সন্তানকে যথাযথভাবে গড়ে তুলতে ডিসিপ্লিনের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে ডিসিপ্লিন মানেই কিন্তু শুধু কড়া ধমক বা শাস্তি নয়। শাসন থাকবে, পাশাপাশি খেয়াল রাখতে হবে বাবা-মায়ের কথায় এবং কাজে যেন নমনীয়তা থাকে।
সন্তানকে গড়ে তুলতে ডিসিপ্লিনের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। তবে অনুশাসনে রাখা মানেই কিন্তু কড়া ধমক বা শাসন নয়। এতে হিতেবিপরীত হতে পারে। সন্তানকে ডিসিপ্লিনড করে তুলতে কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখুন।
# মনে রাখবেন— শিশুরা সবসময় বাবা-মাকেই বেশি অনুকরণ করে। তাই সন্তানের কাছে নিজেকে রোল মডেল করে তুলুন। মৌখিক নির্দেশনার পাশাপাশি নিজেও সেই নিয়ম মেনে চলুন। যেমন— আপনি যদি অসময়ে টিভি চালিয়ে দেন বা ফোনে আড্ড দেন, তা হলে সন্তানও নিয়ম মেনে পড়তে বসবে না। নিজে সময়ের কাজ সময়ে করুন। কারণ আপনার সন্তান আপনাকে দেখেই শিখবে।
# সন্তান যতই ছোট হোক না কেন, ওকে সম্মান করুন। ওর মতামতকে গুরুত্ব দিন। ওর অভিমত যদি মানার মতো না হয়, তা হলে ওকে বুঝিয়ে বলুন কেন তা সম্ভব নয়। ‘আমি না বলেছি, তাই না’- এ ধরনের মন্তব্য করা উচিত নয়।
# সন্তানকে শাসন করার সময় আপনি এবং আপনার স্বামীকে একটি ইউনিট হিসেবে কাজ করতে হবে। একজন কিছু বললেন, আরেকজন টেনে নিয়ে আদর করলেন, এমন করলে চলবে না। ওকে বোঝাতে হবে ভুলটা কোথায়। ও যেন বুঝতে পারে অন্যায় করলে বাবা-মা দুজনেই রাগ করেন।
# সন্তানকে বকার প্রয়োজন হলে কখনও কোনো খারাপ শব্দ প্রয়োগ করবেন না। অন্য কারও সঙ্গে তুলনা করবেন না। এতে ওর আত্মবিশ্বাস কমে যাবে। যেমন ‘তোমার মাথায় একবারেই বুদ্ধি নেই’— এমন না বলে, বলতে পারেন— ‘এটি কি একটি বুদ্ধিমান ছেলের মতো কাজ হয়েছে?’
# একেকজন শিশুর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য একেক রকম হয়। তাই ও কীভাবে সময় কাটাতে ভালোবাসে, কোন সময় পড়তে বসতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে— এগুলো মাতায় রেখে দিনের রুটিন স্থির করুন। ওর সঙ্গে রুটিনটা অবশ্যই আলোচনা করুন। তবে বেশি নিয়মকানুন চাপিয়ে দেবেন না। খেয়াল রাখুন, স্কুল থেকে ফিরে যেন এক ঘণ্টা খেলতে পারে। ছবি আঁকা, স্ট্যাম্প জমানোর মতো নিজস্ব কিছু শখ থাকলে উৎসাহিত করুন।
# ডিসিপ্লিন কখনই চাপিয়ে দেবেন না। কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ওর পছন্দ-অপছন্দকে গুরুত্ব দিন। কেন আপনি সিদ্ধান্তটা নিচ্ছেন তা বুঝলে ওর মধ্যে ডিসিপ্লিনের গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে।
# কোনো অন্যায় করতে দেখলে প্রথমে বুঝিয়ে বলুন, তার পর ওয়ার্নিং দিন। এর পর আবার একই কাজ করলে, কিছু দিনের জন্য ওর পছন্দের কোনো জিনিস বন্ধ করে দিন বা ওর সঙ্গে কথা বলা কমিয়ে দিন। চেচামেচি করা বা গায়ে হাত তোলা একদমই উচিত নয়।
# সবার সামনে ওর সমালোচনা বা নিন্দা করবেন না। এতে ওর আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরতে পারে। কথাবার্তা, আচার-আচরণে ইতিবাচক ইঙ্গিত থাকলে ও উৎসাহিত বোধ করবে।
# সন্তান নিয়ম মেনে চললে, ঠিকমতো পড়াশোনা করলে কোনো উপলক্ষ ছাড়াই ওকে কিছু উপহার দিন। তা হলে ও বুঝতে পারবে ওর ব্যবহার এবং কাজকর্মে আপনারা খুশি।
# সন্তানকে সময় দিন। একসঙ্গে কোয়ালিটি টাইম কাটান। নিজের ছোটবেলার গল্প করুন। আর মনে রাখবেন সন্তান ছোট তাই একটু আধটু দুষ্টুমি ও করবেই। ডিসিপ্লিনের চাপে ওর স্বাভাবিক বিকাশ যেন ব্যাহত না হয়। রুটিন ভাঙার মজাটাও ওকে উপভোগ করতে দিন কোনো একটা ছুটির দিনে বা ভ্যাকেশনের সময়। মাঝে মাঝে নিয়মের তোয়াক্কা না করে সপরিবারে আনন্দে মেতে উঠুন।