আপনি যখন জিতে যাবেন তখন আপনার চারপাশে সবাই জিতে যাবে। সেই মুখগুলো আপনাকে নিয়ে খুব গর্ব করবে একদিন যে মুখগুলো আপনাকে দেখলে কালো হয়ে যেতো। অনেক অপরিচিত মুখও আপনার কাছে পরিচিত হয়ে যাবে। এমন অনেক জায়গা থেকে আপনার নাম্বারে ফোন আসবে যাদের নামও আপনি শুনেন নাই। আপনি হবেন সবার মধ্যমণি। কিন্তু যদি আপনি হেরে যান, তাহলে শুধু আপনি একাই হারলেন। কেউ আপনার সঙ্গী হবে না। যে আত্মীয় স্বজন এক সময় আপনাকে নিয়ে গর্ব করতো তারা আপনাকে নিয়ে টিজ করবে, তাদের কাছে হবেন আপনি তামাশার পাত্র। আপনি যখন দু:সময়ে থাকবেন তখন আপনার জবান কে বন্ধ রাখুন। হতাশ হবেন না, ভেঙ্গে পড়বেন না। নীরব নিস্তব্ধভাবে প্রস্তুতি নিন উপযুক্ত জবাব দেয়ার জন্য। আর সেই জবাব টা কি জানেন ? শুধু মাত্র একটা সফলতা। আপনার একটা সফলতা আপনার সমস্ত সমালোচকদের মুখ বন্ধ করে দেবে। তাদের জন্য উপযুক্ত জবাব হয়ে যাবে। তাদের মুখে সুপারগ্লুর মতো আঠা লাগিয়ে দিবে। এবং এটা আপনার দ্বারা খুবই সম্ভব। কিন্তু আমাদের সমস্যা হচ্ছে আমরা সবাই জান্নাতে যেতে চাই কিন্তু কেউ মরতে চাই না। কিন্তু সেটাতো অসম্ভব। আর এই অসম্ভব কাজটাকে সম্ভব করার জন্য আপনার জীবন থেকে চারটা “P’ কে বাদ দিন আর ছয়টা টা “P” কে জীবনের সাথে যোগ করুন। যে চারটা P কে জীবন থেকে বাদ দিবেন:—– প্রথম P :Procrastination মানে হলো কাল ক্ষেপণ, আজ নয় কাল, কাল নয় পরশু এভাবে শুধু নিজেকে পিছিয়ে। আপনাকে ডুবিয়ে দেয়ার জন্য শয়তান আর প্রবৃত্তির সবচেয়ে বড় হাতিয়ার এই একটা P ই যথেষ্ট। আপনি ভাবছেন বিকাল থেকে শুরু করবেন, কিংবা আগামীকাল থেকে শুরু করবেন। মনে রাখবেন সেই বিকাল কিংবা আগামীকাল আপনার জীবনে আর কখনো আসবে না। সেটা শুধু “আগামী” বলেই থেকে যাবে। দ্বিতীয় P :-Phobia মানে ভয়। অনেক কিছুর ভয় হতে পারে যেমন নিজের অযোগ্যতার ভয়, নিজের অক্ষমতার ভয়, মানুষের সমালোচনার ভয়…. আরো কত কি। নিজের যোগ্যতা আর সক্ষমতার ব্যাপারে যদি আপনার ভয় হয়, তাহলে আপনার জন্য বলছি, আপনি কি জানেন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কোরআনে দুই প্রসিদ্ধ ফল আর দুইটা পবিত্র এবং নিরাপদ নগরীর কসম খেয়ে বলেছেন ” আমি মানুষ কে অতি উত্তম গঠনে সৃষ্টি করেছি ” এই উত্তম গঠনের মধ্যে একটা মানুষের যত ধরণের গুনাবলী দরকার যেমন তার যোগ্যতা, সক্ষমতা, মেধা , শক্তি, সাহস, বীরত্ব সব গুলো আল্লাহ দিয়ে দিয়ছেন। অর্থাৎ আপনার মধ্যে অনেক যোগ্যতা আছে যা