বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক (জেনারেল) পদের নিয়োগ পরীক্ষায় নকআউটভিত্তিক প্রিলিমিনারি পর্ব পার হয়ে যাঁরা ১০ হাজার ক্লাবে ঢুকতে পেরেছেন, তাঁদের সবাইকে অভিনন্দন। লিখিত পরীক্ষা যেহেতু ১৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে, তাই ধরে নেওয়া যায় সবার প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে। প্রথম ধাপের পরীক্ষার নম্বর যোগ না হওয়ায় লিখিত পর্ব সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের মতো। নম্বর বিচারে এ অংশটি নিয়োগপ্রক্রিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। দুই ঘণ্টাব্যাপী ২০০ নম্বরের পরীক্ষা।
হাতে আছে মাত্র সপ্তাহখানেক সময়। বাড়তি চাপ নেওয়ার প্রয়োজন নেই। কয়েকটি বিষয়ে বাড়তি মনোযোগ দিলে লিখিত থেকেই চূড়ান্ত মনোনয়নের দৌড়ে অনেকখানি এগিয়ে থাকা সম্ভব। এ পরীক্ষায় ভালো করতে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত লিখেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের উপপরিচালক নাজমুল হুদা।সূক্ষ্ম ব্যবধানে এগিয়ে থাকতে ফোকাস রাইটিংয়ে বাড়তি নজর দিতে হবে। অনেকে গড়পড়তা লিখে পৃষ্ঠা ভরাট করবে। বেশি নম্বর পেতে ৩-৪ পৃষ্ঠার মধ্যেই ভালো কিছু দিতে হবে।
এ অংশে বাংলা ও ইংরেজি মিলিয়ে দুটি নিবন্ধ লিখতে হয়। মোটামুটি ৫০ থেকে ৬০ নম্বর বরাদ্দ থাকে। বিষয়ভিত্তিক বিশেষণসহ তুলনামূলক তথ্যগুলো টেবিল, ছক বা গ্রাফ আকারে উপস্থাপন করতে পারলে ভালো নম্বর ওঠে। এ ক্ষেত্রে ‘কালার পেন’ বা কাঠ পেনসিল ব্যবহার করা যেতে পারে। সাম্প্রতিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো আরও কয়েকবার পড়তে পারেন। বিশেষ করে কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উদ্যোগ, বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে অগ্রগতি, স্বাধীনতার ৫০ বছরে দেশের অর্জন ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন, উন্নত রাষ্ট্রের রূপরেখা, টেকসই উন্নয়নে বাংলাদেশের সাফল্য, বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন, সম্ভাবনাময় ই-কমার্স সেক্টরের বিকাশে চ্যালেঞ্জ, রোহিঙ্গা সংকট, পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ মেগা প্রকল্পগুলোর হালনাগাদ জেনে নিন।
টপিক ধরে গুগলে সার্চ দিলেও একসঙ্গে একাধিক কলাম, নিবন্ধ বা গবেষণাপত্র পাওয়া যায়, এগুলো একসঙ্গে আলাদা একটা ফোল্ডারে জমা রেখে পড়তে পারেন। ফোকাস রাইটিং ছাড়াও এগুলো অনুবাদ ও ট্রান্সসেলশনেও কাজে আসবে। গুরত্বপূর্ণ তথ্য যেমন রেমিট্যান্স, রপ্তানি আয়, বৈদেশিক রিজার্ভ, মাথাপিছু আয়, কয়েক বছরের দারিদ্র্য হ্রাস ও বার্ষিক প্রবৃদ্ধি (জিডিপি) ইত্যাদি এক পৃষ্ঠায় বুলেট আকারে টুকে রাখলে লেখার ক্ষেত্রে ভালো কাজে আসে।
