সাদা রঙের বিএমডব্লুতে এলেন সাকিব আল হাসান। তার পরনে কালো শার্ট। বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান নামলেন সাদা রঙের গাড়ি থেকে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে (বিসিবি) দুজন কি তাহলে শান্তির বার্তা নিয়ে এলেন? সাংবাদিকদের মধ্যে গুঞ্জন। বার্তাটা কী? সাকিব যা বলবেন, বিসিবি তা বিনা বাক্যে মেনে নেবে! বৃহস্পতিবার দুবাই থেকে ফেরার পর একদফা বৈঠক হয়েছে।
শুক্রবার ফোনে কথা হলো। শনিবার মিরপুরে বিসিবির কার্যালয়ে পরিচালকদের নিয়ে বসলেন নাজমুল হাসান। দক্ষিণ আফ্রিকা সফর নিয়ে সাকিবের ‘না’ হয়ে গেল ‘হ্যাঁ’। তিনি দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যাবেন। সেটি আজ রাতে-হঠাৎ সিদ্ধান্তবদল। যেন বরযাত্রী রওয়ানা হওয়ার পর বর যাচ্ছেন। অনিশ্চয়তা, নাটক, সংলাপের মধ্যে বাংলাদেশ দল ছাপিয়ে বেশ কয়েকদিন ধরে আলোচনায় সাকিব। শেষতক মানসিক ও শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলো। তিন দিনের মধ্যে তাই সিদ্ধান্তবদল।
এরই মধ্যে বাংলাদেশ দলের সব ক্রিকেটার ও কোচ চলে গেছেন তিন ভাগে ভাগ হয়ে। সাকিব আজ রাতে উড়াল দেবেন। তার সঙ্গে বিসিবির মিডিয়া ম্যানেজার, চিকিৎসকসহ তিনজন সঙ্গী হবেন। তিন ফরম্যাটেই খেলা চালিয়ে যাবেন সাকিব।
কাল দুপুরে ঘণ্টাখানেকের বৈঠকের পর সাকিব ও নাজমুল হাসান একসঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে আসেন। সাকিব প্রথমে জানান, তিনি যাচ্ছেন। এরপর বিসিবি সভাপতি জানান, তিন সংস্করণেই খেলা চালিয়ে যেতে চান সাকিব, সেটির শুরু দক্ষিণ আফ্রিকা সফর দিয়ে। সাকিব, নাকি বাংলাদেশ ক্রিকেট দল আগে? এখন বলতে পারেন, সাকিব। তিনি যে সিদ্ধান্ত নেন, তার বাইরে হয় না কিছুই। বিসিবি কড়া মনোভাব দেখিয়ে সুর নরম করে মেনে নিচ্ছে তার কথা। সরাসরি না বললেও পরোক্ষভাবে বিসিবি জানিয়ে রাখল, বিমানে ওঠার আগেও যদি সাকিব না যেতে চান, সেটাও খারাপ কিছু না! এমনকি দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে তিনি যদি সিরিজের কোনো ম্যাচ খেলতে না চান, সেটিও মেনে নেবে বিসিবি। এক খেলোয়াড়ের জন্য ছাড়ের ছড়াছড়ি।
ছুটি নিয়েও এবার যেতে রাজি হলেও এর আগে তিনবার সিরিজের আগে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন সাকিব। যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বিসিবি সভাপতি প্রথমে বলেন, ‘সাকিবের সঙ্গে পুরো বছরের প্রোগ্রাম নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আলোচনার পর এই সিদ্ধান্ত। সেটা সাকিবের মুখ থেকেই শুনুন।’ সাকিব বলেন, ‘পাপন ভাইয়ের (নাজমুল হাসান) সঙ্গে গত পরশু কথা হয়েছিল। গতকালও (শুক্রবার) কথা হয়েছে, আজ (শনিবার) বোর্ডে আলোচনা হলো। পুরো বছরের পরিকল্পনা আমরা করতে পেরেছি। বিসিবির কেন্দ্রীয় চুক্তিতে তিন ফরম্যাটেই আছি। এই তিন ফরম্যাটেই পুরোটা সময় আমাকে পাওয়া যাবে। বোর্ড সিদ্ধান্ত নেবে, কোন সময় আমাকে বিশ্রাম দেওয়া জরুরি কিংবা নেওয়া দরকার, বোর্ড এই সিদ্ধান্ত নেবে, যার শুরু দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ দিয়ে। দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে আমাকে পাওয়া যাবে।’
বোর্ডের ওপর সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা দেখানো সাকিবের জন্য এটাই প্রথম নয়।
বিসিবি সভাপতি বলেন, ‘সিনিয়র ক্রিকেটারদের ওপর অনেক চাপ। আমাদের এ বছর ১৪টা ওয়ানডে, ১৫টি টি ২০, আটটি টেস্ট আছে। খেলোয়াড়দের মাঝেমধ্যে বিরতি দরকার। কিন্তু সিরিজের আগ মুহূর্তে বললে আমাদের জন্য বিরাট সমস্যা।’ আফগানিস্তানের বিপক্ষে তৃতীয় ওয়ানডের পর বিসিবি সভাপতি জানিয়েছিলেন, সাকিব দক্ষিণ আফ্রিকা যাচ্ছেন। এরপর দল ঘোষণার পর দুবাইয়ে গিয়ে সাকিব জানান, তিনি শারীরিক ও মানিসকভাবে খেলার মতো অবস্থায় নেই। ছুটি দরকার। বিসিবি দুদিন সময় নেয়। দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনার পর বিসিবি ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস ঘোষণা করেন, সাকিবকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি দেওয়া হয়েছে। নতুন সিদ্ধান্ত-তিনি যাচ্ছেন। নাজমুল হাসান বলেন, ‘সাকিব জানিয়েছিল সে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। আমাদের সবারই কোনো না কোনো সময় এরকমটা হয়। আপনারা এজন্য অনেক কারণ বের করে নিচ্ছেন। সে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত, এজন্যই সিদ্ধান্ত নিতে একটু সমস্যা হয়েছে। সাকিব সেটা বলেছেও।’ দুবাই থেকে ফিরে সাকিব বিসিবি সভাপতিকে জানান, তিনি খেলতে চান। বিসিবি সভাপতি আবারও দুদিন সময় নিয়েছেন। সিনিয়র ক্রিকেটারদের পক্ষ নিয়ে নাজমুল হাসান বলেন, ‘দু-একটা সিরিজ যদি কেউ না খেলে, তাতে এত হুলস্থুলের কিছু নেই। বোর্ডও তো কোনো সিরিজের জন্য কাউকে বাদও দিতে পারে। এটা আপনারা খেলোয়াড়ি মনোভাব হিসাবে নিন। এখন আমাদের সবারই উচিত সাকিবকে সমর্থন করা। যেসব আলোচনা, টকশো হচ্ছে, এগুলো কারও জন্যই ভালো না। আমরা সব সময় ওদের পাশে আছি এবং থাকব।’ তিনি বলেন, ‘দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে গিয়ে যদি সাকিব কোনো ম্যাচে বিশ্রাম নিতে চায়, নিতেই পারে। আমি চাই এই বিতর্কের এখানেই অবসান হোক। আমাদের সঙ্গে কোনো খেলোয়াড়ের সমস্যা নেই।’ সাকিব দলে যোগ দিলে সবার উৎসাহ বেড়ে যাবে বলে তিনি মনে করেন।
তবে ক্রিকেটপাড়ায় ফিসফাঁস, আজ যদি দক্ষিণ আফ্রিকার বিমানে না উঠে সাকিব অবারও মানসিক অবসাদকে সামনে নিয়ে আসেন, তখন বিসিবি কী করবে।