর ফারুক চৌধুরী সংগঠনের কার্যালয়ে আসবেন। তবে গত কয়েক দিন ধরে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অসংখ্য নেতাকর্মী অপেক্ষা করেও তার দেখা পাননি। ফোনেও তাকে পাচ্ছেন না তারা।
ব্যাংক হিসাব তলব ও অনুমতি ছাড়া বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা জারির পর ওমর ফারুক চৌধুরী প্রকাশ্যে আসছেন না। ধানমÐির ৫ নম্বর সড়কে তার প্রতিষ্ঠিত যুব গবেষণাকেন্দ্রের কার্যালয়ে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। ধানমÐির ৮/এ সড়কে তার বাসায় অবস্থান করছেন।
ওমর ফারুক চৌধুরী যে বাসায় থাকেন, ‘ইস্টার্ন হেরিটেজ’ নামের সেই বাসার দারোয়ান মেহেদি বলেন, গণমাধ্যমকর্মী বা দলীয় নেতাকর্মী কারোরই ভেতরে যাওয়ার অনুমতি নেই। ওমর ফারুক চৌধুরী বাসায় আছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি তো আমি বলতে পারব না।’
এদিকে ওই বাসার আশপাশের বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগে সেখানে প্রায়ই নেতাকর্মীদের লাইন লেগে থাকত। অভিযান শুরুর পর প্রথম দিকে অনেক নেতাকর্মী যুবলীগ চেয়ারম্যানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে সেখানে গেছেন। কিন্তু কয়েক দিন হলো সেখানে কারও দেখা মিলছে না।
তামাকের বিকল্প ‘টেন্ডু পাতা’ বিক্রির মাধ্যমে তার পেশাগত জীবন শুরু হয়। বিড়ি শ্রমিক লীগ, জাতীয় পার্টির অঙ্গ সংগঠন যুব সংহতির রাজনীতি করে আসা ওমর ফারুক ২০০৯ সালে যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হন। ২০১২ সালে যুবলীগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেয়ার পর সংগঠনের কার্যনির্বাহী কমিটি নয়, সব বিষয়ে তার সিদ্ধান্তই শেষ কথা হয়ে দাঁড়ায়। তার দাপটে সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতারাও টু শব্দটি পর্যন্ত করার সাহস পাননি।
অভিযোগ রয়েছে, যুবলীগের চেয়ারম্যান হওয়ার পর কেন্দ্রীয় কমিটিতে নিজের অনুগতদের বসিয়েছেন যুবলীগ চেয়ারম্যান। ঢাকা মহানগর ও দেশব্যাপী জেলা কমিটিগুলোও হয়েছেন তার পকেটের লোক দিয়ে।
নিজেকে তরুণ ভাবাপন্ন ৭১ বছর বয়সী ওমর ফারুক চৌধুরী যুবলীগের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই একক ক্ষমতাবান হয়ে ওঠেন। শুরুতে সাবেক নেতাদের পরামর্শ ছাড়াই একটি ঢাউস কমিটি গঠন করেন তিনি। অভিযোগ আছে, মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে তিনি অনেক নেতাকে কমিটিতে স্থান দিয়েছেন। পদভেদে ১০ লাখ থেকে শুরু করে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত নিয়েছেন। ফ্রিডম পার্টি ও যুবদলের অনেকে টাকার বিনিময়ে ঠাঁই পেয়েছেন যুবলীগে বলেও অনেকে অভিযোগ করেন।
যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির একাধিক নেতা জানান, বিগত সাত বছরে তারা চেয়ারম্যানের ভয়ে তটস্থ ছিলেন। মুখ বুজে সব অপকর্ম সহ্য করেছেন। সংগঠনে সব সিদ্ধান্ত তিনি এককভাবে নিয়েছেন। আমাদের শুধু সম্মতি দিতে হয়েছে। তার সিদ্ধান্তের বিপক্ষে মত দিলেই তাৎক্ষণিক বহিষ্কার, অফিসে আসতে বারণ পর্যন্ত করা হয়েছে। তারা বলেন, তার সব অপকর্ম জায়েজ করার মেশিন ছিল যুব জাগরণ প্রকাশনা। এখান থেকে নানা বই ও প্রকাশনা বের করে সবার কাছে ভালো সাজার চেষ্টা করতেন। পুরো সাত বছরে যুবলীগ বলতে আমরা শুধু তাকেই বুঝতাম।
প্রসঙ্গত ১৪ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির এক সভায় চাঁদা দাবির অভিযোগে ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও গোলাম রাব্বানীকে অপসারণের নির্দেশ দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশাপাশি যুবলীগ নেতাদের বিষয়েও চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। বলেন, যুবলীগের এক নেতা অস্ত্র উঁচিয়ে চলে। আরেকজন প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি করে বেড়ায়।
এর পর গণমাধ্যমে যুবলীগ নেতাদের সংশ্লিষ্টতায় ঢাকার ৬০টি জায়গায় ক্যাসিনো পরিচালনার খবর প্রকাশ হয়। ১৮ নভেম্বর ফকিরাপুলের ইয়াংমেনস, ওয়ান্ডারার্স এবং গুলিস্তানে মুক্তিযোদ্ধা ক্রীড়া সংসদে অভিযান চালিয়ে ক্যাসিনোর সরঞ্জাম, বিপুল পরিমাণ মদ ও ৪০ লাখের বেশি টাকা উদ্ধার করে র্যাব। ক্যাসিনো পরিচালনার অভিযোগে ওই দিনই যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে গ্রেফতার করা হয়, যিনি ইয়াংমেনস ক্লাবের সভাপতি ছিলেন।
পাশের ওয়ান্ডারার্স ক্লাব থেকেও জুয়ার সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। এ ক্লাব পরিচালনার নেতৃত্বে ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাওসার। এর পর ধানমÐির কলাবাগান ক্রীড়াচক্রে অভিযান চালিয়েও ক্যাসিনো চালানোর প্রমাণ পায় র্যাব। অস্ত্র-গুলি ও ইয়াবাসহ গ্রেফতার করা হয় ক্লাবের সভাপতি কৃষক লীগের সহসভাপতি শফিকুল আলম ফিরোজকে।
এর মধ্যে যুবলীগ নেতা পরিচয় দিয়ে ঠিকাদারি করা গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জিকে শামীমকে গ্রেফতার করা হয়। পরে গ্রেফতার করা হয় মোহামেডান ক্লাবের ডিরেক্টর ইনচার্জ ও বিসিবির পরিচালক লোকমান ভূঁইয়াকে।
দুবাই থেকে গ্রেফতার করা হয় শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানকে। পরে গ্রেফতার করা হয়েছে ক্যাসিনো সম্রাট যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটকে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চলমান অভিযানকে ‘শুদ্ধি অভিযান’ নাম দিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সন্ত্রাস, চাঁদবাজি, টেন্ডারবাজিসহ বিভিন্ন অনিয়মে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ক্যাসিনো ব্যবসায়ীদের ভাসানচরে পাঠানো হবে।
ক্যাসিনো ব্যবসায় যুবলীগ নেতাদের মদদ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর বিরুদ্ধে। এরই মধ্যে তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। তলব করা হয়েছে ব্যাংক হিসাব।
নিজস্ব প্রতিনিধি