করোনাভাইরাস আক্রান্তের উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুর মিছিল ক্রমেই দীর্ঘ হচ্ছে। সর্দি, কাশি, জ্বর, শ্বাসকষ্টে প্রতিদিন প্রাণ হারাচ্ছেন অনেক মানুষ। গত ৪৮ ঘণ্টায় এমন অন্তত ১৫ জনের মৃত্যুর খবর সামনে এসেছে। এর আগের দিন এ সংখ্যা ছিল ১৮ জন। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে দেখা গেছে, করোনার উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায়, বাড়িতে বা প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে থেকে মারা যাওয়া মানুষের সংখ্যা করোনায় মৃত্যুর চেয়ে বেশি। অনেক ক্ষেত্রে এসব মরদেহ দাফনে এলাকাবাসীর বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে স্বজনদের।
এদিকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন্স সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের হিসাব থেকে জানা যায়, চলতি বছরের মার্চে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ১১ হাজার ৯৩০ জন, যা ২০১৯ সালে ছিল মাত্র ৮২০ জন, ২০১৮ সালে ১ হাজার ১০ জন।
নরসিংদীতে সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে গত বৃহস্পতিবার সুলতানা বেগম (৩৫) নামের এক গার্মেন্ট শ্রমিকের মৃত্যু হলে তাকে দাফন নিয়ে বাধার মুখে পড়েন স্বজনরা। স্থানীয়দের বাধায় স্বামীর বাড়ি কাজিরকান্দি গ্রামে দাফন করতে না পারায় মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় বাবার বাড়ি আলোকবালীতে। সেখানেও বাধার মুখে পড়তে হয়। পরে প্রশাসনের সহায়তায় সকালে মারা যাওয়া সুলতানা বেগমকে বিকালে দাফন করা হয়। করোনা পরীক্ষার জন্য মরদেহের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জে লকডাউনের পর তিনি জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে নরসিংদীতে যান।
ঢাকায় মারা যাওয়া বোনকে গ্রামের বাড়িতে এনে দাফন করার তিন দিনের মাথায় সর্দি, জ্বর ও বুকে ব্যথা নিয়ে লালমনিরহাটে মারা গেছেন পঞ্চাশ বছর বয়স্ক এক ব্যক্তি। গত বৃহস্পতিবার হাতীবান্ধা উপজেলার দক্ষিণ গড্ডিমারী গ্রামে মারা যান তিনি। করোনা পরীক্ষার জন্য তার নমুনা সংগ্রহ করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলায় গত বৃহস্পতিবার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেলোয়ার হোসেন দুলাল (৩২) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। গত ৫ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ থেকে দেলোয়ার হোসেন জ¦র নিয়ে উপজেলার দুমকি গ্রামে নিজ বাড়িতে আসেন। ৭ এপ্রিল দুলালের নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠানো হয়। বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টার দিকে তার নমুনা পরীক্ষায় পজেটিভ আসে। এর আগে দুপুরে তিনি মারা যান। দুলালের মৃত্যুর পর ওই এলাকার অন্তত ৩০টি বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। সিভিল সার্জন ডাক্তার মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, মৃতের পরিবার ও তার সংস্পর্শে আসা ওই এলাকার প্রায় ১৫০ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে।
লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলায় শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া ও জ্বর নিয়ে গতকাল দুই ব্যক্তি মারা গেছেন। তাদের একজনের বয়স ২৬ বছর, অপরজনের ৫৫ বছর। এ ঘটনায় চার বাড়ির আটটি পরিবারকে লকডাউন করেছে প্রশাসন। মৃত দুজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন কি না জানতে তাদের নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় আইইসিডিআর- এ পাঠানো হয়েছে।
কুষ্টিয়ায় করোনা উপসর্গ নিয়ে সদর উপজেলার আশরাফুল ইসলাম (৪৫) ও দৌলতপুরে জিয়ার আলী (২৮) নামের দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। সর্দি, জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে গতকাল বিকেলে নিজ নিজ বাড়িতে তারা মারা যান। করোনা পরীক্ষার জন্য মৃতদের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।
গাজীপুরের শ্রীপুরে বৃহস্পতিবার শ্বাসকষ্টে খোকন মিয়া (৪৫) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। মৃতের নমুনা পরীক্ষার জন্য আইইডিসিআরে পাঠানো হয়েছে।
নাটোরের সিংড়া উপজেলায় বৃহস্পতিবার জ্বর, সর্দি ও গলাব্যথা নিয়ে আরজিনা বেগম (৩৫) নামের এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। করোনা পরীক্ষার জন্য তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। তিনি বগুড়ার মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার রানীখার গ্রামে শ্বশুরবাড়িতে করোনার উপসর্গ নিয়ে এক নারী (৫০) গত বৃহস্পতিবার মারা গেছেন। নারায়ণগঞ্জ থেকে ফেরা ওই নারী কয়েক দিন ধরে জ্বর, সর্দি, কাশিতে ভুগলেও তিনি তা গোপন রেখেছিলেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। করোনা পরীক্ষার জন্য তার নমুনা সংগ্রহ করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার পৌলুঞ্জ গ্রামে নির্দোষ চন্দ্র (২১) নামের এক যুবক করোনা উপসর্গ নিয়ে গত বৃহস্পতিবার মারা গেছেন। আট দিন ধরে জ্বর, সর্দি, কাশিতে আক্রান্ত বগুড়ার একটি খাদ্য কারখানায় কর্মরত নির্দোষ চন্দ্রকে গত বুধবার তার বাড়িতে রেখে যায় কারখানা কর্তৃপক্ষ। পরদিন দুপুরে হাসপাতালে নেওয়ার পথে মৃত্যু হয় তার। ওই যুবকের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।
বরগুনার আমতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা জি এম দেলোয়ার (৭৪) জ্বর নিয়ে গত বৃহস্পতিবার লোচা গ্রামে নিজ বাড়িতে মারা গেছেন। করোনায় আক্রান্ত সন্দেহে তার বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। মৃতের নমুনা পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হয়েছে।
পাবনার সাঁথিয়ায় করোনা উপসর্গ নিয়ে বৃহস্পতিবার ছুম্মা খাতুন (৪৮) নামের এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। সুরক্ষা নিশ্চিত করে সে¦চ্ছাসেবক দল তার দাফন সম্পন্ন করেছে। করোনা পরীক্ষার জন্য তার নমুনা সংগ্রহ করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
করোনা উপসর্গ নিয়ে বৃহস্পতিবার নোয়াখালী থেকে ঢাকায় নেওয়ার পথে এক ইতালি প্রবাসীর মৃত্যু হয়েছে। গত মাসে দেশে আসেন তিনি। তার বাড়ি সোনাইমুড়ির পশ্চিম চাঁদপুর গ্রামে। মৃতের বাড়িটি লকডাউন করেছে প্রশাসন। এ ছাড়া পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।
সূত্র-বাংলাদেশ প্রতিদিন