বছর ঘুরে আবারও শুরু হয়েছে মাহে রমজান। পবিত্র রমজানের প্রথম দিনেই জমে উঠেছে কুষ্টিয়ার ইফতার বাজার। বেলা যত গড়িয়েছে ততই জমজমাট হয়ে উঠেছে ইফতার বাজার। তাই পাল্টে গেছে চিরচেনা এ কুষ্টিয়া শহরের চিত্রও।
শুক্রবার শহরের বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রচলিত ইফতারির পাশাপাশি নানান স্বাদের বাহারি আয়োজন সাজিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা। বাহারি এসব ইফতারির স্বাদ নিতে দুপুরেই দূর-দূরান্ত থেকে ভোজনবিলাসীরা ছুটে এসেছেন। বাহারী ধরনের ইফতারি কিনতে দেখা গেছে দীর্ঘ জটলা।
গতকাল বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) রাতে প্রথম তারাবি ও সেহেরির পর শুক্রবার বিকেলের মূল কেন্দ্র বিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে ইফতার। আর দিনটি সাপ্তাহিক ছুটি হওয়ায় দুপুরে গড়িয়ে বিকেল হতেই কাঠফাটা রোদ উপেক্ষা করে মানুষ এখন ভিড় করছেন ইফতার সামগ্রী বিক্রির দোকানগুলোতে। রমজানের প্রথমদিনের তাই ধুম পড়ে গেছে ইফতার কেনাকাটার।
শহরের প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে পাড়া-মহল্লার গলি পথেও ঐতিহ্যবাহী ইফতার সামগ্রী নিয়ে বসে গেছেন মৌসুমি দোকানিরা। শহরের এনএস রোড, বড়বাজার, থানা মোড়, ছয় রাস্তা মোড়, চৌড়হাস মোড়, জেলখানা মোড়, মজমপুর গেট, মঙ্গলবাড়ীয়াসহ বিভিন্ন স্থানে পসরা সাজিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে ইফতার। ক্রেতাদের চাহিদার কথা মাথায় রেখেই দোকানগুলোতে রকমারি ইফতার তৈরি হয়েছে এ বছরও।
ঘিয়ে ভাজা ইরানী জিলাপি, রেশমি জিলাপি, স্পেশাল ফিরনি, ক্ষিরসা, ফালুদা, স্পেশাল পরোটা, চিকেন মসলা, রেশমি কাবাব, বটি কাবাব, স্বামী কাবাব, কাচ্চি বিরিয়ানি, চিকেন ফ্রাই, মাঠা-ঘোল ও নানা রকমের জুসসহ জনপ্রিয় ইফতার সামগ্রীগুলো এবারও শুরুতেই মন কাড়ছে কুষ্টিয়ার মানুষের। তবে ফলমূলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে বলে অভিযোগ অনেকের। প্রথমদিন ইফতারে স্বাদের ভিন্নতা ও বৈচিত্র্য আনতে সাধ ও সাধ্যমত সবাই প্রাণপণ চেষ্টা করছেন।
এদিকে শহরের বিভিন্ন এলাকার হোটেল-রেস্তোরাঁর সমানে বাহারি ইফতারের পসরা সাজানো হয়েছে। সামনে পণ্যের তালিকা সম্বলিত ব্যানারও টানিয়ে দেওয়া হয়েছে। রোজাদারদের আকর্ষণ করার জন্য হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোর সামনে ডেকোরেশন করা হয়েছে। ইফতার সামগ্রী বিক্রির জন্য। এছাড়া বিভিন্ন হোটেল-রেস্তোরাঁ রকমারি ইফতার দিয়ে সাজিয়েছেন ইফতারের প্যাকেজ। তবে মৌবন নির্দিষ্ট পরিমানে ইফতার সামগ্রি কিনলে রোজাদারদের জন্য দিচ্ছেন বিভিন্ন অফার।
শহরের ব্যস্ততম সড়ক এনএস রোডের মৌবনে গিয়ে দেখা যায়, ইফতার সামগ্রী বিক্রির জন্য মৌবন চত্বরে সাজসজ্জা এবং রোজাদারদের আকর্ষণ করার জন্য বিভিন্ন ব্যানার ফেস্টুনে আবৃত।
