শ্বাসরুদ্ধকর টাইব্রেকারেই গড়াল এবারের ইউরোর ফাইনাল। যেখানে পেনাল্টি শুট-আউটে ইংল্যান্ডকে ৩-২ গোলে হারিয়ে ইউরো ২০২০ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ইতালি।
কাঁদল ইংল্যান্ড, ৫৩ বছর পর আবারও ইউরোর শিরোপা পেয়ে হাসল আজ্জুরিরা।
টাইব্রেকারে ইতালির পক্ষে গোল করেন বেরারদি, গোল করেন ইংল্যান্ডের হ্যারি কেন, কিন্তু বেলোত্তির শট ঠেকিয়ে দেন পিকফোর্ড, তবে ইংল্যান্ডের হ্যারি মাগুইর শট ঠেকাতে পারেননি দেন্নারুমা। ফলে স্কোরলাইন হয় ১-২। এরপর গোল করেন ইতালির বোনুচ্চি কিন্তু ইংল্যান্ডের রাশফোর্ডের শট পোস্টে প্রতিহত হয়। স্কোর ফের সমতায় ২-২।
এবার গোল করেন ইতালির বার্নারদেসচি। কিন্ত ইংল্যান্ডের স্যাঞ্চোর শট বাঁচিয়ে দেন দোন্নারুমা। স্কোরলাইন হয় ৩-২।
জোরগিনহোর শট বাঁচিয়ে দেন পিকফোর্ড। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি। ইংল্যান্ডের সাকার শটও বাঁচিয়ে দেন দোন্নারুমা। ফলে ৩-২ স্কোরলাইনে জয় পায় ইতালি।
লন্ডনের ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে ইউরো কাপের টান টান উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচে শুরুতেই এগিয়ে যায় ইংল্যান্ড। মাত্র ১ মিনিট ৫৭ সেকেন্ডে গোল করে ইউরোর রেকর্ডবুকে নাম লেখান ইংলিশ ডিফেন্ডার লিউক শ।
ম্যাচের দ্বিতীয় মিনিটে কর্নার কিক পায় ইতালি। কর্নার থেকে ভেসে আসা বল ক্লিয়ার করে কাউন্টার অ্যাটাকে উঠে ইংল্যান্ড।
বক্সের ডান পাশ লম্বা পাস দেন কিয়েরান ট্রিপিয়ার। দৌড়ে এগিয়ে এসে লিউক শ ডান পায়ের দুর্দান্ত এক শট নেন। মুহূর্তেই বলটি ইতালির জালে জড়িয়ে যায়।
এটি লিউকের প্রথম আন্তর্জাতিক গোল ইউরোর ফাইনালে। গোলটি করে ইউরো কাপের ইতিহাসে সর্বকালীন একটি রেকর্ড গড়লেন। ১ মিনিট ৫৭ সেকেন্ডে করা তার গোলটিই এখন ইউরোর ফাইনাল ম্যাচে করা দ্রুততম গোল।
১৯৬৪ সালে পেরেদা ৬ মিনিটের মাথায় গোল করেছিলেন। তার থেকে অনেক এগিয়ে ৫৭ বছরের অক্ষুণ্ন রেকর্ড নিজের করে নিলেন।
এর পর একের পর এক আক্রমণ করেও ব্যর্থ হতে থাকে ইতালি। ৮ মিনিটের মাথায় ইংল্যান্ডের পোস্টে প্রথম শট নেন ইনসিনিয়ে। যদিও তা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।
১৭ মিনিটের মাথায় অফসাইড হন ইতালির এমারসন। ইতালির আক্রমণ ভেস্তে যায়।
২৬ মিনিটের মাথায় ইংল্যান্ডের আক্রমণ ভেস্তে যায়। এবার অফসাইড ট্রিপিয়ার। এর ২ মিনিট পর ফের আক্রমণ শানান ইনসিনিয়ে। ইংল্যান্ডের গোলরক্ষকের সেই শট ধরার প্রয়োজন পড়েনি।
৩৫ মিনিটের শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হয় কিয়েসার। ৩৯ মিনিটের মাথায় ফের ইতালির বিপক্ষে অফসাইডের বাঁশি। এবারের নাম ইমমোবিল।
প্রথমার্ধের সংযোজিত ৪ মিনিটেও সমতায় ফেরেনি ইতালি। ৪৭ মিনিটে ইংল্যান্ডের পোস্ট বরবার দুর্দান্ত শট নেন ইতালির ভেরাত্তি। বলা যেতে বিরতির আগ মুহূর্তে এটাই বলার মতো প্রথম শট যা লক্ষ্য বরাবর গেল। তবে সেই শট প্রতিহত করেন ইংলিশ গোলরক্ষক পিকফোর্ড।
