মেহেরপুর সদর উপজেলার হিজুলি গ্রামের জামায়াত নেতা ও ইউপি সদস্য (মেম্বর) আব্দুল জব্বারকে গুলি করে হত্যা করে বন্দুকযুদ্ধ বলে চালিয়ে দেওয়ার অভিযোগে তৎকালিন পুলিশ সুপার (এসপি) একেএম নাহিদসহ পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রট ও আওয়ামীলীগ নেতাসহ ২৬ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে মেহেরপুর আমলী আদালতে মামলাটি দায়ের করা হয়।
এ নিয়ে মেহেরপুরের তৎকালিন পুলিশ সুপার একেএম নাহিদুল ইসলামের নামে মেহেরপুর আদালতে দুইটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
২০১৩ সালের ৩০ ডিসেম্বর জামায়াত নেতা আব্দুল জব্বারকে মেহেরপুর সদর থানা পুলিশ তার বাড়ি থেকে আটক করে। ওই রাতেই তাকে গুলি করে হত্যার পর বন্দুকযুদ্ধ হিসেবে ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করে। শুধু হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি আসামিরা। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলা ও অস্ত্র গোলাবারুদ উদ্ধারের নাটক সাজায় আসামিরা।
মেহেরপুরের চাঞ্চল্যকর আব্দুল জব্বার হত্যাকাণ্ডের মামলায় এজাহার নামীয় ২৬ জন আসামির মধ্যে রয়েছেন- তৎকালীন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাঈদ মোমিন মজুমদার, ওসি তদন্ত তরিকুল ইসলাম, সদর থানার এসআই শরজিদ কুমার ঘোষ, এসআই গাজী ইকবাল হোসেন, কনস্টেবল সাধন কুমার ও নারদ কুমার, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রসুল, জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি জনপ্রশাসন মন্ত্রীর ভগ্নিপতি আব্দুস সামাদ বাবলু বিশ্বাস, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোমিনুল ইসলাম।
এছাড়াও অজ্ঞাত পরিচয়ের আরও ২০-৩০ জনকে আসামি করা হয়েছে। নিহত আব্দুল জাব্বরের ছেলে আব্দুল মালিতা বাদি হয়ে মামলাটি দায়ের করেছেন।
বিজ্ঞ আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে সদর থানার ওসিকে এফআইআরএর নির্দেশ দিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন বাদি পক্ষের আইনজীবী কামরুল ইসলাম।
আসামিরা পরস্পর জোগসাজসে আব্দুল জব্বারকে আটক করে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ পরিবারের।
মামলার আর্জিতে উল্লেখ করা হয়েছে, নিহত আলহাজ্জ আব্দুল জব্বার ইসলামি ভবাদর্শের তৃণমূলে নেতা এবং আমঝুপি ইউনিয়ন পরিষদের ৯নং ওয়ার্ড সদস্য (মেম্বর) ছিলেন। পরবর্তী নির্বাচনে তিনি আমঝুপি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী ছিলেন।
মামলার আর্জিতে আরও বলা হয়েছে, আব্দুল জব্বারের পাশাপাশি তার ছেলেকেও (মামলার বাদি) গ্রেফতার করে সদর থানা হাজতে রাখা হয়। পরে ছেলেকে একটি মামলা আদালতে সোপর্দ করা হলেও আব্দুল জব্বারকে শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন শেষে বুকে পিঠে গুলি করে হত্যা করা হয়। ঘটনার দুই মাস পর বাদি জামিনে মুক্তি পেয়ে স্বাক্ষীদের কাছ থেকে হত্যাকান্ডের বিষয়টি জানতে পারেন।
প্রসঙ্গত, মেহেরপুর জেলা জামায়াতের সহকারি সেক্রেটারি তারিক মুহাম্মদ সাইফুল ইসলামকে বন্দুকযুদ্ধের নামে হত্যার অভিযোগে গেল ৬ সেপ্টেম্বর একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন তার ভাই। এ মামলটিরও প্রধান আসামি তৎকালিন পুলিশ সুপার একেএম নাহিদুল ইসলাম। মামলাটিতে পুলিশ, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতাকর্মী আসামি রয়েছেন।