মেহেরপুর পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের উপরিচালক মো: শাহিন হাসানের বিরুদ্ধে অনিয়ম, স্বেচ্ছচারিতা, কর্মচারীদের বদলীর হুমকী, বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদনে (এসিআর) স্বাক্ষর করাতে গিয়ে হয়রানী ও অবৈধভাবে অর্থ আদায়, নারী কেলেংকারীসহ ৫টি অভিযোগে তার বদলির দাবি করেছেন অধিনস্ত কর্মচারীরা।
এনিয়ে গত সোমবার (৪ জুলাই) পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে মেহেরপুরে কর্মরত ৪২ জন কর্মচারীর স্বাক্ষরিত অভিযোগপত্রটি পাঠানো হয়েছে।
লিখিত অভিযোগপত্রে তাদের অভিযোগ, উপপরিচালক শাহিন হাসান সরকারিভাবে বেতনের সাথে বাসাভাড়া উত্তোলন করলেও সে অফিসের সাথে একটি ছোট কক্ষকে তার বাসা হিসেবে ব্যবহার করেন। অফিসের কর্মচারীদের বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদনে স্বাক্ষর করতে সে প্রতি জনের কাছ থেকে ১ হাজার টাকা উৎকোচ নিয়ে থাকেন। টাকা না দিলে করা হয় নানা ধরনের হয়রানি। এছাড়া বদলীসহ নানা হুমকীও দিয়ে থাকেন তিনি। সাম্প্রতিক সময়ে গাংনী উপজেলার সাহারবাটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ক্লিনিকের উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানের নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক শাহিনুজ্জামানের কাছ থেকে ১ লক্ষ টাকা আদায় করেন উপপরিচালক। এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে খরচ হয়েছে মাত্র ১০ হাজার টাকা। অথচ, সে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে আদায় করা এক লক্ষ টাকা পকেটস্থ করে ১০ হাজার টাকা জোর চাপ প্রয়োগ করে আদায় করেন দুই জন গরীব কর্মচারীর কাছ থেকে। এনিয়ে কর্মচারীদের মাঝে শুরু হয়েছে চাপা ক্ষোভ।
তারা অভিযোগে আরো জানান, উপপরিচালক শাহিন হাসান অফিসের একটি কক্ষে বাস করেন। প্রতিদিনই কোনো না কোনো নারী কর্মচারীর কাছে মোবাইল ফোনে তার বাসাতে দাওয়াত নেন। বাসাতে খাওয়ার দাওয়াত না দিলে ওই নারী কর্মচারীকে হুমকীসহ নানাভাবেই হয়রানী করে থাকেন এই কর্মকর্তা।
সরেজমিনে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে উপপরিচালকের কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, মুজিবনগর অফিসের কর্মচারী নারগীছ খাতুনকে উপপরিচালকের কার্যালয়ে সংযুক্তি করা হয়েছে। এখানে তার কাপড় চোপড় ধোঁয়া, রুম পরিস্কার করাসহ রান্নার কাজ করিয়ে নেন তিনি। তিনি উপপপরিচালক ও উচ্চমান সহকারীর জন্য রান্না করছিলেন। এ বিষয়ে নারগীছ খাতুন বলেন, স্যারের হুকুমে এগুলো করতে হয়।
অফিসের একটি কক্ষে তিনি বাস করে। আবার তিনি ঘর ভাড়া বাবদ বেতন থেকে টাকা কাটেন না। এ নিয়ে কর্মচারীদের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে।
গত রবিবার সদর উপজেলা অফিসের কর্মচারী মাহমুদা আক্তার বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদনে স্বাক্ষর করতে গিয়ে কম্পিউটার অপারেটন সারজিনা খাতুনের মাধ্যমে এক হাজার টাকা ঘুষঁ দেন তাকে। গতকাল সোমবার উপ-পরিচালকের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাঠানোর ফলে গতকালকেই সেই ঘুষেঁর টাকা ফেরত দিয়েছেন বলে তিনি জানান।
এব্যাপারে উপপরিচালক শাহিন হাসানের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে সব সত্য নয়। মাঝে মধ্যে অফিসের লোকজনের জন্যই অফিসে রান্না করতে হয়। তাই নারগীছ খাতুনকে জেলা অফিসে সংযুক্ত রাখা হয়েছে। এছাড়া আমি অফিসের কক্ষ বাসা হিসেবে ব্যবহার করিনি। মাসিক দুই হাজার টাকায় ভাড়া থাকি। এছাড়া নারী কর্মচারীদের বাসাতে জোর করে দাওয়াত নেয়া, তাদের হয়রানী করা, বদলীর হুমকী দেওয়া অস্বীকার করেন তিনি।
তবে অফিস ভাড়া চুক্তিপত্রে দেখা গেছে, ১ জুলাই ২০২১ সালে ভাড়া নেওয়া হয়েছে। তবে সেখানে আলাদা কোনো কক্ষ ২ হাজার টাকা ভাড়ায় দেওয়া হয়নি।
উপ-পরিচালক শাহিন হাসান আরো বলেন, এখন থেকে এই অফিসে আর কোনো দুর্নীতি হবে না বলেও শপথ নিয়েছে। স্টাফদের নিয়ে গতকালকেই সোমবার (৪ জুলাই) একটি মিটিং করা হয়েছে। সেই মিটিং এ জেলার সব কর্মকর্তা কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।