করোনা দুর্যোগে প্রায় চারমাস ঘরবন্দি শিক্ষার্থীরা। ক্লাস-পরীক্ষা ও পড়াশোনার বাইরে কাটছে সময়।
সম্প্রতি নানা প্রতিবন্ধকতার মাঝেও দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শুরু হয়েছে অনলাইন ক্লাস।
এরই ধারাবাহিকতায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ও (রাবি) নিয়েছে অনলাইন ক্লাসের উদ্যোগ। করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের মধ্যে সেশনজটের আশঙ্কায় একাডেমিক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ও শিক্ষার্থীদের পড়ালখোর মধ্যে রাখার উদ্দেশ্যে ৯ জুলাই থেকে অনলাইনে ক্লাস শুরু করেছে রাবি প্রশাসন।
কিন্তু প্রয়োজনীয় ডিভাইস না থাকা, ওয়াইফাই কিংবা ইন্টারনেট ডাটা কেনার সামর্থ্যরে অভাব, ক্লাস চলাকালীন বাসায় বিদ্যুৎ না থাকা, কিংবা ডিভাইস-ইন্টারনেট-বিদ্যুৎ সব থাকা সত্ত্বেও কাঙ্খিত নেটওয়ার্ক না পাওয়ার কারণে অনলাইন ক্লাসে অংশ নিতে পারছেন না রাবির অধিকাংশ শিক্ষার্থী।
এছাড়া পর্যাপ্ত প্রস্তুতি ছাড়াই অনলাইন ক্লাসের উদ্যোগ নেয়ায় বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন তারা।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থীর বাড়ি গ্রামে হওয়ায় দুর্বল ইন্টারনেটের কারণে অনলাইন ক্লাসে যুক্ত হওয়া তাদের জন্য কষ্টকর ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অনেকে ডিজিটাল ফোনই ব্যবহার করেন না। এছাড়া মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের সদস্যদের ইন্টারনেটের ব্যয়ভার বহন করাও অতিরিক্ত বোঝা বলছেন শিক্ষার্থীরা।
অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র অধ্যাপকরা বলছেন, অনলাইন ক্লাস শিক্ষা বৈষম্যের সৃষ্টি করবে। এখন হয়তো ক্লাসে ৮০ শতাংশ উপস্থিত থাকছেন। তাই বলে নির্দিষ্ট সংখ্যক শিক্ষার্থী মডেল হিসেবে ধরে আমরা শিক্ষাব্যবস্থার কাঠামো দাঁড় করাতে পারবো না। কাঠামো দাঁড় করাতে হবে শতভাগ শিক্ষার্থীর কথা ভেবে।
অনলাইন ক্লাসে শিক্ষার্থীরা অংশ নিতে না পারায় অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার’ নামক ফেসবুক গ্রুপে বিনামূল্যে ইন্টারনেট প্রদানের দাবি জানিয়ে মো. আল-আমিন নামের এক শিক্ষার্থী একটি পোস্ট দেন।
তিনি সেখানে উল্লেখ করেন, ক্লাস করার জন্য ২১ টাকায় ১ জিবির ইন্টারনেট প্যাক কিনেন। একটি ক্লাস করতে তার প্রায় ৪০০ মেগাবাইট ইন্টারনেট খরচ হয়। প্রতিদিন ৫টি ক্লাস হলে ২ জিবি ইন্টারনেটের প্রয়োজন তার এবং শুধুমাত্র স্কিটো সিমে এর খরচ পড়ে ৪২ টাকা।
অন্য সাধারণ সিমে এর খরচ আরও বেশি। ইউজিসি অথবা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি এই খরচ বহন করে তাহলে অনেকের পক্ষে অনলাইনে ক্লাস করা সম্ভব। নতুবা কিছু শিক্ষার্থী এগিয়ে যাবে। আর কিছু শিক্ষার্থী পিছিয়ে পড়বে। হবেন বৈষম্যের শিকার।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী মানিক হোসেন। তিনি বলেন, অনলাইনে আমাদের ক্লাস শুরু হয়েছে। কিন্তু ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও অনলাইনে ক্লাস করার মতো ডিভাইস না থাকায় ক্লাসে উপস্থিত হতে পারছি না। এই মুহূর্তে নতুন স্মার্টফোন কিনা ও ইন্টারনেট খরচ বহন করা আমার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না।
হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলেন, গ্রামে এমনিতেই নেটওয়ার্ক থাকে না। এর মধ্যে আবার অনলাইন ক্লাস। ক্লাস করতে হলে বাড়ি থেকে বের হয়ে রাস্তার ধারে যেতে হয়। সেখানে কোনোরকম নেটওয়ার্ক পাওয়া গেলেও বাফারিং করে। কিছুক্ষণ পর পর অনলাইন ক্লাস থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছি। এভাবে কি আর ক্লাস করা সম্ভব!
বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আমিরুল ইসলাম বলেন, করোনা মহামারীতে শিক্ষার্থীরা সেশনজটে পড়তে যাচ্ছে। তাই অনলাইন ক্লাসের খুব দরকার।
তবে অনেকের ইন্টারনেট খরচ ও স্মার্টফোন কেনার সক্ষমতা না থাকায় ক্লাসে উপস্থিত হতে পারছেন না। সেজন্য ক্লাসে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি একেবারেই কম। এছাড়া কোনো রকম প্রস্তুতি ছাড়াই চলছে অনলাইন ক্লাস। তবে শিক্ষার্থীদেরও সহযোগিতা প্রয়োজন। অনেকের ক্লাস করার সুযোগ থাকলেও ক্লাস করতে আগ্রহী নয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও ছাত্র উপদেষ্টা (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে অনলাইনে শুধুমাত্র ক্লাস নিতে বলা হয়েছে।
কোনো পরীক্ষা হবে না। এতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী উভয়েই উপকৃত হবেন। করোনাকাল ঠিক কতদিন স্থায়ী হবে, তা কেউ বলতে পারছেন না।
সেজন্য শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় সম্পৃক্ত রাখতেই এই অনলাইন ক্লাস। তবে অনেক শিক্ষার্থী ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে পারছে না। প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের সমস্যাগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের টেকনিক্যাল কমিটির মাধ্যমে প্রশাসনের কাছে উপস্থাপন করা হবে। পরে ধীরে ধীরে আমরা এই সমস্যাগুলো সমাধানের চেষ্টা করবো। সূত্র-যুগান্তর