চারদিকে তুমুল আলোচনার মুখে ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বললেন, ‘আমি রাষ্ট্রের কাছে আবেদন করেছি। অনির্বাচিত সরকারের কাছে নয়। আমি জানি, তারা আমাকে এক কাঠাও দেবে না। তবু আনুষ্ঠানিকতার জন্য আবেদন করেছি। কিন্তু আমি এটা জানতাম না, কোনো মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি এভাবে বের হয়।’
একাদশ জাতীয় সংসদে সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেওয়ার দুই মাসের মধ্যে সরকারের কাছে ১০ কাঠার একটি প্লট চেয়েছেন বিএনপির ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা। গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের কাছে তিনি এ আবেদন করেন। ব্যারিস্টার রুমিনের এ আবেদনের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে। এ নিয়ে গত রোববার গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন সরকারের তীব্র সমালোচক ও অবৈধ আখ্যা দেওয়া রুমিন ফারহানা। বিএনপি নেতা-কর্মীদের বড় অংশ এটাকে ইতিবাচকভাবে দেখলেও ক্ষুদ্র একটি অংশ এ নিয়ে সমালোচনাও করছে। সরকারপন্থি কর্মী সমর্থকরা ফেসবুকে এ নিয়ে সমালোচনার পাশাপাশি মুখরোচক নানা কিছু লিখছে। ২০ দলীয় জোটের শরিক দলের নেতাদের কেউ কেউ এ নিয়ে ক্ষুব্ধ মনোভাব ব্যক্ত করেছেন।
ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক। বিএনপির মনোনয়নে এবার প্রথমবারের মতো এমপি হয়ে গত ৯ জুন শপথ নেন। আর প্লটের জন্য আবেদন করেন ৩ আগস্ট। আবেদনে রুমিন ফারহানা বলেন, ঢাকার পূর্বাচলে তার ১০ কাঠার একটি প্লট প্রয়োজন। ঢাকায় তার কোনো জমি বা ফ্ল্যাট নেই। ওকালতির বাইরে তার কোনো পেশা বা ব্যবসা নেই। ১০ কাঠার প্লট বরাদ্দ দেওয়া হলে তিনি ‘চিরকৃতজ্ঞ’ থাকবেন বলেও আবেদনে উল্লেখ করেন। আবেদন পাওয়ার কথা স্বীকার করে এ প্রসঙ্গে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘প্লট চেয়ে সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানার একটি আবেদন তিনি পেয়েছেন। আইন অনুযায়ী এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘একজন সংসদ সদস্য হিসেবে ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা রাষ্ট্রের কাছে প্লট চাইতেই পারেন। রাষ্ট্র তাকে দেবে কি না তা রাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত। এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার কিছু নেই। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লেখার ব্যক্তি স্বাধীনতা সবারই রয়েছে। এ নিয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই।’ বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ বলেন, ‘একজন সংসদ সদস্য হিসেবে প্লট চাইতেই পারে রুমিন ফারহানা। তবে আমি হলে চাইতাম না। তাছাড়া যেহেতু আমরা সরকারবিরোধী রাজনীতি করি, তাতে রাষ্ট্রের কাছে চাওয়া চিঠির ভাষা নিয়ে আরেকটু ভাবা উচিত ছিল।’
ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানার বক্তব্য : ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা গত রোববার গণমাধ্যমকে বলেন, একজন এমপি রাষ্ট্রীয়ভাবে পাঁচ বছর থাকার জন্য ন্যাম ভবনে একটি ফ্ল্যাট, একটা ট্যাক্স ফ্রি গাড়ি এবং রাজউকের একটা প্লট পান। আমিও জাতীয় সংসদের একজন এমপি। সে হিসেবে রাষ্ট্রের কাছে উল্লিখিত সুবিধা পাওয়ার অধিকার রাখি। সে অনুযায়ী আমি রাষ্ট্রের কাছে প্লটের জন্য আবেদন করেছি। তবে বর্তমান অনির্বাচিত সরকারের কাছে আবেদন করিনি।
তিনি বলেন, শুধু আমি নই, এই সংসদের আরও এমপিরা আবেদন করেছেন। কিন্তু তাদের নাম তো প্রকাশ করা হয়নি। এটা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ছাড়া প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি। আমার ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরও প্রকাশ করা হয়েছে। আমার নাম প্রকাশের একমাত্র কারণ হচ্ছে, আমি জাতীয় সংসদে সরকারের নেতিবাচক কর্মকান্ডে র বিরুদ্ধে জোরালোভাবে বক্তব্য রাখি এবং আমি বিরোধী দলের এমপি।
রুমিন বলেন, আমার নাম যেহেতু প্রকাশ করা হয়েছে তাহলে এমপিদের নামও প্রকাশ করা হোক। নিয়ম অনুযায়ী রাষ্ট্রের কাছে আমি প্লট চেয়েছি তাতে এত হৈচৈ কেন? আমি এখনো বলব, এই সরকার অনির্বাচিত সরকার।
রুমিন আরও বলেন, সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এবার এমপি না হয়েও অবৈধভাবে ট্যাক্স ফ্রি গাড়ি এনেছেন। আসলে মুহিতকে অবৈধ উপায়ে গাড়ি আনার বিষয়টি ধামাচাপা দিতে আমার বৈধ আবেদন সামনে আনা হয়েছে। অথচ বেশ কিছু দিন আগে আমার ফেসবুক আইডি হ্যাক হলেও নিউমার্কেট থানা পুলিশ আমার সাধারণ ডায়েরি এখন পর্যন্ত নিচ্ছে না।