মেহেরপুরের গাংনীতে স্বল্প সুদে ঋণ দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে অর্ধশত হতদরিদ্র মানুষের কাছ থেকে কয়েক লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ‘‘গণ উন্নয়ন প্রচেষ্টা’’ নামের একটি ভুঁইফোড় এনজিও সংস্থা।
গতকাল শনিবার তাদের ঋণ দেওয়ার কথা দিয়ে অফিস থেকে উধাও হয়েছে কথিত সংস্থার লোকজন। অফিস বন্ধ দেখে হতাশায় ভেঙ্গে পড়েছে বিভিন্ন এলাকার অর্ধশতাধিক নারী পুরুষ।
জানা গেছে, গত ৪মার্চ থকে গাংনী পৌর সভার ৩ নং ওয়ার্ডের রবিউল ইসলামের একটি বাড়ি ভাড়া নেয় ‘গণ উন্নয়ন পচেষ্টা’ সংস্থার কথিত এরিয়া ম্যানেজার মাহাুমদ । অফিস সাজানোর জন্য কয়েকটি চেয়ার ও দুটি টেবিল বসিয়ে গড়ে প্রতারণার ফাঁদ। মাহামুদ ও তার লোকজন গাংনীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে গঠন করে সমিতি। স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়ার নামে একটি পাশবই দিয়ে সঞ্চয় গ্রহন করেন তারা। গাংনীর চিৎলা গ্রামে ৭ জন, নিত্যানন্দনপুরে ১৩ জন ও বিলধলা গ্রামে ১০ জনের সাথে ১০ হাজার টাকা করে সঞ্চয় গ্রহন করা হয়। গতকাল শনিবার সকালে সমিতির সদস্যদের ঋণ দেবার কথা ছিল। ঋণ নিতে আসে বিভিন্ন গ্রামের প্রায় অর্ধশত মানুষ। সকাল ৯ টা থেকে দুপুর পর্যন্ত বসে থেকে দেখা মেলেনি সমিতির লোকজনের। মোবাইল ফোনও বন্ধ তাদের।
চিৎলা গ্রামের হতদরিদ্র আসমা খাতুন জানান, তার কাছে থেকে ১০ হাজার টাকা নিয়েছে। আজ (গতকাল শনিবার) ঋণ দেবার কথা ছিল। কিন্তু আমাকে আসতে বলে তারা পালিয়ে গেছে। ওই গ্রামের সুরাইয়া, রেহেনা, হুসনিয়ারা আল্পনার সাথে একই রকম প্রতারনা করা হয়। নিত্যানন্দন পরের রোজিনা,সবিতা এবং লতা ছাড়াও ১৩ জনের কাছ থেকে নেয়া হয় ১০ হাজার করে টাকা। তারাও এসেছিলেন ঋনের টাকা নিতে।
একই কথা জানালেন বিলধলা গ্রামের দুলাল হোসেনের স্ত্রী মরিওম খাতুন। তারা এলাকার বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে ধার দেনা করে টাকা দিয়েছেন সমিতির কথিত ম্যানেজার মাহামুদের কাছে। কথা ছিলো ঋনের টাকা নিয়ে ধার পরিশোধ করবেন। সমিতির কার্যালয় বন্ধ দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন হতদরিদ্র মানুষগুলি।
স্থানীয়রা জানান, খবর পেয়ে ছুটে আসেন রবিউলের বাড়ি। তারা জানান এটি নিছক প্রতারনা।
বাড়ির মালিক রবিউল ইসলাম বলেন, গত ৪ তারিখে আমার বাসা ভাড়া নেয়ার জন্য যোগাযোগ করেন কুষ্টিয়ার মাহামুদ। কয়েকটি ফার্নিচার রাখার অনুরোধ করলে আমি কোনো ডকুমেন্ট ছাড়াই তাদের চেয়ার টেবিল গুলি রাখতে দিই। আজ (গতকাল শনিবার) তাদের সকল ডকুমেন্ট দিয়ে এগ্রিমেন্ট হওয়ার কথা। গত বৃহস্পতিবার ঘরে তালা ঝুলিয়ে তারা আর ফেরেনি। অবশেষে মাহামুদের সাথে মোবাইলে একবার কথা হয়েছিল তাদের কাগজ পত্র আনার জন্য। পরে তাদের মোবাইল ফোনটি বন্ধ থাকায় যোগাযোগ হয়নি।
কথিত ম্যানেজার মাহামুদের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।
গাংনী উপজেলা এনজিও ফাউন্ডেশনের সভাপতি আবু জাফর বলেন, গণ উন্নয়ন সংস্থা নামের কোনো সংস্থা নেই। তাছাড়া কোনো উপজেলায় কাজ করতে হলে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবহিত করে কাজ করার নিয়ম। এমন অনেকেই প্রতারনার ফাঁদ পেতে বসেছে। গ্রামের মানুষ সচেতন না হলে এর মাত্রা বাড়বে।
গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আর এম সেলিম শাহনেওয়াজ জানান, এ ধরণের কোন এনজিও আছে বলে জানা নেই। এমনকি ঋণ দেওয়ার নাম করে সঞ্চয় হাতিয়ে নিয়েছে এমন কোন খবরও তিনি জানেন না। তবে এনজিও সমিতির সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান।