রেশন কার্ডের তালিকায় স্বজনপ্রীতি করেছেন মুজিবনগর উপজেলার বাগোয়ান ইউনিয়নের সোনাপুর ৩ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সোহরাব হোসেন।
যেখানে তার পরিবারে তিন জন ভাইকে রেশন কার্ডের তালিকায় থাকতে দেখা গেছে।
এছাড়া দলীয় বিবেচনায় আরও তিনজন ব্যক্তির নাম দেখা গিয়েছে। যারা সকলেই অবস্থাশালী এবং টাকা পয়সার দিক দিয়ে স্বচ্ছল। কেউ কেউ আবার দীর্ঘদিন যাবত বিদেশ খেটে এসেছে।
কিন্তু দিন আনা দিন খাওয়া গরীবদের কপালে রেশন কার্ডের তালিকায় নাম জোটেনি গ্রামের অনেক অসহায় পরিবারের।
জানা গেছে গত কয়েকদিন আগে রেশন কার্ডের তালিকা তৈরি করা হয় স্থানীয় ইউপি সদস্যদের মাধ্যমে।
আর সেই তালিকায় ইউপি সদস্যর স্বজন ও কিছু দলীয় অবস্থাশালী ব্যক্তিদের নাম দেখা গেছে।
নামের তালিকায় মেম্বারের স্বজনদের ভিতর একজন ভাইয়ের নাম, একজন ভাতিজার নাম ও একজন ভাবির নাম দেখা গেছে। তারা হলেন, মেম্বরের ভাই শাহাবদ্দীন, ভাতিজা কানন হোসেন ও ভাবি রোজিফা খাতুন।
তবে শাহাবদ্দীন, কাননের পিতাঃ জাহানুর ইসলাম ও রোজিফা খাতুনের স্বামী: শওকত আলি, যারা তিন জনই মেম্বরের আপন ভাই।
এছাড়াও রোজিফা খাতুনের স্বামী শওকত এর নামে বয়স্ক ভাতার কার্ড থাকায় তার নামে রেশন কার্ড না দিয়ে কৌশলে তার স্ত্রীর নাম তালিকায় দেওয়া হয়েছে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে। তারা সকলেই আর্থিক দিক দিয়ে স্বচ্ছল ও ৮/১০ বিঘা জমির মালিক।
এদিকে দলীয় ব্যক্তিদের ভিতর অবস্থাশালী মৃতঃ বনমালী খাতুনের ছেলে রবিউল ইসলাম, আনোয়ার হোসেনের ছেলে মতিয়ার রহমান ও বজলুর রহমানসহ কয়েকজনের নাম রয়েছে। যারা সকলেই স্বচ্ছল ব্যক্তি।
খোজ নিয়ে দেখা গেছে, গরীব অসহায় ব্যক্তিদের ভিতর সোনাপুর গ্রামের অনেকের নাম রেশন কার্ডের তালিকায় যুক্ত হয়নি।
গরীবদের ভিতর কয়েকজন হলেন, সোনাপুর বাজারপাড়ার মৃত পরেসের ছেলে আজিল শেখ। আজিল একজন ভিক্ষুক। তারপরেও তার নাম রেশন কার্ডের তালিকায় দেওয়া হয়নি।
অন্যজন হলেন ভাদুর ছেলে জাকের। তিনি ভেড়া চরায়ে সংসার চালায়। ভাদুর নাম রেশন কার্ডের তালিকায় উঠেনি।
এছাড়া কয়েক সপ্তাহ আগে করোনার কারণে কর্মহীন হয়ে পড়া সকল চায়ের দোকানদার, নাপিত ও ভ্যানচালকদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করা হয়।
কিন্তু সোনাপুর মাঝপাড়া গ্রামের ইজার আলী চায়ের দোকানী হলেও তাকে চায়ের দোকানদারদের তালিকায় রাখা হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।
ইজারের মা জানায়, আমাদের গ্রামের সকল চায়ের দোকানদারদের মাঝে খাদ্য সামগ্রী দেওয়া হয় কিন্তু আমার ছেলেকে কিছুই দেয়নি। পরে আমার ছেলেকে একটা লোক উপজেলায় ডেকে নিয়ে ১০ কেজি চাউল দেন।
একই ভাবে সোনাপুর গ্রামের ভ্যান চালক হাসান আলীর মা জানান, আমার ছেলে ভ্যান চালায়। কিন্তু আমার ছেলেকে মেম্বার কিছুই দেয়নি।
একই জায়গার কালুর স্ত্রী শিল্পী খাতুন জানান, আমার স্বামী করিমন চালায়। করোনার কারণে করিমন চালাতে দেয়না। অনেকদিন ধরে বসে আছি, কিন্তু করিমন চালকদের সাহায্য করলেও মেম্বার আমাদের কোন সাহায্য করেনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন নেতাকর্মীরা জনান, মেম্বার সাহেব তার নিজের ইচ্ছে ও কাছের লোকদের বিভিন্ন সুবিধা দিচ্ছে। কে বড়লোক আর কে গরীব সেটা দেখছে না। তালিকা তৈরি করার সময় কোন নেতাকর্মীকে জানাচ্ছে না।
ইউপি সদস্য সোহরাব হোসেনের কাছে স্বজন প্রীতির কথা জানতে চাওয়া হলে তিনি স্বীকার করে বলেন, প্রথমে ভুল করে এমনটা হয়েছিলো, তবে পুনরায় কিছু লোক বাদ দিয়ে নতুন করে তালিকা তৈরি করা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার উসমান গনি বলেন, নামের তালিকা অনুযায়ী প্রতিটা গ্রামে তদন্ত করা হচ্ছে। যদি স্বচ্ছল ব্যক্তির রেশনের তালিকায় নাম থেকে থাকে তাহলে তাদের নাম কেটে দেওয়া হবে। তাছাড়া আমার উপজেলায় কোন ধরনের স্বজনপ্রীতি চলবে না।