মেহেরপুর পৌরসভাটি প্রথম শ্রেণীর পৌরসভা কিন্তু নাগরিক সেবা কিছু এলাকায় তৃতীয় শ্রেণীর মত। বাসিন্দারা নাগরিক সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত। চলাচল করতে পোহাতে হয় চরম দুর্ভোগ। পর্যাপ্ত বা ময়লা আবর্জনা রাখার ডাষ্টবিনের অভাবে সড়কের পাশে দূর্গন্ধময় ময়লা আবর্জনায় স্তুুপ হয়ে পড়ে থাকে। এলাকায় ড্রেনের সু ব্যবস্থা না থাকায় ড্রেনে পানি থেকে দুর্গন্ধ ও মশার উপদ্রপ সৃষ্টি হচ্ছে । ড্রেনগুলো নিয়মিত পরিষ্কার না করায় ময়লা আবর্জনায় ভরে গেছে।
ফলে নোংরা দূর্গন্ধময় পানি মাড়িয়ে রাস্তায় চলাচল করতে হয় বাসিন্দাদের। ময়লা আবর্জনা ফেলার ডাষ্টবিনের অভাবে সড়কের পাশে বা খোলা জায়গায় দূর্গন্ধময় ময়লা আবর্জনায় স্তুুপ হয়ে পড়ে থাকে।
বার বার অভিযোগ করেও মেলেনা প্রতিকার। যার কারণে পরিস্থিতি মেনে নিয়েই বসবাস করতে হচ্ছে এলাকাবাসীদের। অনেকের অভিযোগ এবিষয়ে কাউন্সিলরকে অবগত করলেও কোন সুফল মেলেনা।
মেহেরপুর পৌরসভার তাঁতীপাড়া, শাহাজীপাড়া, বেড়পাড়া, ডাঙ্গাপাড়া, খানপাড়া, থানাপাড়া ও মুখার্জীপাড়ার উত্তর অঞ্চল নিয়ে গঠিত মেহেরপুর পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ড। এই ওয়ার্ডের মধ্েয রয়েছে ২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১টি মাদ্রাসা, ১টি কিন্ডার গার্টেন স্কুল। ওয়ার্ডে মোট ভোটার ২৯৬২ জন। ওয়ার্ডের নির্বাচিত কাউন্সিলর সৈয়দ আবু আব্দুল্লাহ বাপ্পী।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ৩নং ওয়ার্ডের কিছু উন্নয়ন হলেও পাড়ার ভিতরের চিত্র ভিন্ন। সড়কে বিভিন্ন স্থানে খানাখন্দর, ড্রেনেজ ব্যবস্থার দীর্ঘ দিন ধরে সংস্কার ও পুণঃ নির্মাণ হয়নি বলে অভিযোগ এলাকাবাসীদের। নেই ময়লা আবর্জনা ফেলার জায়গা। বসবাস করতে হচ্ছে বসতবাড়ির আশেপাশে ঢাকনা বিহীন ড্রেনের পাশে দূর্গন্ধময় কাঁদা পানি, ময়লা আবর্জনার স্তুুপ ও মশা-মাছি নিয়ে। একাধিকবার অভিযোগ করে প্রতিশ্রুতি পেলেও মেলে না প্রতিকার। পাড়া মহল্লার ভিতরে যে সমস্ত ব্রিক ড্রেনগুলো আছে তা দেখেই বোঝা যায় যা নিয়মিত পরিষ্কার করা হয়না। ঢাকনা বিহীন এসকল ড্রেনের দূর্গন্ধময় কাঁদা পানি, ময়লা আবর্জনায় ভরা। ৩নং ওয়ার্ডের প্রতিটি পাড়ার একই চিত্র দেখা মেলে।
ওয়ার্ডের নেই ময়লা আবর্জনা ফেলার নির্দিষ্ট জায়গা। এলাকার লোকজন যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ফেলে। ড্রেনের ঢাকনা ও পরিষ্কার না করায় ড্রেনে জমা পানি থেকে দূর্গন্ধ ও মশার উপদ্রপ সৃষ্টি হচ্ছে। যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনার স্তুপ। তবে অভিযোগ থাকলেও কেউ তাদের নাম প্রকাশ করতে চাননি।
তবে সমস্যাগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে সমাধান হবে বলে জানান ৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সৈয়দ আবু আব্দুল্লাহ বাপ্পী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মুখার্জীপাড়ার একজন বাসিন্দা বলেন, পাড়ার ভিতরে ড্রেনগুলোর অবস্থা ভালো না। ড্রেনগুলো ঠিকমত পরিষ্কার করে না। ময়লা ফেলার নির্দিষ্ট কোন জায়গা না থাকায় পাশে লোকের জায়গায় আবর্জনা ফেলতে হয়। আমরা অনেক অবহেলিত। একটা ১ম শ্রেণীর পৌরসভার যে সুযোগ সুবিধা সেগুলো থেকে আমরা বঞ্চিত। পাড়ার ভিতরে এই রাস্তা ও ড্রেনের অবস্থা আপনারা নিজ চোখেই দেখতে পাচ্ছেন। বার বার বলার পরও এগুলো ঠিক হয়নি। কাউন্সিলরকে জানালে বলে অল্পদিনেই হবে। কয়েকবার এসে ভিডিও ও ছবি নিয়ে গেছে কিন্তু কাজ হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেড়পাড়ার একজন বাসিন্দা বলেন, রাস্তাগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে গেছে। ড্রেনগুলো নিয়মিত পরিষ্কার না করায় পানি নিষ্কাশন হয়না। যার কারণে বাড়ির ব্যবহৃত ও বৃষ্টির পানিতে জলবদ্ধতা হয়ে থাকে। নোংরা দূর্গন্ধময় পানি মাড়িয়ে রাস্তায় চলাচল করতে হয়।