আপনি জানেন না। কিংবা কখনো আপনি জানার চেষ্টাও করেন নাই। তাই আপনার দায়িত্ব হলো আপনি নিজেকে নিজের মধ্য থেকে আবিষ্কার করুন। আপনি যোগ্য বলেই আপনি এসএসসি, এইচ এসসি, অনার্স, মাস্টার্স সব পাশ করছেন। সুতরাং আপনি এই কথা বলবেন না যে চাকরিটা আমার দরকার, কারণ এই কথার দ্বারা আপনার একটা অসহায়ত্ব বুঝায় বরং আপনি বলুন এই চাকরিটা আমার জন্যই, আমি চাকরিটা ডিজার্ভ করি। আমাকেই সেখানে যেতে হবে। আমিই এটার উপযুক্ত ব্যক্তি। আর সমালোচনার ভয়? এদের সমালোচনা কানে নিয়ে এদের কে উপরের শ্রেণীতে তুলবেন না । ছোটলোক গুলোকে ছোটলোকের শ্রেনীতে থাকতে দিন। এদেরকে ভালোও বাসবেন না আবার ঘৃণাও করবেন না। এদেরকে শুধু উপেক্ষা করুন। আপনার আপন লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যান। তৃতীয় P :- Pessimistic বা হতাশাগ্রস্থ। এই P টাকেও আপনার জীবন থেকে দূর করতে হবে। অবস্থার যতই অবনতি হোক না কেন, যেকোন প্রতিকূল পরিস্থিতিই আসুক না কেন, কখনোই হতাশ হবেন না। মনে রাখবেন এই দুর্যোগপূর্ণ পৃথিবীর কোন কিছুই চিরস্থায়ী নয়। এমন কি আমাদের সমস্যা গুলোও। সব সময় নিজেকে আশা ও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি আবদ্ধ রাখুন। ভাবুন আমার অবস্থা যেমন তার চেয়েও আরো অধিক খারাপ হতে পারতো। এখনতো অনেক ভালো আছি। খুব শীঘ্রই আল্লাহ আমার দু:সময় দূর করে দেবেন। আর আল্লাহ বান্দার আশা অনুযায়ী তার ব্যাপারে ফায়সালা দেয়। নিজেকে সব সময় বলুন আমি হেরে যাবার পাত্র নই। আমি হেরে যাবো বলে স্বপ্ন দেখে নি। আমি ক্লান্ত কিন্তু আমি পরাজিত নই। আমাকে আমার গন্তব্যে যেতেই হবে। আমি থেমে যাওয়ার পাত্র নই। আমি লক্ষ্যে অবশ্যই পৌঁছাবো। চতুর্থ P : Parasite মানে পরজীবী। এই P টাকেও দূর করতে হবে। কারো কাছে কোনভাবেই, না মানসিকভাবে, না আর্থসামাজিকভাবে কখনো পরজীবী হবেন না। এক মাত্র আল্লাহ ছাড়া কোন ব্যপারে কারো কাছে নির্ভরশীল হবেন না। নিজের ব্যক্তি সত্ত্বার সাথে কাউকে মিশ্রিত করবেন না। যে ছয়টা “P” আপনার জীবনের সাথে যোগ করবেন:- প্রথম P:-Positivity অর্থাৎ ইতিবাচক মনোভাব। আর এটার সংক্ষিপ্ত পদ্ধতি হলো ” না এর সাথে না যোগ করুন, আর হ্যাঁ এর সাথে হ্যাঁ “। কেউ যদি বলে তোমাকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না, সাথে সাথে আপনিও বলে দিন “তোমার কথা ঠিক না”, কেউ যদি বলে চেষ্টা করো পারবে, আপনিও বলুন ইনশাআল্লাহ, হ্যাঁ আমি পারবো । সব কিছু ইতিবাচকভাবে