প্রথমার্ধের খেলা শেষে লিউক শ’র গোলে ১-০ গোলে এগিয়ে বিরতিতে যায় ইংল্যান্ড।
দ্বিতীয়ার্ধে শুরু থেকেই রক্ষণাত্মক হয়ে যায় ইংলিশরা।
যে কারণ দূর্ভেদ্য দেয়াল ভেদ করতে যারপরনাই কষ্ট হয় ইতালির। অবশেষে সফলতা আসে। ৬৭ মিনিটে ইতালিকে সমতায় ফেরান বোনুচ্চি।
এর আগে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই হ্যারি কেনকে ফাউল করে হলুদ কার্ড দেখেন ইতালির বারেল্লা।
ম্যাচের শুরু থেকেই ফিনিশিংয়ে ভাল করছিলেন না ইনসিনিয়ে। ৫৩ মিনিটের মাথায় ফের আক্রমণে ওঠে লক্ষ্যভ্রষ্ট হয় তার শট।
পরপর দুটি বদলি নামায়ে ইতালি।
৫৪ মিনিটে বারেল্লাকে তুলে নিয়ে ক্রিস্তান্তেকে মাঠে নামান কোচ মানচিনি। ৫৫ মিনিটে ইমমোবিলের পরিবর্তে মাঠে নামেন বেরারদি।
৫৫ মিনিটের মাথায় স্টার্লিংকে ফাউল করে হলুদ কার্ড দেখেন বোনুচ্চি। সমতায় ফিরতে মরিয়া ইতালি একের পর এক আক্রমণ চালাতে থাকে ইংল্যান্ড শিবিরে। গোল বাঁচাতে পুরোপুরি ডিফেন্সিভ হয়ে যায় ইংল্যান্ড।
৫৭ মিনিটের মাথায় গোলপোস্ট বরারব দুর্দান্ত এক শট নেন ইনসিনিয়ে। দুর্দান্ত সেভ করেন ইংলিশ গোলরক্ষক পিকফোর্ড।
৬২ মিনিটের মাথায় কিয়েসার আক্রমণ ঠেকিয়ে দেন পিকফোর্ড। এতোক্ষণ আলোচনার বাইরেই ছিলেন ইতালির গোলরক্ষক দোন্নারুমা।
৬৪ মিনিটের মাথায় ইংল্যান্ডের স্টোনসের আক্রমণ চালালে তা প্রতিহত করেন দোন্নারুমা।
এর মিনিট তিনেক বাদে দুর্দান্ত হেডে ইংল্যান্ডের জালে বল জড়ানোর চেষ্টা করেন ভেরাত্তি। ইংল্যান্ড দলের ত্রাতা পিকফোর্ড তাকে ব্যর্থ করেন।
কিন্তু কাছাকাঠি সময়ে বোনুচ্চির প্রচেষ্টা আর রুখে দিতে পারেননি পিকফোর্ড। বল জড়িয়ে যায় জালে। ১-১ সমতা ফেরে ইতালি।
৭০ মিনিটের মাথায় ট্রিপিয়ারকে তুলে নিয়ে সাকাকে মাঠে নামায় ইংল্যান্ড। ৭৪ মিনিটের মাথায় বেরারদির আক্রমণ লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। এ সময় রাইসকে তুলে নিয়ে হেনডারসনকে মাঠে নামায় ইংল্যান্ড।
৮৪ মিনিটে ফিলিপসকে ফাউল করার জন্য হলুদ কার্ড দেখেন ইতালির ইনসিনিয়ে। ৮৬ মিনিটের মাথায় কিয়েসার বদলি নামেন বার্নারদেসচি।
দ্বিতীয়ার্ধে ৬ মিনিট সময় সংযোজন করেন রেফারি। তাতেও কাজ হয়নি। ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ের।
৯১ মিনিটের মাথায় বারবার শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়া ইনসিনিয়ে তুলে নিয়ে বেলোত্তিকে মাঠে নামায় ইতালি। পরের মিনিটে অফসাইড হন বার্নারদেসচি। ৯৬ মিনিটে উঠে যান ভেরাত্তি, নামেন লেকাতেল্লি। ৯৭ মিনিটের মাথায় ফিলিপসের শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।
১০১ মিনিটের মাথায় অফসাইডের আওতায় পড়েন বেলোত্তি। ১০৬ মিনিটে বেলোত্তিকে ফাউল করে হলুদ কার্ড দেখেন হ্যারি মাগুইর।
অতিরিক্ত সময়ের খেলা শেষেও স্কোরলাইন ১-১ গোলের সমতায় দাঁড়িয়ে। ফলাফল নির্ধারিত হয় পেনাল্টি শুট-আউটে।