বুলিং বলতে সাধারণত দুজন ব্যক্তির মধ্যে তর্ক বা কথা কাটাকাটির জেরে একজন ব্যক্তিকে সুনির্দিষ্টভাবে সবার সামনে দোষারোপ বা খারাপ ভাষায় আক্রমণ করা বোঝায়। আবার একজনের ছবি বা ভিডিও বিকৃত করে অনলাইনে তুলে ধরাও বুলিংয়ের মধ্যে পড়ে। ফেসবুক স্ক্রল করতে করতে দেখলেন যে, কেউ নেতিবাচক মন্তব্য করে অন্য আরেকজনকে আঘাত করছে। অথবা আপনার প্রিয় কারও গোপন তথ্য ফাঁস করে হুমকি দিচ্ছে। ইন্টারনেটকেন্দ্রিক এ ধরনরের কর্মকাণ্ডকে সাইবার বুলিং বুলিং বলা যায়।
অনেকেই ফেসবুক, ম্যাসেঞ্জার, টুইটার, হোয়াটসঅ্যাপসহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে তারা সাইবার অপরাধীদের শিকারে পরিণত হচ্ছেন। নারীরা ও শিশুরা এর প্রধান শিকার। কিশোর-কিশোরীরাই প্রথম দিকে এ ধরনের হয়রানির শিকার হচ্ছিল। এখন মধ্যবয়সিরাও এ ফাঁদে পা দিচ্ছেন।
ইউনিসেফের এক জরিপ অনুযায়ী, সাইবার বুলিংয়ের শিকার হওয়া ৩৮ শতাংশ মানুষের বয়স ১০ থেকে ১৩ বছর; ৩৬ শতাংশের বয়স ১৪ থেকে ১৫ বছর এবং ২৫ শতাংশের বয়স ১৬ থেকে ১৭ বছর। ঢাকায় অনলাইনে হয়রানির শিকার নারীদের ৭০ শতাংশের বয়স ১৫ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে? বাংলাদেশসহ এশিয়ার কয়েকটি দেশের ওপর চালানো এক জরিপের বরাত দিয়ে ২০১৭ সালে বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়- এসব দেশে সাইবার বুলিংয়ের ঝুঁকি উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে এবং নারী ও অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোরীরা সবচেয়ে বেশি শিকার হচ্ছে বুলিংয়ের।
আপনি যদি একজন অভিভাবক হয়ে থাকেন, তাহলে আপনার সন্তানের ডিজিটাল বিহেভিয়ার লক্ষ করুন। অস্বাভাবিক আচরণ প্রত্যক্ষ করলে নিচের পদ্ধতি অনুসরণ করুন।
লক্ষ রাখুন
সন্তানের বা পরিবারের কোনো ছোট সদস্যের মেজাজ খুব দ্রুত পরিবর্তন ঘটছে কিনা খেয়াল রাখুন। এ মেজাজ খারাপের সঙ্গে তার ডিজিটাল ডিভাইসের কোনো সম্পর্ক আছে কিনা বোঝার চেষ্টা করুন।
কথা বলুন
কথা বলে জানার চেষ্টা করুন কী ঘটেছে। কোনো ক্লু পেলে কীভাবে এ ঘটনার সূত্রপাত ঘটল, কে বা কারা এর সঙ্গে জড়িত জানার চেষ্টা করুন।
প্রমাণ রাখুন
কোথায় কী ঘটছে তার রেকর্ড রাখুন। সম্ভব হলে ক্ষতিকর পোস্ট বা কমেন্টের স্ক্রিনশট নিয়ে রাখুন। বিভিন্ন আইন ও নীতিমালা বলে যে বুলিং সংঘটিত হয় এমন একটি অপরাধ; সুতরাং আপনি রেকর্ড রাখার সুযোগ নিশ্চয়ই পাবেন।
সাপোর্ট করুন ভিক্টিমকে
বুলিংয়ের শিকার কোনো ভিকটিমের জন্য সবচেয়ে জরুরি হচ্ছে সাপোর্ট। পরিবারের জুনিয়র সদস্যটির অস্বাভাবিক আচরণে ক্ষুব্ধ না হয়ে তার সমস্যাটি বোঝার চেষ্টা করুন। কীভাবে সে এ সমস্যা থেকে বের হয়ে আসতে পারবে সে ব্যাপারে তাকে সাহায্য করুন। সাহস জোগান, মনোবল অটুট রাখতে উৎসাহিত করুন।
প্রতিকারের চেষ্টা
অনলাইনে সহিংসতা ও সাইবার হয়রানির শিকার হলে আইনি সহায়তা নেওয়ার জন্য কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন, সাইবার পুলিশ সেন্টার, হ্যালো সিটিঅ্যাপ, রিপোর্ট টু র্যাব অ্যাপ, ৯৯৯ এবং প্রতিটির ফেসবুক পেজেও অভিযোগ করতে পারেন। শিশুদের সহায়তায় ১০৯৮ নম্বরে, নারী ও শিশুদের সহায়তায় ১০৯ হটলাইনে ফোন করেও সেবা নেওয়া যায়।