রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীনতাকে পূর্ণতা দান করতে প্রয়োজন ছিলো সুশিক্ষা ও দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টি, যাতে ছোট্ট আয়তনের দেশটি অধিক জনসংখ্যার চাপ কিছুটা হলেও সামাল দিতে পারে।
তাই স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাওয়া খাতগুলোর একটি হচ্ছে শিক্ষা। শিক্ষাখাতটি গুরুত্ব পেয়েছিলো বলেই স্বাধীনতা অর্জনের ছয় মাসের মধ্যেই পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর রেখে যাওয়া শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে গঠন করা হয় একটি কমিশনের।
গত দশ বছরে প্রাথমিক শিক্ষা, মাধ্যমিক শিক্ষা, কারিগরি শিক্ষা, মাদ্রাসা শিক্ষা এবং উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে সরকারের সাফল্য আজ আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হচ্ছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঝরে পড়া রোধ, শিক্ষার প্রসার, বাল্য বিবাহ রোধ, নারীর ক্ষমতায়ন, আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধিসহ সমতা বিধানের লক্ষ্যে সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর আওতায় বিভিন্ন প্রকল্পগুলো ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হচ্ছে।
অন্যদিকে ডিজিটাল পদ্ধতির আওতায় মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে শিক্ষা মন্ত্রণালয় উপবৃত্তির টাকা অনলাইনে প্রদান করেছে।
সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করা আর শিক্ষায় নারী-পুরুষের সমতা অর্জনের ক্ষেত্রে রীতিমতো বিপ্লব ঘটেছে বাংলাদেশে যা, বিশ্বের বহু দেশের কাছে অনুকরণীয়। সাক্ষরতার হার বৃদ্ধি, বিদ্যালয়ে ভর্তির হার শতভাগ, ছাত্র-ছাত্রীর সমতাসহ শিক্ষার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রোল মডেল এখন বাংলাদেশ।
বিশ্বব্যাংক, ইউনেস্কো, বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামসহ আন্তর্জাতিক দাতা ও গবেষণা সংস্থা বাংলাদেশের শিক্ষার অগ্রগতিকে অন্যদের জন্য উদাহরণ হিসেবে অভিহিত করেছে। শিক্ষায় নারী-পুরুষের সমতা অর্জনে বাংলাদেশ ছুঁয়েছে নতুন মাইলফলক।
মানব সম্পদ উন্নয়নে বিনিয়োগ হওয়ায় বাংলাদেশ টেকশই ফল বয়ে এনেছে। লাখ লাখ শিশুকে বিদ্যালয়ে নিয়ে আসা, নারী সাক্ষরতার মহার বৃদ্ধি মাতৃ মৃত্যুর হার কমিয়ে আনাকে উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিবেদনে।
১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা সরকার গঠনের পর বাংলাদেশে উচ্চ শিক্ষার দ্বার উন্মুক্ত হয়। গড়ে ওঠে নতুন নতুন পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়। তবে ২০০৯ থেকে গত ১০ বছরে দেশে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ নতুন উচ্চতায় পৌঁছে গেছে। দেশে নতুন ২২ টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে।
সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার বাইরে বেসরকারি উদ্যোগে ৫২ টি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন দেয়া হয়েছে। উচ্চ শিক্ষার গুণগতমান নিশ্চিতকরণ এবং আন্তর্জাতিকীকরণের লক্ষ্যে Accreditation Council আইন পাস করা হয়েছে। উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৭ লাখ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৩৮ লাখে উন্নীত হয়েছে।
শিক্ষার গুনগত মান উন্নোয়ন ও কারিগরি শিক্ষার প্রসারের পাশাপাশি দেশের সার্বিক ক্ষেত্রে শিক্ষার পরিবেশ উন্নত হয়েছে। শিক্ষার কার্যক্রমের বিভিন্ন দিক ডিজিটালাইজেশন হওয়ার কারনে শিক্ষাক্ষেত্রে দুনীর্তি রোধ হচ্ছে। পাশাপাশি শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশ উন্নতি হয়েছে। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সন্ত্রাসী কার্যক্রম আর নেই।
পূর্বে ‘শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস’ এই কথাটি জনগণের মনে ভীতির সৃষ্টি করতো। এক সময় ছিল যখন বিশ্ববিদ্যালয় যেনো হয়ে উঠছিল রাজনৈতিক সন্ত্রাস এর স্থান, জামায়াত ইসলামি এবং বিএনপি যখন রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে ছিল তখন ছাত্রনেতাদের উদ্বত্ব যেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশের জন্য হুমকিতে পরিণত হয়েছিল, সুষ্ঠুভাবে ক্লাস ও পরীক্ষাতো দূরের কথা ছাত্র-ছাত্রী/কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ভীতির সমুখে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারতো না, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রাবাস যেন পরিণত হয়েছিল সন্ত্রাসীদের স্থায়ী বাসস্থান।
সাধারণ ছাত্রদের কোন স্থান ছিলনা সেখানে।
কেউ যদি কোনদিন কিছু বলার সাহস করতো তাহলে তার হাত ও পায়ের রগ কেঁটে দিয়া হতো নিঃসংশ ভাবে, সর্বস্তরে সন্ত্রাস ছড়িয়ে পড়ায় শিক্ষা ব্যবস্থা প্রায় মন্থর হয়ে পরেছিল।
বর্তমান সরকার তাদের সুদক্ষ পরিকল্পনার মাধ্যমে শিক্ষাঙ্গন সন্ত্রাস মুক্ত করে গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে, এখন প্রতিটি বিভাগীয় শহরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠায় অনেক শিক্ষার্থী শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পাচ্ছে।
বিভিন্ন অনলাইন শিক্ষানীতি যেমন- ভর্তি করণ, রেজিস্ট্রেশন, পরীক্ষা বিভিন্ন জাটিল প্রক্রিয়াগুলি মানুষ নির্বিঘ্নে করতে পারছে। এখন আর নেতাদের চাপের মুখে পরতে হচ্ছে না, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন উন্নয়ন মূলক কার্যক্রম এখন সুষ্ঠুভাবে করা সম্ভব হচ্ছে।
টেন্ডার জমা দেওয়া থেকে শুরু করে পরীক্ষার ফল প্রকাশ পর্যন্ত অনলাইন এর মাধ্যমে সুষ্ঠুভাবে করা সম্ভব হচ্ছে। এই সুযোগ গুলির কারণে এখন আর সন্ত্রাস শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্থান পাচ্ছে না।
অধ্যাপক ড. হিমাংশু ভৌমিক, ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুর