গল্পের বই পড়ার অভ্যাস এখন আর নেই বললেই চলে। শিশু থেকে বুড়ো, সবাই এখন ডিজিটাল স্ক্রিনে আটকে গেছে। এই ডিজিটাল স্ক্রিনের নেশা যত বাড়ছে ততই পাল্লা দিয়ে কমেছে বই পড়ার আগ্রহ। এ ছাড়া শিশু সন্তানদের তো এখন জোর করেও পড়তে বসানো যায় না।
তাদের এই অভ্যাস কীভাবে দূর করবেন, কীভাবে তাদের হাতে বই ওঠাবেন, তা নিয়ে চিন্তিত অনেক অভিভাবক।
ডিজিটাল ডিভাইসের নেশার মাঝে বই পড়ার আগ্রহ হঠাৎ করে ফিরিয়ে আনা সহজ কাজ নয়। কিন্তু ছোটরা যাতে বই থেকে একেবারেই মুখ না ফেরায়, তার জন্য চেষ্টা করতে হবে অভিভাবকদেরই। কীভাবে সন্তানদের বইয়ের দিকে মুখ ফেরাবেন, চলুন জেনে নেওয়া যাক।
স্ক্রিনটাইম বেঁধে দিন
বই পড়াতে চাইলে আগে স্ক্রিনটাইম বেঁধে দিতে হবে। তবে শুরুতেই মোবাইল ফোন নিয়ে নিলে শিশু আরো বেশি জেদ করবে। তাই দিনের কিছুটা সময় বেঁধে দিন। এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলেন, সারা দিনে এক ঘণ্টার মতো সময় টিভি দেখা বা মোবাইলে গেম খেলার জন্য দিতে পারেন।
তার বেশি নয়। আর মোবাইলে শিশু কী ধরনের গেম খেলছে বা ভিডিও দেখছে, তাতেও নজর রাখতে হবে। বাকি সময়টা পড়ার বইয়ের বাইরে বিভিন্ন গল্পের বই পড়ানোর অভ্যাস করুন।
গল্প বলুন
এখনকার ছেলেমেয়েদের মধ্যে গল্প শোনার ধৈর্য কম। অভিভাবকেরাও সে ভাবে সময় দিতে পারেন না।
কিন্তু শিশুর মধ্যে যদি পড়ার আগ্রহ তৈরি করতে হয়, তাহলে ছোট থেকেই গল্প শোনানোর অভ্যাস তৈরি করুন। খাওয়ানোর সময়ে হাতে মোবাইল দেবেন না, গল্প বলুন। নানা রকম গল্প শোনার অভ্যাস তৈরি হলে শিশুর পড়ার আগ্রহও তৈরি হবে।
মা-বাবাকেও পড়তে হবে
শিশু যদি দেখে মা-বাবা মোবাইল ফোনে স্ক্রল না করে সময় পেলেই বই, ম্যাগাজিন, পত্রিকার পাতা উল্টাচ্ছেন, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই তার মধ্যেও পড়ার আগ্রহ বাড়বে। কারণ ছোটরা বড়দেরই অনুকরণ করার চেষ্টা করে। তাই আগে মা বা বাবাকে নিয়মিত পড়ার অভ্যাস তৈরি করতে হবে। বাড়িতেও তেমন পরিবেশ যেন থাকে। তাহলেই শিশুর মধ্যে সেটা বুনে দেওয়া সহজ হবে।
লাইব্রেরির সঙ্গে পরিচয়
ছুটির দিনে সন্তানকে নিয়ে শপিং মল বা রেস্তোরাঁয় যাওয়ার পাশাপাশি সময় করে লাইব্রেরিতেও নিয়ে যান। কাছাকাছি লাইব্রেরি না থাকলে বইয়ের দোকানেও নিয়ে যেতে পারেন। নিজে হাতে করে বই নেড়েচেড়ে দেখলে, সেখানেই বসে কিছুটা পড়তে পারলে বই পড়ার নেশা নিজ থেকেই তৈরি হবে।
বই বেছে দিন
ঠিক বয়সে ঠিক বই বেছে না দিলে পড়ার অভ্যাস তৈরি তো হবেই না, বরং বিরক্তি আসতে পারে। কেবল রূপকথা বা ছবি দেওয়া বই নয়, বরং ছোট থেকেই বাস্তব জগতের সঙ্গে একটু একটু করে পরিচয় করান। গদ্য, পদ্য, ছোটদের গল্পসমগ্রের মতো বিভিন্ন সাহিত্যিকের বই একটু একটু করে পড়ানোর অভ্যাস তৈরি করুন। শুরুর দিকে নিজেকেও ওর সঙ্গে পড়তে হবে।
যে সময়টায় সন্তান নিজে পড়তে পারবে না, তখন মা-বাবাকেই গল্পগুলো পড়ে শোনাতে হবে। শুধু পড়ে যাওয়া নয়, বলার মধ্যে খানিকটা অভিনয়ও থাকতে হবে। গল্পের চরিত্রগুলো বাস্তবসম্মতভাবে ফুটিয়ে তুলতে হবে। তবেই গল্প শোনার ও নিজে পড়ার আগ্রহ তৈরি হবে।
সূত্র: কালবেলা