শহরের পিটিআই রোড থেকে এসেছেন মৌবনে ইফতারী কিনতে এসেছেন নাজমুল পলাশ। পরিবারের জন্য প্রথম রোজার ইফতারে বাহারি আইটেমের সংযোজন করতেই তিনি এসেছেন এখানে। তিনি বলেন, প্রতি বছর প্রথম রোজায় এখানে আসি। এখানে বাহারী ধরনের ইফতার সামগ্রি পাওয়া যায়। খাসির লেগপিসের জন্য কুষ্টিয়ার মৌবনই সেরা। যা অন্য কোথাও পাওয়া যায় না। মৌবনের স্পেশাল শরবত ইরানী জিলাপিসহ বেশ কিছু আইটেম কিনেছি। এই ইফতারির স্বাদ আর কোথাও পাওয়া যাবে না। সুযোগ থাকলে প্রতিদিন আসতাম।
ইফতার কিনতে আসা থানাপাড়া এলাকার ক্রেতা ইয়াসিন আলী বলেন, আজকে রহমতের প্রথমদিন। আর এদিনে পরিবার-পরিজন সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে ইফতার করবেন। যার জন্য রেশমি জিলাপি, স্পেশাল ফিরনি, গাজর হালুয়াসহ মৌবনের স্পেশাল পরোটা ও কাবাব কিনেছেন।
শহরতলীর মোল্লা তেঘরিয়া এলাকার কিরন মাহমুদ বাজারে ইফতার সামগ্রির দাম গতবারের চেয়ে একটু বেশি হয়েছে। ইফতারীতে ভাজাপোড়ার সাথে ফলমূল না হলে চলে না। অবশ্য সেই ফলমূলের দাম বেড়েছে দ্বিগুণ।
শহরের মৌবনের ম্যানেজার আশিকুজ্জামান রনি জানান, তারা সব রকমের ইফতারের আইটেমই তুলে এনেছেন। যাতে সবারই দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারা যায়। যেমন তাদের আছে স্পেশাল ফিরনি, শিক কাবাব, বটি কাবাব, নাড়ারা কাবাব, স্বামী কাবাব, মাটন লেগ রোস্ট, ইরানী জিলাপি, রেশমী জিলাপি স্পেশাল শাহী পরোটা। এছাড়া ছোলা, পিয়াজু, বেগুনিসহ অন্যান্য নিয়মিত ইফতার আইটেম তো রয়েছেই।
তিনি বলেন, আমাদের কাছে শতাধিকেরও বেশি আইটেম ইফতারি আছে। নির্দিষ্ট পরিমানে ইফতার সামগ্রি কিনলে রোজাদারদের জন্য বিভিন্ন উপহার সামগ্রী তুলে দিচ্ছি। পাশাপাশি আমরা কর্পোরোট হাউসগুলোতেও ইফতারীর অর্ডার নিয়ে থাকি।
শহরের মজমপুর গেট এলাকায় ইফতার নিয়ে বসেছেন মতিয়ার রহমান। তিনি বলেন, গত দুই বছর তো করোনার জন্য ব্যবসাই করতে পারিনি। এবার তেমন বাঁধা নাই। তবে কিছু নির্দেশনা দিয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে। আজ মোটামুটি ব্যবসা ভালো হচ্ছে। এই যে দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসছে ইফতারি কিনতে। এখন পর্যন্ত বিক্রি করে কুলাতে পারছি না। সন্ধ্যার আগ মহূর্তে এই ভিড় আরও বাড়বে বলে জানান এই ব্যবসায়ী।
শিশির বেকারীর পরিচালক তানভীর শিশির বলেন, পেঁয়াজু, আলুর চপ, বেগুনি ও জিলাপিসহ বিভিন্ন ইফতার পণ্যের দাম এবার গত বছরের চেয়ে বেশি। প্রায় প্রতিটি পণ্যের মূল্য রমজান শুরু হওয়ার আগে যা ছিল রমজানের প্রথম দিনেই সেই সব পণ্যের মূল্য বেড়েছে। তাই অনেকটা বাধ্য হয়ে বেশি দামেই স্বাদ ও সাধ্যের সমন্বয় ঘটানোর চেষ্টা করছেন ক্রেতারা।