ময়লা আবর্জনা ফেলার ডাষ্টবিনের অভাবে পাড়ার ভিতরে সড়কের পাশে দূর্গন্ধময় ময়লা আবর্জনায় স্তুুপ হয়ে পড়ে থাকে। যারা মেইন রাস্তায় ময়লা রেখে আসে তাদেরগুলো পৌরসভার গাড়ি এসে নিয়ে যায়। ভিতরে এক সপ্তাহ কখনও দশদিন পর এসে নিয়ে য়ায়।
এই মোড়ের লাইটটা বন্ধ হয়ে পড়েছিল। কাউন্সিলর কে বারবার জানালেও লাভ হয়নি। ওনি আবার ফোন ধরতে চাই না আবার ফোন বন্ধ রাখে।
একদিন দুদিন পরপর পৌরসভার গাড়ি এসে ময়লা নিয়ে যায়। ড্রেনগুলো অনেক দেরিতে পরিষ্কার করে। এখানে মসজিদের রাস্তাটি দীর্ঘদিন ধরে মেরামত করা হয়নি যার কারণে মুসল্লিদের চলাচলে সমস্যা সৃষ্টি হয়। বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা ভালো।
শাহাজীপাড়ার রোকেয়া খাতুন বলেন, এলাকার একাংশে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা ভালো হলেও আমাদের অংশে রয়েছে পানি নিষ্কাশনের সমস্যা। দৈনন্দিন ব্যবহৃত ও সামান্য বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। ড্রেনগুলো নিয়মিত পরিষ্কার না করায় দূর্গন্ধময় পরিবেশে কষ্ট করেই বসবাস করতে হচ্ছে। ছয় মাসেও এই ড্রেন পরিষ্কার হয়েছে বলে আমার মনে হয় না। এছাড়ার সামান্য বৃষ্টিতে ড্রেনের পানিই উপচে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে।
পাড়ায় কোনো ডাষ্টবিন নির্মাণ না করায় স্থানীয়রা যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনায় ফেলে। ফলে মশা-মাছির উপদ্রপ বাড়ছে। বাড়ির সামনে খোলা জায়গায় আবর্জনা ফেলার কারণে দূর্গন্ধময় পরিবেশে কষ্ট করেই বসবাস করতে হচ্ছে।
ওয়ার্ডের উন্নয়ন চিত্র:
এলাকার উন্নয়নের মধ্যে মুখার্জীপাড়ার টিটুর বাড়ি হতে হঠাৎপাড়া পর্যন্ত পানির পাইপ স্থাপন। টিটুর বাড়ি হতে জগার মিল পর্যন্ত রাস্তা কার্পেটিং।
তাঁতীপাড়ার রেজাউল হকের বাড়ি হতে ইভান কাউন্সিলরের বাড়ি পর্যন্ত পানির পাইপ স্থাপন। এনামুলের দোকান হতে হঠাৎপাড়ার মোড় পর্যন্ত আরসিসি ঢালাই ড্রেন। জগন্নাতের বাড়ি হতে হঠাৎপাড়া মোড় পর্যন্ত নতুন রাস্তা নির্মাণ। রেজাউল হকের বাড়ি হতে ইভান কাউন্সিলরের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা কার্পেটিং। নোমানের বাড়ি হতে সাবুর বাড়ি পর্যন্ত আরসিসি ড্রেন ও ঢালাই রাস্তা। হঠাৎপাড়া কাসেদের বাড়ি হতে ঘাটের ধার পর্যন্ত হিয়ারিং রাস্তা। সুমনের বাড়ি হতে ঘাটের ধার পর্যন্ত হিয়ারিং রাস্তা।
মেহেরপুর পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কাউন্সিলর সৈয়দ আবু আব্দুল্লাহ বাপ্পী বলেন, আমার নির্বাচনী এলাকায় নানান সমস্যা ছিলো যা আমি যা সমাধানের চেষ্টা করেছি এখনও যে সমস্যা আছে সেগুলো সমাধানের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। রাজনৈতিক সমস্যার কারণে অনেক উন্নয়ন ব্যাহত হয়েছে। এলাকায় যে ঢাকনা বিহীন ব্রিক ড্রেনগুলো আছে সেগুলো ভেঙ্গে অচিরেই আরসিসি ঢালাই ড্রেনে রুপান্তর করা হবে। তাছাড়া কিছু রাস্তা আছে সেগুলো মেরামত করা হবে। ইতোমধ্যেই সমস্যা সমাধানে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
জনগণের স্বার্থে ও ওয়ার্ডের উন্নয়নের জন্য যেসব কাজ করার কথা ছিল বা ওয়াদাবদ্ধ ছিলাম তা আমি অনেকেই সম্পূর্ণ করতে পেরেছি। এরপরও কিছু কিছু সমস্যা আছে সেগুলো সমাধানের প্রক্রিয়াও চলমান। আমি আমার এলাকার উন্নয়ন ও জনগণের যতটুকু সেবা দেয়া সম্ভব তা দেয়ার চেষ্টা করেছি।