সম্মেলনের ১৩ মাস পর আগামী তিন বছরের (২০২২-২০২৫ সালের) জন্য মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের ৭৩ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন করা হয়েছে।
গত শুক্রবার (২৩ জুন) বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতির অনুমোদন সাপেক্ষে সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের স্বাক্ষরিত একটি পত্রে আগামী তিন বছরের জন্য মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের ৭৩ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের একাধীক প্রভাবশালী নেতার মাধ্যমে এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। তবে অনুমোদিত কমিটি এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত প্রকাশ করা হয়নি। তবে জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, ইন্টারন্যাল কারণে কমিটি প্রকাশ করা যাচ্ছে না। সবাই যখন পাবেন তখন আপনারাও (সাংবাদিকরা) পাবেন।
এর আগে গত ২০২২ সালের ১৬ মে মেহেরপুর সামসুজ্জোহা পার্কে মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনকে সভাপতি, এমএ খালেককে সাধারণ সম্পাদক, আব্দুস সামাদ বাবলু বিশ্বাস, জিয়া উদ্দীন বিশ্বাস, আব্দুল মান্নান ও অ্যাড. মিয়াজান আলী, অ্যাড. ইয়ারুল ইসলামকে সহসভাপতি ও অ্যাড. ইব্রাহীম শাহীনকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক এমপি জয়নাল আবেদীনকে জাতীয় পরিষদ সদস্য ঘোষণা করা হয়।
দীর্ঘ ১৩ মাস অপেক্ষার পর মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদিত হওয়ায় উচ্ছ্বসিত ও আনন্দিত জেলার নেতাকর্মীরা।
কয়েকটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে নতুন অনুমোদিত পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে যারা রয়েছেন বলে জানা গেছে। তারা হলেন সভাপতি পদে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন এমপি, সহ-সভাপতি পদ পেয়েছেন অ্যাড. মিয়াজান আলী, আব্দুস সামাদ বাবলু বিশ্বাস, জিয়া উদ্দীন বিশ্বাস, অ্যাডভোকেট ইয়ারুল ইসলাম, আব্দুল মান্নান, সিরাজুল ইসলাম, শহিদুল ইসলাম বিশ্বাস, শহিদুল ইসলাম শাহ, আবুল কাশেম মাষ্টার, জহুরুল ইসলাম।
যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. ইব্রাহিম শাহীন, অ্যাড. একেএম শফিকুল আলম, রেজাউল ইসলাম মাষ্টার, কোষাধ্যক্ষ সিরাজুল ইসলাম, আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাড. পল্লব ভট্টচার্য, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক অ্যাড. শহীদুল হক, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক আবুল খায়ের মুন্সি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার জিয়াউর রহমান মুকুল, সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাড. খোন্দকার আব্দুল মতিন, আশরাফুল ইসলাম স্বপন, যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক শাশ্বত নিপ্পন, শিল্প ও বানিজ্য বিষয়ক সম্পাদক আরিফুল এনাম বকুল, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক এএসএম নাজমুল হক সাগর, শিক্ষা ও মানব সম্পদ বিষয়ক সম্পাদক এম এ এস ইমন, দফতর সম্পাদক মকলেছুর রহমান, উপ-দফতর সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া বুলু, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক শামীম আরা হিরা, প্রচার সম্পাদক আকবর জালাল, উপ-প্রচার সম্পাদক মিজানুর রহমান হিরন, সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক আসলাম শিহির, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক আব্দুর রব। এছাড়াও সদস্য হিসেবে কমিটিতে রয়েছে গাংনী আসনের এমপি মোহাম্মদ শাহিদুজ্জামান খোকন, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মহা: আব্দুস সালাম, প্রফেসর আব্দুল মান্নান (সাবেক এমপি), জয়নাল আবেদীন (সাবেক এমপি), ইকবাল হোসেন বুলবুল, খ ম ইমতিয়াজ হারুন জুয়েল, মেহেরপুর পৌর মেয়র মাহাফুজুর রহমান রিটন, বোরহান উদ্দীন আহম্মেদ চুন্নু, মোখলেছুর রহমান মুকুল, মোমিনুল ইসলাম, আহম্মেদ আলী, গোলাম মোস্তফা, রুৎ শোভা মন্ডল, গোলাম মোস্তফা, লুৎফুন্নেছা লতা, সৈয়দা মোনালিসা হোসেন, লাভলী ইয়াসমীন, ইদ্রিস আলী মাস্টার, আবুল কাশেম বাবলু, শাহ জামান, কামরুল হাসান চান্দু, আব্দুর রাজ্জাক, গোলাম সাকলায়েন সেপু, সাজেদুল ইসলাম। তবে বাকিদের নাম এখনও জানা সম্ভব হয়নি।
ছিটকে গেলেন হেবিওয়েট নেতারা
