মুজিবনগরের সোনাপুর, নাজিরাকোনা, বল্লবপুর, ভবেরপাড়া, কেদারগঞ্জ ও মানিকনগর হয়ে ভৈরবে প্রবেশ করেছে সরস্বতী খাল। এর মধ্যে সোনাপুর গ্রামের ভিতর দিয়ে ভারত পর্যন্ত প্রায় দুই কিলো মিটার।
উচ্চ আদালতে মামলা চলমান থাকায় ওই অংশটুকু খনন করতে বাকি রয়েছে। আর সেই সুযোগে সরকারি ওই খাল গ্রামের কিছু মাতবর শাহিন আলম নামের এক ব্যক্তির কাছে অবৈধভাবে অলিখিত লিজ দিয়েছেন এক বছরের জন্য।
জেলা ও উপজেলা প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে সরকারি খাল লিজ দেওয়ার কোন বৈধতা নেই। প্রশাসনের চোখকে ফাঁকি দিয়েই এ লিজ দেওয়া হয়েছে।
সোনাপুর মাঝপাড়া নামক এক জায়গায় ঐ গ্রামের হাবিবুর রহমান নামের এক ব্যাক্তির সাথে সরস্বতী খালের জমি নিয়ে উচ্চ আদালতে মামলা বিচারাধীন। এ কারনে খালের কিছু অংশ খনন করা স্থগিত করেছে উপজেলা প্রশাসন। মামলা চলা জমি খনন না করার ফলে খালের মাঝ বরাবর একটি বাধের সৃষ্টি হয়েছে। এতে পানি চলাচল করতে পারেনা। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সোনাপুর গ্রামের কিছু মাতবরের যোগসাজসে ঐ দুই কিলোমিটার খাল ৩ লাখ ৬৫ হাজার টাকায় অবৈধভাবে ইজারা দিয়েছে বলে জানা গেছে। সোনাপুর গ্রামের রমজান আলীর ছেলে শাহিন আলম স্থানীয় নেতাদের কাছে ৩ লাখ ৬৫ হাজার টাকা দিয়ে খালটি দখলে রেখেছে।
মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার সরস্বতী খাল। পার্শ¦বর্তি দেশ ভারত থেকে বাংলাদেশের মুজিবনগর উপজেলায় প্রবেশ করেছে। উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম বেয়ে ভৈরবে পতিত হয়েছে। কালের বিবর্তনে নাব্যতা হারানো খালটি ২০১৯ সালে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে পুন:খনন এর উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০১৯ সালের ৪ এপ্রিল জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন পুন:খননের উদ্বোধন করেন। খালটি ৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা ব্যায়ে প্রায় ১০ কিলোমিটার খনন করা হয়। এতে খালটি পুর্ণ যৌবন ফিরে পায়। বেড়ে যায় তার বয়ে চলার গতি।
শাহিন বিষয়টি স্বীকার করে জানান, আমি কিনেছি। টাকাটা গ্রামের মসজিদ উন্নয়নের কাজে ব্যাবহার হচ্ছে। সরকারি খাল কিভাবে কিনলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, গ্রামের মাতবরেরা আমাকে কেনার সাহস দিয়েছে। এছাড়াও মসজিদ কমিটির সদস্যরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
সরস্বতী খাল বিক্রির বিষয়ে সরেজমিনে গেলে সোনাপুর মাঝপাড়া গ্রামের আনারুল জানান, ইতিমধ্যে ৩ ব্যারেল মাছ ছাড়া হয়েছে। এটা সরকারিভাবে না ব্যাক্তিগত ভাবে মাছ অবমুক্ত করা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন ব্যাক্তিগত ভাবে ছাড়া হয়েছে। এসময় আব্বাস আলী নামের এক কথিত নেতা সাংবাদিকদের উপর চড়াও হয়। সেই সাথে খাল বিক্রির সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য সাংবাদিকদের হুমকি দেন।
সোনাপুর মাঝ পাড়া মসজিদ কমিটির ক্যাশিয়ার ওমর আলী জানান, আমরা গ্রামের কয়েকজন মিলে সিদ্ধান্ত নিয়ে খালটি বিক্রি করেছি। এই টাকা মসজিদ উন্নয়নের জন্য ব্যাবহার হচ্ছে।
সোনাপুর মাঝপাড়ার মসজিদ কমিটির উপদেষ্টা নিয়াজ উদ্দিন জানান, সম্প্রতি মসজিদটি নির্মান বাবদ বেশ কিছু টাকা খরচ হয়েছে। প্রতিবছরই ঐ খাল থেকে গ্রামবাসী কিছু অর্থ উপার্জন করে। এ বছরও কিছু টাকার বিনিময়ে খাল একজনের দায়িত্বে দেওয়া হয়। যে টাকা গুলো মসজিদ ডেকোরেশন ও ইমাম সাহেবের বেতন বাবদ খরচ করা হচ্ছে।
তবে অবৈধভাবে উপার্জন করা অর্থ দিয়ে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন করা নিয়ে অনেকেই বিষয়টি বাকা চোখে দেখছে। সামাজিক দৃষ্টিকোন থেকেও বিষয়টি বেশ অসম্মানের বলছেন অনেকেই।
স্থানীয় ইউপি সদস্য সোহরাব হোসেন জানান, এ বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে গেলে তিনি আমাকে খোঁজ নিতে বলেন। আমি খোঁজ নিয়ে দেখেছি বিষয়টি সত্য। এজন্য গ্রামের কিছু লোকজন বৈধ করার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উসমানি গনির কাছে যায়। কিন্তু স্যার এ বিষয়ে তাদের উপর চাপ সৃষ্টি করেন। কিভাবে সরকারি খাল বিক্রি করলেন এমন প্রশ্ন করেন। তারপরি গ্রামের লোকজন ফিরে আসে। এখন সে অবস্থাতেই আছে।
মুজিবনগরে নবনিযুক্ত উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুজন সরকার বলেন, খালের বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে সরকারি খাল কোনভাবেই গ্রামের লোকজন কাউকে ইজারা দিতে পারবে না। যদি কেউ টাকার বিনিময়ে সরকারি সম্মত্তি অবৈধভাবে ইজারা নেয় তবে এর সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ মুনসুর আলম খান এ বিষয়ে বলেন, সরস্বতি খালের বিষয়ে কিছু জমি নিয়ে হাই কোর্টে মামলা চলছে। আমরা বিষয়টি নিস্পত্তি করার জন্য চেষ্টা করছি। এছাড়াও ইজারার বিষয়টি আমরা দেখবো। ছোট খাটো যে সমস্যা গুলো আছে সেগুলো দ্রুত সমাধান করার চেষ্টা করবো।
মেপ্র/এমএফআর