নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট ওয়াসিফ আহমেদ খানকে মারধরের ঘটনায় মামলায় সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের ছেলে ইরফান সেলিমকে হেফাজতে নিয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
রোববার দুপুর ১২টার দিকে পুরান ঢাকার চকবাজারের ৩০ নম্বর দেবিদাসঘাট লেনে হাজী সেলিমের পৈতৃক বাড়িতে অভিযান শুরু করে র্যাব ও ডিবি। এরপর ইরফানকে হেফাজতে নেয় র্যাব।
ইরফান সেলিম নিজেও একজন জনপ্রতিনিধি; ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তিনি।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘সোয়ারিঘাট এলাকায় হাজী সেলিমের একটি বাড়ি আছে, সেটা ঘেরাও করে র্যাব সদস্যরা অভিযান চালাচ্ছে।
র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সরোয়ার বলেন, আমাদের টিমের সদস্যরা হাজী সেলিমের ছেলেকে হেফাজতে নিয়েছে।
চকবাজার থানার ওসি মওদুদ হাওলাদার যুগান্তরকে বলেন, হাজী সেলিমের বাসায় র্যাব ও ডিবির যৌথ অভিযান চলছে। র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম আসার পর তল্লাশি করা হবে। এরপর ইরফান সেলিমকে গ্রেফতার করা হবে কিনা সিদ্ধান্ত হবে।
আমাদের পুরান ঢাকার প্রতিনিধি জানিয়েছেন, চকবাজারের যে বাসায় র্যাব অভিযান চালাচ্ছে সেটি হাজী সেলিমের পৈতৃক বাড়ি। অভিযানে র্যাবের ৪০০-৫০০ সদস্য অংশ নিয়েছেন। ওই এলাকায় কাউকে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না।
গতকাল রোববার সন্ধ্যার পর ধানমণ্ডিতে কলাবাগান ক্রসিংয়ের কাছে হাজী সেলিমের গাড়ি থেকে নেমে লেফটেন্যান্ট ওয়াসিফকে মারধরের ঘটনা ঘটে।
ঘটনার পরদিন সোমবার ধানমণ্ডি থানায় একটি মামলা করেন ওয়াসিফ।
মামলায় হাজী সেলিমের ছেলে ইরফান সেলিম, প্রোটকল অফিসার এবি সিদ্দিক দিপু, মোহাম্মদ জাহিদ ও মিজানুর রহমানের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত পরিচয় আরও তিনজনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার পর হাজী সেলিমের গাড়িচালক মিজানুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, লেফটেন্যান্ট ওয়াসিফ রোববার রাত পৌনে ৮টার দিকে স্ত্রীকে নিয়ে মোটরসাইকেলে করে কলাবাগানের দিকে যাচ্ছিলেন। ল্যাবএইড হাসপাতালের সামনে সংসদ সদস্যের স্টিকার লাগানো একটি কালো রঙের ল্যান্ড রোভার গাড়ি (ঢাকা মেট্রো-ঘ-১১-৫৭৩৬) পেছন থেকে তার মোটরসাইকেলে ধাক্কা দেয়।
ওয়াসিফ ও তার স্ত্রী ধাক্কা সামলে মোটরসাইকেল থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গে ওই গাড়ি থেকে জাহিদ, দিপু এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরও দুই-তিনজন ‘অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ’ করতে করতে নেমে আসে এবং ‘মারধর’ শুরু করে। তারা লেফটেন্যান্ট ওয়াসিফ ও তার স্ত্রীকে ‘উঠিয়ে নেয়ার এবং হত্যার’ হুমকি দেয় বলেও মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে।
পরে ঘটনাস্থলে লোকজন জড়ো হলে সংসদ সদস্যের গাড়ি ফেলে মারধরকারীরা পালিয়ে যান। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে এমপির গাড়ি ও নৌবাহিনীর কর্মকর্তার মোটরসাইকেল ধানমণ্ডি থানায় নিয়ে যায়।
এদিকে এই ঘটনার পর মোবাইল ফোনে একটি ভিডিও ধারণ করেছেন এক প্রত্যক্ষদর্শী। এরই মধ্যে ভিডিওটি সামাজিকমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
ওই ভিডিওতে দেখা গেছে, আহত নৌবাহিনীর কর্মকর্তা নিজেকে লেফটেন্যান্ট ওয়াসিফ বলে পরিচয় দিয়ে ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দিচ্ছেন।
নৌবাহিনীর এই কর্মকর্তাকে রক্তাক্ত মুখে বলতে শোনা যায়, তিনি পরিচয় দেয়ার পরও তাকে মারধর করা হয়েছে, তার স্ত্রীর গায়েও ‘হাত দিয়েছে’।
এ বিষয়ে ধানমণ্ডি থানার ওসি ইকরাম আলী মিয়া বলেন, ওই গাড়িটি সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের। ঘটনার সময় তিনি গাড়িতে ছিলেন না। তার ছেলে ইরফান সেলিম, নিরাপত্তারক্ষীসহ ৫-৬ ছিলেন। এ ঘটনায় এরফান সেলিমকে প্রধান আসামি করে একটি মামলা করেছেন লেফটেন্যান্ট ওয়াসিফ।
1
Shares
facebook sharing buttonmessenger sharing buttontwitter sharing buttonpinterest sharing buttonlinkedin sharing buttonprint sharing button