জেলা আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকেও বিভিন্ন নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি থেকে যেসব হেবিওয়েট নেতা ছিটকে গেলেন তাদের মধ্যে রয়েছেন, মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও মেহেরপুর-২ আসনের একাধিকবার নির্বাচিত সাবেক এমপি মকবুল হোসেন, মুজিবনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও মহাজনপুর ইউনিয়ন পরিষদের একাধিকবার নির্বাচিত চেয়ারম্যান আমাম হোসেন মিলু, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগাঠনিক সম্পাদক ও বাগোয়ান ইউনিয়ন পরিষদের একাধিকবার নির্বাচিত চেয়ারম্যান আয়ূব হোসেন, আরেক সাংগাঠনিক সম্পাদক ও আমদহ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আনারুল ইসলাম, মেহেরপুর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব গোলাম রসুল, জেলা আওয়ামী লীগের দূর্যোগ ও ত্রান সম্পাদক মিজানুর রহমান রানা, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও তেঁতুলবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের একাধিকবার নির্বাচিত চেয়ারম্যান নাজমুল হুদা বিশ্বাস পচু।
এ ব্যাপারে মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ খালেক বলেন, যারা পদ পদবী থেকে ছিটকে গেছেন তাদের ব্যাপারে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বিভিন্ন নির্বাচনে তারা দলের বাইরে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় দল তাদের মাফ করলেও আপাতত পদ পদবী থেকে বঞ্চিত করেছে। আমরা তাদের নামগুলো পাঠিয়েছিলাম। হয়তো বা কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কাছে এসব বিদ্রোহী নেতা কর্মীর বিরুদ্ধে বলায় তাদের ব্যাপারে সংশোধনী এনে এই শাস্তির আওতায় রেখেছে।
নতুন মুখ যারা
মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে নতুন মুখ হিসেবে যারা কমিটি স্থান পেয়েছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন, শিক্ষা ও মানব সম্পদ সম্পাদক হিসেবে সাবেক ছাত্র নেতা ও কেন্দ্রীয় প্রচার প্রকাশনা উপকমিটির সদস্য এমএ এস ইমন শিক্ষা ও মানব সম্পদ বিষয়ক সম্পাদক, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক এএসএম নাজমুল হক সাগর, সাংগাঠনিক সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম স্বপন, সদস্য পদে, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী পত্নি সৈয়দা মোনালিসা, মেহেরপুর জেলা যুবলীগের আহবায়ক ও মেহেরপুর পৌরসভার মেয়র মাহফুজুর রহমান রিটন, মুজিবনগর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান কামরুল হাসান চান্দু, মিজানুর রহমান হিরন, জালাল উদ্দীন, আব্দুর রাজ্জাক ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ খালেকের ভাই আবুল খায়ের। জানা গেছে, মেহেরপুর মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের যেসব নতুন মুখ যুক্ত হয়েছেন তারা সবাই আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন। এসব নেতাকর্মী তাদের রাজনৈতিক দক্ষতায় আওয়ামী লীগের মুল দলে যায়গা করে নিয়েছেন। এসব নেতা কর্মী স্থান পাওয়ায় আগামীতে আওয়ামী লীগ মেহেরপুর জেলায় একটি শক্তিশালী সংগঠণ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবে।
সভাপতির পরিবারের ৫জনসহ ১০ জনই আত্মীয়
মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের পরিবারের ৫ জনসহ নিকট আত্মীয় ১০ জন মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে স্থান পেয়েছেন।
তারা হলেন-সভাপতি ফরহাদ হোসেন এমপি, সভাপতির দুলাভাই আব্দুস সামাদ বাবলু বিশ্বাস সহসভাপতি, তার বোন শামীম আরা হিরা মহিলা বিষয়ক সম্পাদক, সভাপতির স্ত্রী সৈয়দা মোনালিসা, ভাই ইকবাল হোসেন বুলবুল, চাচা বোরহান উদ্দীন আহম্মেদ চুন্নু, চাচাত ভাই মোমিনুল ইসলাম, চাচাত ভাই আকবর জালাল ও বিয়াই (বোনের ভাসুর) সিরাজুল ইসলাম ও মামা সম্পর্কের রেজাউল হক মাস্টার বিভিন্ন পদ পেয়েছেন। দলের একটি বিশ্বস্থ সূত্র এ দাবী করেছেন কয়েকজন নেতা।
এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন এমপির সাথে যোগাযোগ করার জন্য ফোন করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ খালেক বলেন, ১০ জন নিকট আত্মীয় জেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে নেই। প্রতিমন্ত্রীর যেসব আত্মীয় স্বজন এই কমিটিতে ঠাই পেয়েছেন, তারা সবাই সংগঠনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন। এক্ষেত্রে নতুন করে কাউকে কোনো পদ পদবীতে রাখা হয়নি। তারা তাদের নিজের যোগ্যতা বলেই বিভিন্ন পদ-পদবীতে ঠাই পেয়েছেন।