চিন্তা করুন। নিজেকে ও নিজের যোগ্যতাকে রেস্পেক্ট করুন। জায়গা মতো সেগুলো কে প্রদর্শন করুন কিন্তু অহংকার করবেন না। যোগ্যতা প্রদর্শন এক জিনিস আর অহংকার আরেক জিনিস। আল্লাহ আপনাকে যোগ্যতা দিয়েছে সেটা তার পক্ষ থেকে আপনার উপর নিয়ামত। সেটাকে ব্যবহার করার জন্যই দিয়েছে, সিন্দুকে তালা দিয়ে রাখার জন্য নয়। এতে নেতিবাচক মানষিকতার মানুষ গুলো আপনাকে গালি দিয়ে বলবে “শালা তো নিজের ঢোল নিজে পিটায় ” আপনি বলে দিন আমার ঢোল আছে দেখেই আমি পিাটাতে পারি, পারলে আমার মতো একটা ঢোল অর্জন করে তুমিও পিটানো শুরু করো। নিজের আকাঙ্ক্ষা আর স্বপ্ন গুলো কে সন্তানের মতো লালন পালন করুন। এই গুলোই আপনার চুড়ান্ত অর্জনের প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠবে। দ্বিতীয় P :- Passion বা অর্জন করার তীব্র আকাঙ্ক্ষা থাকতে হবে। এমন না যে পাইলে পাইলাম, না পাইলে নাই। এরকম মানসিকতা নিয়ে কখনো কোন কাজে সফল হতে পারবেন না। মানসিকতা এই রকম হওয়া চাই যে, আমার একটাই লক্ষ্য যে আমাকে ক্যাডার হতেই হবে, আমাকে জব পেতেই হবে, আমাকে সফল বিজনেসম্যান হতেই হবে — দ্বিতীয় আর কোন অপশন নাই, দেখেবেন এই দৃড় প্রতিজ্ঞাই আপনাকে গন্তব্যে নিয়ে যাবে। তৃতীয় P :- Plan বা পরিকল্পনা যার মানে হলো আপনার চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা চিন্তাগুলো এক ফ্রেমে আবদ্ধ করা। আর এর মূল উদ্দ্যেশ্যে হলো গুরুত্ব অনুযায়ী কাজকে প্রধান্য দেয়া। আমার কাজ তো অনেক আছে কিন্তু এই মুহুর্তে কোন কাজটা আমার জন্য সবচেয়ে জরুরী সেটাকে নির্ধারণ করে আগে করা। এভাবে ক্রমান্বয়ে এগিয়ে যাওয়া। প্লান ছাড়া কোন কাজেই সফলতা আশা করা যায় না। দিন শেষে সবকিছু পন্ডশ্রম মনে হবে। তাই প্লান হচ্ছে সফলতার মৌলিক ভিত্তি। চতুর্থ P :- Perseverance মানে কঠোর অধ্যবসায় সাথে অনুশীলন। পরিশ্রম আর অনুশীলন এই গুলো হচ্ছে এক ধরণের সুমিষ্ট পানীয়ের মতো যে এটা যত বেশী পান করবে তার জীবন ততবেশী সুমিষ্ট হবে। আপনি নিরবচ্ছিন্ন ভাবে অনুশীলন চালিয়ে যান। একবার ব্যর্থ হয়েছেন বলে থেমে যাবেন না , আবার শুরু করুন। কাজের মধ্যে লেগে থাকুন। কাজ করতে থাকুন ততক্ষণ পর্যন্ত যতক্ষণ না আপনি আপনার গন্তব্যে না পৌঁছিয়েছেন। অবিরামভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যান। পঞ্চম P :- Patient বা ধৈর্যশীল। কাজ করতে করতে অনেক সময় বিরুক্তি চলে আসবে, কিংবা হতাশা আসতে পারে কিন্তু এই মুহুর্তে ধৈর্য্যের সাথে সব কিছু মোকাবেলা করতে হবে। মনে রাখবেন একটা রঙধনু দেখতে হলেও বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করতে হয়, জোছনার আলো উপভোগ করতে হলেও একটা রাতের জন্য অপেক্ষা করতে হয় আর আপনি এমন কিছু অর্জন করবেন যার মাধ্যমে আপনি সারাটা জীবন সুখে শান্তিতে কাটাবেন, তার জন্য কিছু অপেক্ষা করবেন না তা কি করে হয়। তাই অস্থিরও হওয়া যাবে না অলসও হওয়া যাবে না। ধৈর্য্যের সাথে সব মোকাবেলা করতে হবে। আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন। ষষ্ঠ P :-Prayer বা দোয়া। সফলতা হলো ৯৯% পরিশ্রম আর ১% দোয়ার যোগফল। তবে মাঝে মাঝে এই ১% যদি ঠিক না থাকে তাহলে বাকী ৯৯% ও অর্থহীন হয়ে পড়ে। অনেক আগে টিভিতে একটা গাড়ি বিক্রির বিজ্ঞাপন দিত এইরকম গাড়িটা ৯৯% ভালো এর মধ্যে এ.সি, GPS সিস্টেম সেট করা আছে, অতিরিক্ত ব্যাটারি সহ আরো অনেক কিছু। তবে ১% সমস্যা আছে আর সেটা হলো গাড়িটার ব্রেক গুলো নষ্ট। তো এই গাড়িটার ৯৯% যেরকমভাবে ১% এর জন্য অর্থহীন হয়ে গিয়েছে, ঠিক একইভাবে আমাদের ৯৯% পরিকল্পনা, পরিশ্রম অর্থহীন হয়ে যাবে যদি আমাদের ১% দোয়া ঠিক ভাবে না হয়, আল্লাহ যদি কবুল না করেন। তাই আপনি যে ধর্মেরই হোন না কেন- হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, ইয়াহুদি, ক্যাথলিক বা মুসলিম, আপনার পবিত্র ধর্র্মীয় রীতিমতো আন্তরিকতার আপনার সৃষ্টি কর্তার কাছে আপনার আকাঙ্ক্ষার জন্য প্রার্থনা করুন। যারা মুসলিম আছেন তারা অবশ্যই পাঁচ ওয়াক্ত নামায জামাতের সাথে পড়বেন। কোন অবস্থাতেই এটা ছাড়বেন না। জীবন অনেক সহজ হয়ে যাবে। পারলে শেষ রাতে তাহাজ্জুদ পড়ুন। সে সময় দুয়া কবুল হয়। আল্লাহর কাছে আকুতি মিনতি করে বলুন ” হে আল্লাহ তুমি আমাকে মানুষের কাছে সমালোচনা বা তামাশার পাত্র বানিওনা। আমাকে যে যোগ্যতা দিয়েছো তা কাজের লাগানোর তৌফিক দাও। কারো দুয়ারে লবিং এর জন্য দ্বারস্থ করিও না। আমাকে নিরাপদে আমার সফলতার গন্তব্যে পৌঁছে দাও। এইভাবে দোয়া করেন। মনে রাখবেন একজন ভিক্ষুক যদি বার বার আমাদের দরজায় এসে কড়া নাড়ে তাহলে এক পর্যায়ে বিরক্ত হয়ে হলেও তাকে কিছু দান করে বিদায় করে দেই। আমরা মানুষ হয়ে যদি এইরকম টা করতে পারি তাহলে আমাদের রব আল্লাহর দরজায় যদি আমরা বার বার কড়া নাড়ি, তিনি অবশ্যই আমাদেরকে খালি হাতে ফিরিয়ে দেবেন না। আমিন(মেহেরপুর প্রতিদিনের প্রকাশক ও প্রেট্রো বাংলার পরিচালনা পর্ষদের পরিচালক)