ব্রিফকেস বহনের চল এখন আর নেই বললেই চলে। আগে ব্যবসায়ীরা ব্রিফকেস বহন করতেন। এটা একটা স্টাইলও ছিল। এখন বাজেট অধিবেশন ছাড়া আরও কোথাও ব্রিফকেস বহনের দৃশ্য খুব একটা চোখে পড়ে না।
বাজেট অধিবেশনে অর্থমন্ত্রীর ব্রিফকেস নিয়ে ঢোকার চল যুগ যুগের। এটি শুধু বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বের প্রায় সব দেশেই এই রেওয়াজ যুগের পর যুগ ধরে চলে আসছে।
এই ব্রিফকেসে কি না থাকে, এ নিয়ে কৌতুহলের শেষ নেই। অর্থমন্ত্রীর হাতের ব্রিফকেসে কোটি কোটি টাকা থাকে না। থাকে বাজেট বক্তৃতার ড্রাফট, যেখানে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ের পরিকল্পনা থাকে। সংসদে ঢুকে সেই টাকার অঙ্কেরই বয়ান দেন অর্থমন্ত্রী।
অর্থমন্ত্রীদের এই ব্রিফকেস বহনের রীতি কবে থেকে শুরু হয়েছিল?
এ বিষয়ে লেখা আছে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা আকবর আলি খানের সর্বশেষ বই ‘বাংলাদেশে বাজেট: অর্থনীতি ও রাজনীতি’–তে। এতে বলা হয়েছে, শিল্পবিপ্লবের পর ইংল্যান্ডের অর্থনীতি অনেক বড় হয়ে যায়। বাজেটবিষয়ক প্রস্তাবগুলো শুধু একটা মানিব্যাগে সংকুলান করা সম্ভব হচ্ছিল না। মানিব্যাগের জায়গায় তাই আসে ব্রিফকেস।
বইটিতে বাজেট প্রস্তাবের দিন ব্রিফকেস ব্যবহারের আরেকটি কারণ উল্লেখ করা হয়। সেটি হচ্ছে, বাজেটে কোন কর বাড়বে বা কোন কর কমবে, তার গোপনীয়তা বজায় রাখা অপরিহার্য। ব্রিফকেসের ভেতরে থাকা বাজেটের কোনো তথ্য জেনে ব্যবসায়ীরা রাতারাতি তার ব্যবহার করতে পারেন। তাই প্রস্তাবগুলো গোপন রাখার স্বার্থে ব্রিফকেসে করে আনা হয়।
জানা যায়, বাজেট ব্রিফকেসের এই রীতি শুরু হয় ১৮ দশক থেকে। প্রথম শুরু হয় যুক্তরাজ্যে থেকে। বাজেটপ্রধানকে এ ব্রিফকেস খুলে বাজেট পেশ করতে বলা হতো।
১৮৬০ সালে ব্রিটেনের বাজেটপ্রধান উইলিয়াম ই গ্ল্যাডস্টোন ‘লাল একটি স্যুটকেসে’ করে বাজেটসংক্রান্ত নথি নিয়ে আসেন। সেই স্যুটকেসের ওপর সোনা দিয়ে রানির মুখের আদলের ছাপ দেওয়া ছিল। পরবর্তীতে একই ব্যাগ বহু সরকারের আমলেই ব্যবহার করা হয়।
প্রথা অনুযায়ী ‘লাল ব্রিফকেস’ হাতে বাজেট পেশ করতে সংসদে ঢোকেন অর্থমন্ত্রী। তবে এই রহস্যময় ব্রিফকেসের রং সব সময় লাল ছিল না, অনেক সময়ই তা বদলেছে। তবে রং যা–ই হোক না কেন, এই ব্রিফকেসকে বাজেটের প্রতীক হিসেবে ধরা হয়।
আসলে বাজেট শব্দটির উৎপত্তিই যে এই ব্রিফকেসের দিকে নির্দেশ করে। বাজেট শব্দটি এসেছে পুরোনো ফরাসি শব্দ ব্যুজেট (বোগেট) থেকে। ব্যুজেটের অর্থ হলো থলে বা ব্যাগ। অতীতে থলেতে ভরে দেশের আয়-ব্যয়ের হিসাব আইনসভা বা সংসদে আনা হতো বলে একে ‘বাজেট’ নামে অভিহিত করা হয়।