আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠনের কোনো সদস্য বা প্রশ্রয়দাতাকে গ্রেফতার করে বিচার প্রক্রিয়া শুরুর সময় খুবই সাবধানতা অবলম্বন করার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেছে আমস্টারডমের (নেদারল্যান্ডস) গবেষণা সংস্থা ইউরোপিয়ান ফাউন্ডেশন ফর সাউথ এশিয়ান স্টাডিজ (ইফসাস)। জঙ্গিবাদী সংগঠন আল-কায়েদা, আইএস ও লস্কর-ই-তৈয়বা দক্ষিণ এশিয়া ও ইউরোপে যে কার্যপ্রণালি মেনে চলছে তার ওপর ২৪ পৃষ্ঠার একটি রিপোর্ট চলতি জানুয়ারিতে প্রকাশ করেছে ইফসাস। রিপোর্টের শিরোনাম : ‘আল-কায়েদা, আইএস অ্যান্ড লস্কর-ই তৈয়বা : মোডাস অপারেন্ডি ইন সাউথ এশিয়া অ্যান্ড ইউরোপ’।
রিপোর্টে সন্ত্রাসী সংগঠনের প্রচার ও প্রসার রুখতে বেশকিছু করণীয় তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়, সন্ত্রাস মামলায় আটক ব্যক্তির বিরুদ্ধে যেসব ব্যবস্থা নেওয়া হয় সেগুলো আন্তর্জাতিক নাগরিক ও মানবাধিকার আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। মামলায় ধৃত ব্যক্তিকে কৌঁসুলি রাখার সুযোগ দিতে হবে, প্রয়োজন হলে তাকে দিতে হবে দোভাষী এবং নিষ্কলুষ বিচারের জন্য যেসব শর্ত রয়েছে সেগুলো পূরণ করতে হবে। নইলে অভিযোগের রাজনৈতিক বৈধতা হারিয়ে যাবে।
ইফসাসের রিপোর্টে লস্কর-ই-তৈয়বা (শুভকর সেনা) জিহাদের মাধ্যমে খেলাফত প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকারে আত্মপ্রকাশ করে। এর প্রতিষ্ঠাতা পাকিস্তানি হাফিজ সাইদ একসময় বলতেন, ‘লস্করের লক্ষ্য হচ্ছে ওয়াশিংটন, তেলআবিব ও নয়াদিল্লিতে ইসলামের ঝান্ডা ওড়ানো।’ আফগান-সোভিয়েত যুদ্ধের সময় এলইটি (লস্কর-ই-তৈয়বা) আফগান মুজাহিদিনের সহায়ক গ্রুপ হিসেবে সক্রিয় ছিল। পরে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই এবং সে দেশের সামরিক সংস্থাপনার মদদে পুষ্ট হয়ে কাশ্মীরে অনুপ্রবেশ করে। এলইটির জঙ্গিরা ১৯৯৬ সালে কাশ্মীরে ১৬ জন হিন্দু হত্যা করে ভারতীয় গোয়েন্দাদের নজর কাড়ে।
ভারতের মুম্বাই, নয়াদিল্লি, নাগপুর, বেনারস শহরে সন্ত্রাসী হামলা চালায়। তারা ২০০৮ সালে মুম্বাই হামলায় একে-৪৭ রাইফেল ব্যবহার করে তাক লাগিয়ে দেয়। আইএসের সঙ্গে সংযোগ থাকায় তারা সহজেই মারাত্মক সব অস্ত্র পেয়ে যায় বলে ইফসাস রিপোর্টে জানা যায়। আইএসের জঙ্গিরা নিষ্ঠুর পন্থায় তাদের আদর্শ প্রতিষ্ঠায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। ইরাকের তেলক্ষেত্রগুলো দখল এবং অপহরণ ও মুক্তি বাণিজ্য করে তারা নিয়মিত বাহিনীর মতো শক্তিধর হয়েছিল। তখন তাদের কৌশল ছিল ‘আঁকড়ে থাকো আর দখলদারি প্রসারিত কর।’
মার খেতে খেতে পিছু হটতে এখন তাদের কৌশল ‘টিকে থাকো আর কাজ কর।’ ধারণা করা হচ্ছে, শক্তির ধার কমে যাওয়ায় আইএস কৌশল পাল্টিয়ে গতানুগতিক সন্ত্রাসবাদের পথ ধরবে। এটা করলে প্রচুর জনবল ও অর্থায়নের দরকার হবে না। আইএসের মতো আল-কায়েদাও হীনবল হয়ে উঠেছে মনে করা হয়। ১৯৮৮ সালে ওসামা বিন লাদেন এ সংগঠন গড়ে তোলেন। আল-কায়েদা সারা বিশ্বকে চমকে দেওয়া ৯/১১-এর ভয়াবহ বিমান হামলা চালায়। ২০১১ সালে লাদেন মারা গেলে তারা সন্ত্রাস দমন অভিযানের ‘বিপদ’ এড়ানোর জন্য নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন করছে।
ইফসাস রিপোর্ট বলছে, লক্ষণীয় বিষয় হলো, অনগ্রসর ধ্যান-ধারণায় পুষ্ট জঙ্গি গ্রুপ তিনটির সক্রিয় সদস্যরা তাদের কৌশলগত সুবিধা অর্জনের জন্য নতুন নতুন উদ্ভাবিত প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। রিপোর্টে বলা হয়, এরা মাঝেমধ্যে নিজেরা আদর্শিক কলহে লিপ্ত হয়। কিন্তু কর্তৃত্ববাদী সরকারগুলো ওদের বিরুদ্ধে আক্রমণ হানলে আবার তারা সংঘবদ্ধ হয়ে যায়। রিপোর্টে বলা হয়, সন্ত্রাসবাদ রুখতে আইন তৈরি ও প্রয়োগের সময় সর্বদা সজাগ থাকতে হবে। অতীতে দেখা গেছে, আইনের অপপ্রয়োগের কারণে সন্ত্রাস নির্মূলের কাজ মন্থর হয়েছে। সন্ত্রাসীকে টার্গেট করবে আইন, শুধু সন্ত্রাসীকেই।