সুদের টাকা দিতে না পারলে ব্ল্যাকমেল করে একাধিক নারীর সাথে শারিরীক সম্পর্ক করেন স্বর্ণকার উত্তম কুমার কর্মকার। বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ পেয়ে ইউপি চেয়ারম্যানের বিচারে সাজা “দেড় লাখ টাকা জরিমানা ও ১০ বার কান ধরে ওঠ বস”। এই বিচার ভুক্তভোগী পরিবার মানতে নারাজ।
তারা পুনরায় বিচারের দাবীতে বাজারের ব্যবসায়ীদের গণস্বাক্ষর নিচ্ছেন। তবে বাজার কমিটির সভাপতির আশ্বাস সুষ্ঠ বিচার হবে। নারী ভক্ষণকারী উত্তম কুমাার র্কমকারের বিচারের দাবীতে এবার ফুঁসে উঠেছে বাজারের সব ব্যবসায়ী।
ঘটনাটি মেহেরপুর সদর উপজেলার আমঝুপি গ্রামের। অভিযুক্ত উত্তম কুমার কর্মকার আমঝুপি বাজারের শ্রী শ্রী মাতৃ জুয়েলার্স ও বস্ত্র বিতানের মালিক।
এদিকে, আমঝুপি চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে সালিশে উত্তম কুমার কর্মকারের কানধরে উঠবস করার ১৩ সেকেণ্ডের ভিডিও সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওটি মেহেরপুর প্রতিদিনের হাতে এসেও পৌছেছে।
স্থানীয়রা জানান, এলাকার শীর্ষ সুদখোর আমঝুপি গ্রামের হালদারপাড়া এলাকার জামিনি কর্মকারের ছেলে উত্তম কুমার কর্মকার। এলাকার মানুষকে চড়া সুদে টাকা দিয়ে থাকেন এই সুদখোর। তার হাত থেকে শুধু হিন্দু নয় মুসলিম নারীরাও তার ব্ল্যাকমেলের স্বীকার হয়ে হারিয়েছেন সম্ভ্রম। অভিযোগ উঠেছে, লাখে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা সুদে টাকা দিয়ে থাকেন তিনি। সুদের টাকা ঠিকমত পরিশোধ করতে ব্যার্থ হলে সে নির্জন স্থানে নিয়ে গিয়ে কু প্রস্তাব দিয়ে থাকেন।
টাকা না দিতে পারলে শারিরীক সম্পর্ক করতে হবে তার সাথে। এমন প্রস্তাবে সাড়া দিলে সে ওই সাপ্তাহের সুদ মাফ কর দেন। পরে নির্জন স্থানে নিয়ে শারিরীক সম্পর্ক করে ভিডিও ধারণ করেন। শুরু হয় ব্ল্যাকমেল। তার সেই ভিডিও দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্ক তৈরী করে এই সুদ কারবারি।
এমনি এক অভিযোগ করেছেন সনাতন ধর্মী বলয় কুমারের স্ত্রী। তার দাবী সুদের উপর কিছু টাকা নেন এই সুদ কারবারীর কাছে। নিজের স্বামীর চুন ব্যবসার লাভ না হওয়ায় কয়েক সপ্তাহ টাকা দিতে ব্যার্থ হন এই নারী। পরে তাকে ফুঁসলিয়ে নির্জন স্থানে নিয়ে তার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করে ছবি ও ভিডিও ধারণ করেন। পরে তার মেয়েকেও একই কৌশলে শারীরিক সম্পর্ক করে ভিডিও ধারণ করেন সুদ ব্যবসায়ী উত্তম কুমার কর্মকার। পরে শুরু করেন ব্ল্যাকমেল।
এক পর্যায়ে কিছু ছবি ও ভিডিও বলয় কুমারের জামাইয়ের কাছে পাঠায় উত্তম। বিষয়টি এক পর্যায়ে জানাজানি হয়ে পড়লে স্থানীয় আমঝুপি চেয়ারম্যান বোরহান উদ্দীন আহমেদ চুন্নুর কাছে বিচার দেন ভূক্তভুগীরা।
এঘটনায় শনিবার রাতে আমঝুপি বাজারে এসে শালিস বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। শালিসে অভিযুক্ত উত্তম কুমার কর্মকার দোষী সাবস্থ্য হন। এতে উত্তম কুমার কর্মকারকে দেড় লাখ টাকা জরিমানা করেন। একই সময়ে জন সম্মুখে তাকে কান ধরে ১০ বার ওঠবস করান। এসময় স্থানীয় মেম্বর আবুল কালাম, জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমানসহ শতাধিক ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন।
বলয় কুমারের ভাতিজা প্রদীপ হালদার বলেন, আমি চেয়ারম্যানের ওই বিচার মানিনা। এই ধরনের ঘটনায় আমরা নিজেরাই বিচার করবো। উত্তম কুমার যে অন্যায় করেছে তার বিচার অন্যভাবে হতে হবে।
আমঝুপি বাজার কমিটির সভাপতি আজফারুল হক হিরো বলেন, উত্তম কুমার কর্মকার শুধু একটা মেয়ে নয়, এলাকার অনেক নারীই তার লালসার শিকার হয়েছে। এই সুদখোর চড়া সুদে টাকা দিয়ে এলাকার মানুষকে নি:স্ব করার পাশাপাশি তাদের ঘরের নারীদের ব্ল্যাকমেল করে সম্ভ্রম হানী করছে। তার বিরুদ্ধে আমঝুপির সকল ব্যবসায়ী ফুঁসে উঠেছেন।
এই বিষয়ে ভুক্তভোগী বলয় কুমার একটি লিখিত অভিযোগ দেবে বলেছেন। লিখিত অভিযোগে ওই পরিবারটি স্থানীয় ব্যবসায়ীদের স্বাক্ষর নিচ্ছেন। আমি লিখিত অভিযোগ পেলে তার বিরুদ্ধে সকল ব্যবসায়ীরা শালিস বৈঠকে মিলিত হবো।
আমঝুপি ইউপি চেয়ারম্যান বোরহান উদ্দীন আহমেদ চুন্নু বলেন, আমি প্রথমে ভূক্তভোগীদের আইন আদালতের আশ্রয় নিতে বলেছিলাম। তারা যায়নি, আমাকে বিচার করার জন্য বলেছিল। আমি কিছু ভিডিও দেখেছি। আমি বিচার করে দিয়েছি। আমার বিচারে বলয়ের ভাইয়ের ছেলে প্রদীপ হালদার মানছেনা। তারা বলছে আমরা নিজেরা উত্তম কুমারের বিচার করবো। আজ (গতকাল) রবিবার সন্ধ্যায় আমার কাছে এসে এসব কথা বলে গেছে। আমি তাদের বলেছি তাহলে তোমরা যাও যেভাবে পারো বিচার করা। তারা চলে গেছে।
তবে অভিযুক্ত উত্তম কুমার কর্মকারকে ফোন করলে তার স্ত্রী ফোন রিসিভ করে জানান, উত্তম ফোন রেখে গেছে।
এ বিষয়ে মেহেরপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম বলেন, এধরনের কোনো ঘটনা ঘটলে আইনের আশ্রয় নেওয়া উচিৎ। এটা শালিস অযোগ্য বিষয়।