বাংলা ও ইংরেজি অনুবাদের ক্ষেত্রে নম্বর অনেকাংশে নির্ভর করে দীর্ঘমেয়াদি অনুশীলনের ওপর। যাঁরা ইংরেজি ও বাংলা পত্রিকার সম্পাদকীয় কলাম, অর্থ ও বাণিজ্য পাতা নিয়মিত পড়ে থাকেন, তাঁরা উপকার পাবেন। এ জন্য এখন আর বাড়তি বই না পড়লেও চলবে। প্রতিদিন অন্তত দুটি করে পত্রিকার সম্পাদকীয় বা অর্থনীতি পাতা থেকে অনুবাদের অনুশীলন করতে পারেন। পরীক্ষার হলে প্রশ্নপত্র পেয়ে সতর্কতার সঙ্গে সময় নিয়ে অনুবাদে হাত দেবেন। প্রয়োজনে অনুবাদ দিয়েই শুরু করতে পারেন লিখিত পর্ব। অল্প লিখে বেশি নম্বর পাওয়ার জন্য হাতের লেখা যতটা সম্ভব স্পষ্ট করা দরকার। কাটাকাটি যেন না থাকে। সহজ শব্দে অনুবাদ করতে হবে। দুটি অনুবাদের জন্য ৩০ থেকে ৩৫ মিনিটের বেশি সময় ব্যয় করা ঠিক হবে না।
প্রিলিমিনারি বা লিখিত উভয় ক্ষেত্রেই ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষায় গণিত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। গণিতে যাঁদের আগের দক্ষতা আছে, তাঁরা কিছুটা বাড়তি সুবিধা পেয়ে থাকেন। তবে নম্বর বিচারে অন্যান্য অংশও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। এ জন্য সর্বোচ্চ ৪০ মিনিট বরাদ্দ রাখুন গণিতে। শুধু অঙ্ক নিয়ে মাথা ঘামাতে গিয়ে যেন অন্যান্য অংশের সময় নষ্ট না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। সাধারণত ৫টা অঙ্ক ৫০ নম্বরের প্রশ্ন করা হয়। অনেক সময় ছোট ছোট সাতটা অঙ্কও আসে। সাত–পাঁচ যা-ই হোক মাথা ঠান্ডা রেখে ১২০ মিনিট লিখিত ‘ইনিংস’–এ টিকে থাকুন, নম্বর আসবে।
অনেকে প্যাসেজ অংশটি শেষের দিকে শুরু করেন। এতে অনেক সময় পুরো প্যাসেজ ঠিকমতো পড়া হয় না। উত্তর খুঁজে পেতে সমস্যা হয়। এ জন্য আগে প্রশ্ন পড়ে নিতে পারেন। এতে সময় সাশ্রয় হবে। পাঁচটি প্রশ্নের জন্য ২০ নম্বর বরাদ্দ থাকে। এ অংশে ২০ মিনিটের বেশি সময় নিতে যাবেন না। প্রশ্নের সূত্র ধরে হুবহু উত্তর না পেলেও ছেড়ে আসবেন না। তবে প্যাসেজে দেওয়া কোনো শব্দ হুবহু না তুলে দিয়ে প্রতিশব্দ ব্যবহারের চেষ্ট করবেন। এতে গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে, কিছু নম্বর যোগ হবে।
অনেক সময় ১৫ থেকে ২০ নম্বরের জন্য বিজনেস লেটার, ভাবসম্প্রসারণ (অ্যামপ্লিফিকেশন) কিংবা অ্যানালাইটিক্যাল (বিশ্লেষণধর্মী) কিছু লিখতে হয়। বিভিন্ন সালের প্রশ্নপত্র দেখে বিজনেস লেটারের ধরনগুলো জেনে নিয়ে কয়েক দিন খাতায় লিখে অনুশীলন করতে পারেন। লেখার ফরম্যাটগুলো একটা আলাদা খাতায়ও তুলে রাখলে চোখ বুলিয়ে নিতে পারেন। অ্যামপ্লিফিকেশন কিংবা অ্যানালাইটিক্যাল অংশে ভালো করার জন্য উপস্থিত বুদ্ধি বা আগের পড়ার অভ্যাস কাজে দেয়। নতুন করে মাথা ঘামানোর দরকার নেই। যা-ই আসুক প্রশ্নানুসারে ‘টু দ্য পয়েন্ট’–এ লেখার চেষ্টা করবেন। সময় সমন্বয় করে লিখিত পরীক্ষা ভালোভাবে শেষ করতে পারলে শেষ ধাপ ভাইভার জন্য ইয়েস কার্ড পেয়ে যেতে পারেন।