মেহেরপুর প্রতিদিনের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক মাহাবুব চান্দুর দায়ের করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় মেহেরপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র মোতাচ্ছিম বিল্লাহ মতুসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।
রবিবার (১৯ মে) খুলনা বিভাগীয় সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক কনিকা বিশ্বাস এ আদেশ দেন।
গ্রেফতারি পরোয়ানা প্রাপ্ত অন্য আসামিরা হলেন সাবেক মেয়র মোতাচ্ছিম বিল্লাহ মতুর ছেলে ডা. মুত্তাকি বিল্লাহ শাফিন, প্রকৌশলী তোহিদুল ইসলাম লিওন, সৌমিক ব্রো, শামিম হাসান সোহাগ ও মেহেরাব হোসেন অপি।
গত মাসের ৪ এপ্রিল আসামিরা ট্রাইব্যুনাল থেকে জামিন প্রাপ্ত হন। রবিবার আদালতের দিন ধার্য ছিলো। আদালতে আসামিরা হাজির হননি এমনকি তাদের পক্ষে কোন আইনজীবীও ছিলেন না। ফলে জামিন পাওয়ার পর তারা আদালতে হাজির না হওয়ায় আদালত তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। এর আগে মামলার অপর আসামি সাইফুল বাহার স্বাধীন পলাতক থাকায় গত ৪ এপ্রিল তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল।
জানা গেছে, গত বছরের ২৯ আগষ্ট একই আদালতে মামলা দায়ের করেন সাংবাদিক মাহবুব চান্দু। মামলাটি আদালত আমলে নিয়ে কুষ্টিয়া পিবিআইকে তদেন্তর নির্দেশ দেন। পিবিআই তদন্ত শেষে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন।
তদন্ত প্রতিবেদনে পিবিআই মামলার অন্যতম আসামি মুত্তাকি বিল্লাহ শাফিনকে বাদ দিয়ে প্রতিবেদন জমা দিলেও আদালত মামলার গুরত্ব বিবেচনায় ৭ আসামিকে অন্তর্ভুক্ত করে সমন জারি করেন। গত ৪ এপ্রিল ৭ আসামির মধ্যে ৬ জন হাজির হয়ে জামিন আবদেন করলে আদালত তাদের জামিন মঞ্জুর করেন। বাকি একজন পলাতক থাকায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। মামলায় বাদীপক্ষে মিঠু চন্দ্র বসাক আইনজীবীর দায়িত্ব পালন করেন।
এর আগে গতবছরের ১ আগস্ট মেহেরপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট তরিকুল ইসলামের আদালতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আসামীদের বিরুদ্ধে মামলা করেন সাংবাদিক মাহাবুব চান্দু। ঐদিনই কুষ্টিয়া পিবিআই কে তদন্ত দেয় আদালত। মামলার ১৫দিন পর জুডিশিয়াল কোর্ট থেকে বাদীর আইনজীবীকে বলা হয় মামলাটি এখানে নেয়া ঠিক হয়নি।
মামলাটি খুলনা সাইবার ট্রাইব্যালে করার পরামর্শ দেন। একইসাথে মামলাটি নথিজাত করা হলো মর্মে আদেশ দেন মেহেরপুর জুডিশিয়াল আদালত। পরবর্তীতে ২৯ আগস্ট ২০২৩ খুলনা সাইবার ট্রাইব্যালে পূনরায় মামলাটি করেন সাংবাদিক মাহাবুব চান্দু। খুলনার মামলার এজাহারেও মেহেরপুরের মামলার কথা উল্লেখ করা আছে।
মামলার এজাহারে জানা গেছে, বাদি মাহাবুব চান্দু ২০ বছর যাবৎ সাংবাদিক পেশায় নিযুক্ত। বর্তমানে তিনি মেহেরপুর জেলা প্রেসক্লাবের সাধারন সম্পাদক ও স্থানীয় দৈনিক মেহেরপুর প্রতিদিন পত্রিকার ব্যবস্থাপনা সম্পাদক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। ইতিপূর্বে তিনি জাতীয় দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক সংবাদ, প্রতিদিনের সংবাদসহ বিভিন্ন গনমাধ্যমে সুনামের সাথে মেহেরপুরে সাংবাদিকতা করেছেন।
অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় তার বেশ সুনাম আছে। তার প্রকাশিত সংবাদের মধ্যে অনেকগুলো সংবাদ আদালত আমলে নিয়ে স্বপ্রণোদিত মামলা করেছেন এবং ভুক্তভোগীরা সুফল পেয়েছেন। বাদী মেহেরপুর প্রতিদিনের অনুসন্ধানী কাজে গত বছরের ২৪ জুলাই সকাল ১১টা ৫৩ মিনিট থেকে দুপুর ১টা ১৬ পর্যন্ত মেহেরপুর সরকারী মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র ও জেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসে অনুসন্ধান মুলক কাজে নিয়োজিত ছিলেন।
আসামী মোতাচ্ছিম বিল্লাহ মতুর মেয়ে মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র এর চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত থাকাতে তিনি খবরটা জেনে ক্ষিপ্ত হন। তারপর মায়ের হাসি ক্লিনিকের মালিক হিসেবে তিনি মেহেরপুর প্রতিদিন পত্রিকার সম্পাদক ইয়াদুল মোমিনকে আনুমানিক ২টা ২৫ মিনিটের দিকে মোবাইলে ফোন দেন। এসময় তিনি ফোনে হুমকি দিয়ে বলেন তোমরা কি বারেখা হয়েছো, আমার মেয়ের বিরুদ্ধে তোমাদের দাঁত ভেঙ্গে দিব, ৫০টা চাঁদাবাজির মামলা দিব বলে ফোন কেটে দেন।
এ বিষয়ে ২৬ জুলাই মেহেরপুর প্রতিদিনের সম্পাদক ইয়াদুল মোমিন নিজের, তাঁর পরিবার ও অফিসের স্টাফদের জীবনের নিরাপত্তার জন্য মেহেরপুর সদর থানাতে একটি জিডি করেন, যার নং ১৩৯১।
পরবতির্তে আসামী মোতাচ্ছিম বিল্লাহ মতু তার মালিকানাধীন মায়ের হাসি ক্লিনিকের ম্যানেজার আসামী সাইফুল বাহার স্বাধীনকে দিয়ে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সদর থানা মেহেরপুর বরাবর বাদীর নামে একটি মিথ্যা চাঁদাবাজির অভিযোগ লিখে থানায় অভিযোগটি জমা না দিয়ে মায়ের হাসি ক্লিনিক ফেসবুক আইডি থেকে পোষ্ট করে। পরে মোতাচ্ছিম বিল্লাহ মতুর ছেলে মুত্তাকী বিল্লাহ শাফিন তার ফেসবুকে নামধারী সাংবাদিক লিখে শেয়ার করে।
মুত্তাকী বিল্লাহ শাফিনের পোস্টে গিয়ে আসামী তৌহিদুল ইসলাম লিওন বাদী সম্বদ্ধে কৃষ্ণ নগরী, ভাত পেতনা, চাঁদাবাজী, ৫টা বউসহ ইত্যাদি মানহানি কর কথা লিখেছেন। সে আরো বলে জেল খেটে দেশে ফিরে এখন বড় সাংবাদিক হয়েছে”। আসামী সৌমিক ব্রো কমেন্টস করে বলেছেন, “আমি থাকলে শালাকে ওন স্পট হিট করে তোর ক্লিনিকে ভর্তি করিয়ে রাখতাম”।
আসামী শামিম হাসান সোহাগ ও মেহেরাব হোসেন অপি মিথ্যা বিষয়কে শেয়ার করে লাইক দিয়ে অপপ্রচারে সহায়তা করেছে। আসামীরা একই বিষয় একাধিকবার সোসাল মিডিয়ায় প্রচার করে বিভিন্ন গ্রুপের মাধ্যমে ভাইরাল করেছে।
আসামী মেহেরাব হোসেন অপি একটি অনিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল মেহেরপুর নিউজ ডটকম পোর্টালের ফেসবুক পেজ থেকে মোতাচ্ছিম বিল্লাহ মতুর মিথ্যা অভিযোগটি লাইভ প্রকাশ করে এবং নিজ আইডিতেও শেয়ার করে ভাইরাল করে।
আসামিদের মিথ্যা অপপ্রচার করে নিজেদের স্বার্থ রক্ষার জন্যে এবং অনুসন্ধানী ও সুস্থ ধারার সাংবাদিক গোষ্টীর পথ রুদ্ধ করেছে বলে বাদী অভিযোগ করেন।
উল্লেখ্য, সাংবাদিক মাহাবুব চান্দুর বিরুদ্ধে মিথ্যা চাঁদাবজীর অভিযোগ তোলায় গতবছরের ৩০ জুলাই মেহেরপুরের সাংবাদিক সমাজ জেলা প্রসাশকের কার্যালয়ের সামনে একটি মানববন্ধন করে।