আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেছেন, বাংলা সাহিত্যের প্রায় সব শাখাতেই কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নির্দেশকের ভূমিকা রেখেছেন।
তিনি বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনাদর্শ ও তার সৃষ্টিকর্ম শোষণ-বঞ্চনামুক্ত, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণে চিরদিন বাঙালিকে অনুপ্রাণিত করবে। তিনি বাঙালির চেতনা ও মননের প্রধান প্রতিনিধি। বিশ্বকবির কুঠিবাড়ী, কাচারিবাড়িসহ তার সব স্মৃতি সংরক্ষণের জন্য বর্তমান সরকারের প্রচেষ্টার অব্যাহত আছে।
আজ বুধবার সকাল সাড়ে ১১টায় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে কুষ্টিয়ার শিলাইদহে কবির স্মৃতিবিজড়িত কুঠিবাড়ি আঙিনায় দুইদিনের রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী ও আলোচনা অনুষ্ঠানের উদ্ধোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
কুষ্টিয়ার ঐতিহ্য আমাদের এই শিলাইদহের কুঠিবাড়ী উল্লেখ করে মাহবুব উল আলম হানিফ এমপি আরও বলেন, প্রতিনিয়ত এখানে রবীন্দ্রপ্রেমী ও দর্শনার্থীদের আগমণ ঘটে। তাই এখানে আধুনিক পর্যটন কেন্দ্র করতে আরও বেশি উদ্যোগ নেওয়া হবে এবং ট্যুরিস্ট পুলিশের তৎপরতা বাড়াতে হবে যাতে করে পর্যটকদের কোন সমস্যার সৃষ্টি না হয়। একইসাথে এই শিলাইদহে ভবিষ্যতে শান্তি নিকেতনের আদলে কিছু করা যায় কিনা সেটাও ভেবে দেখা হবে।
কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মো: এহেতেশাম রেজার সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কুষ্টিয়া-৪(খোকসা-কুমারখালী) আসনের সংসদ সদস্য আব্দুর রউফ, পুলিশ সুপার এএইচ এম আবদুর রকিব, কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর শিশির কুমার রায়, সাংবাদিক ইউনিয়ন কুষ্টিয়ার সভাপতি রাশেদুল ইসলাম বিপ্লব, জাগ্রত মহানায়ক শিহাব রিফাত আলম, জাতীয় মানবাধিকার সোসাইটির চেয়ারম্যান প্রফেসর নজরুল ইসলাম তামিজি প্রমুখ।
কবির কর্মময় জীবন নিয়ে আলোচনা করেন রবীন্দ্র গবেষক ইবির বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. সরওয়ার মুর্শেদ রতন, শিলাইদহ রবীন্দ্র সংসদের পরিচালক আফজাল হোসেন।
এর আগে জেলা শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীদের কণ্ঠে সূচনা সঙ্গীত পরিবেশিত হয়। দুই দিনব্যাপী রবীন্দ্রমেলাকে ঘিরে শিলাইদহ কুঠিবাড়ি আঙিনা হাজারো দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে।তবে প্রচন্ড গরম এবং উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের কারণে তিন দিনের এ অনুষ্ঠানকে দুই দিনেই শেষ হবে।
সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন বিশ্বকবির ১৬৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে দুই দিনব্যাপী আয়োজিত অনুষ্ঠানে কুঠিবাড়ির মূলমঞ্চে প্রতিদিনই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন জেলার সংগঠনসহ জাতীয় পর্যায়ের শিল্পীরা কুঠিবাড়ির মূলমঞ্চে রবীন্দ্র সংগীত, কবিতা আবৃত্তি, দলীয় নৃত্য পরিবেশন ও রবীন্দ্রনাথের লেখা নাটক মঞ্চস্থ করবেন।
এদিকে, রবীন্দ্র জন্মবার্ষিকীতে কুঠিবাড়ি চত্বরে বসেছে বিশাল গ্রামীণ মেলা। নানারকম পসরা সাজিয়ে বসেছেন দোকানিরা। ঐতিহাসিক এই উৎসবকে নির্বিঘ্ন করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
জমিদারি দেখাশোনার জন্য ১৮৯১ সালে প্রথম এই কুঠিবাড়িতে আসেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। নিরিবিলি পরিবেশ, জমিদারি আর ব্যবসার কারণে বার বার কুষ্টিয়ার এই কুঠিবাড়িতে ফিরে আসতেন তিনি। নিভৃত বাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চল কুষ্টিয়ার শিলাইদহে কবির জীবনের বেশকিছু মূল্যবান সময় কেটেছে। এখানে বসে রচিত গীতাঞ্জলি কাব্যই রবীন্দ্রনাথকে এনে দিয়েছে নোবেল পুরস্কার আর বিশ্বকবির মর্যাদা। এছাড়া তিনি এখানে বসেই বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতসহ অসংখ্য কালজয়ী সাহিত্য রচনা করেছেন। কুঠিবাড়িতে সংরক্ষিত আছে সেসব দিনের নানা স্মৃতি।