সুইজারল্যান্ডে রোববার এক গণভোটে সামান্য ব্যবধানে প্রকাশ্যে মুখ ঢাকা পোশাক বা বোরকাপরা নিষিদ্ধের বিতর্কিত প্রস্তাব পাস হয়েছে।
দেশটির নিয়মানুযায়ী, যে কোনো বিষয়ে এক লাখ মানুষ স্বাক্ষর প্রদান করলে সেই প্রস্তাবের ওপর জাতীয় ভোট অনুষ্ঠিত হয়। খবর বিবিসির।
দেশটির কট্টর ডানপন্থি দল সুইস পিপলস পার্টি (এসপিপি) বহুদিন ধরেই ইসলামবিরোধী প্রচারণা চালাচ্ছে। তারাই মূলত পার্লামেন্টে এ প্রস্তাব আনে।
রোববার অনুষ্ঠিত গণভোটে ৫১ দশমিক ২ শতাংশ মানুষ প্রস্তাবটির পক্ষে রায় দিয়েছেন। বিপক্ষে ভোট পড়ে ৪৮ দশমিক ২ শতাংশ।
মুসলিমবিদ্বেষী এ প্রস্তাব পাস হওয়ায় এই দিনটিকে দেশটির জন্য একটি কালো দিন হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন সুইস ইসলামি গ্রুপের নেতারা।
তবে ২৬টি ক্যান্টন বা প্রশাসনিক অঞ্চলের ছয়টিতে বেশিরভাগ মানুষ এই প্রস্তাব সমর্থন করেননি। এর মধ্যে রয়েছে সবচেয়ে বড় তিন শহর জুরিখ, জেনেভা ও বাসেল। এমনকি রাজধানী বার্নের অধিকাংশ মানুষও ছিলেন বিপক্ষে।
প্রস্তাব অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি জনসমক্ষে মুখ ঢেকে রাখতে পারবেন না। রেস্টুরেন্ট, স্টেডিয়াম, গণপরিবহন—এমনকি রাস্তায় হাঁটার ক্ষেত্রেও মুখ আবৃত করে এমন পোশাক পরা যাবে না।
তবে ধর্মীয় উপাসনালয় এবং নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যগত কারণে এই নিয়ম প্রযোজ্য হবে না। অর্থাৎ করোনা থেকে রক্ষায় মাস্ক পরতে কোনো সমস্যা নেই। তবে প্রার্থনাস্থলে এই নিয়মের ছাড় দেওয়া হবে।
ইতিমধ্যে দেশটির দুটি অঞ্চলে নিয়মটি কার্যকর রয়েছে, যা সারা দেশে প্রযোজ্য হবে কিনা সেই বিষয়ে রোববার গণভোট হয়।
সুইজারল্যান্ডে এই প্রস্তাবের কোথাও বোরকা বা নেকাবের কথা আলাদা করে বলা হয়নি। তবে এর পক্ষের রাজনৈতিক প্রচারে মুসলিম নারীদের পোশাককে সামনে আনা হয়।
সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল দ্য সুইস পিপলস পার্টি প্রস্তাবের পক্ষে জোরালো অবস্থান নেয়। তাদের বিলি করা একটি প্রচারপত্রে বোরকা পরা এক নারীর চিত্র ব্যবহার করে লেখা হয়েছে—‘ইসলামি উগ্রবাদ থামাও’।
অথচ বাস্তবতা হলো সুইজারল্যান্ডে সচরাচর বোরকা, নেকাব পরিহিত নারী তেমন একটা দেখা যায় না। তার পরও এমন প্রস্তাব ওঠা নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক আছে।
এই বিষয়ে সুইস পিপলস পার্টির সংসদ সদস্য জ্যঁ-লুক অ্যাডোর বলেন, বোরকা পরা খুব বেশি নারী সুইজারল্যান্ডে নেই সেটি সৌভাগ্যের। তার যুক্তি— কোন বিদ্যমান সমস্যা নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার আগেই সমাধান করা উচিত।
তবে সরকার ও সংসদ এ নিয়ে দেশজুড়ে নিষেধাজ্ঞার বিপক্ষে ছিল। এর মাধ্যমে অকারণ ইসলামভীতি ছড়ানো হচ্ছে বলেও মত তাদের।
বিপক্ষের একটি প্রচারপত্রে বলা হয়েছে— অযৌক্তিক, অপ্রয়োজনীয় ও ইসলামভীতি ছড়ানো বোরকাবিরোধী আইনকে না বলুন।