সেই মীর কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন মেহেরপুর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো: তরিকুল ইসলাম।
আজ বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) দুপুরের দিকে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন তিনি। আদালতে হাজির না হওয়ায় এই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে আদালত।
এর আগে প্রতারক কামরুজ্জামানের নানা অপকর্ম নিয়ে মেহেরপুর প্রতিদিনে একাধিক সংবাদ প্রকাশ হয়েছিল।
এর আগে অবৈধভাবে নেওয়া জমি ফেরৎ দেন দুই প্রতিবেশীকে। সম্প্রতি গাংনী উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাজমুল আলম দুই পক্ষের উপস্থিতিতে শুনানী শেষে এ আদেশ দেন।
এসময় মীর কামরুজ্জামানের খারিজ বাতিল করে অভিযোগকারী তেরাইল গ্রামের কালুর স্ত্রী রোজিফা খাতুন, রবকুল শাহ্ এর স্ত্রী মারজিয়া খাতুনের জমির খারিজ তাদের বুঝিয়ে দেন।
শুনানী থেকে জানা গেছে, গাংনী উপজেলাধীন ৪১নং তেরাইল মৌজার ১নং খতিয়ান ভুক্ত ৪৪৫১দাগের খাস ১০শতক এর মধ্যে ০৪শতক জমি বানুয়ারা ও মান্নান কে বন্ধোবস্থ কেস নং ১৪২/১২/২০০৪-০৫ ও উপজেলা বন্দোবস্ত কেস নংঃ৫০/১২/২০০৪-০৫ ভূমিহীন হিসাবে ৮৫৮৩নং দলিল মুলে বন্দোবস্ত দেয় সরকার। গত ১৬/০৩/০৬ ইং তারিখে ৯১/পি-২/২০০৫-০৬ নাম জারি করে বসবাস করে আসছে বানুয়ারা।
কিন্তুু প্রতারক মীর কামরুজ্জামান লেলিনসহ তার পরিবারের লোকজন ১৫৩/২০০৫নং মামলা করে মেহেরপুর সহকারী জজ আদালতে এবং আদালত বানুয়ারার পক্ষে রায়ও প্রদান করেন। কিন্তু রায়ের বিরুদ্ধে জেলা জজ আদালতে আপিল করে কামরুজ্জামান, যা বিচারাধীন রয়েছে। এ অবস্থায় মীর কামরুজ্জামান লেলিন ভূয়া জমির কাগজ সৃষ্টি করে ২০১৪ সালে নাম জারি করেন। যার নং ২৯/৯-পি-০১/২০১৪-১৫।
২০০৪ সালে ভুয়া ভূমিহীন দেখিয়ে ১নম্বর খতিয়ানের ৪৪৫১ দাগের খাস ১০ শতক জমি সরকারের কাছ থেকে বন্দোবস্ত নেন মীর কামরুজ্জামান লেলিনের বাবা মীর লুৎফুর রহমান পরবর্তী ২০০৫ সালে সরকার সে বন্দোবস্ত বাতিল করে দেন।
তাই খারিজ জালিয়াতির ক্ষেত্রে আশ্রয় নেন এই সব প্রতারণার ১৯৯৫ সালের কামরুজ্জামানের বাবা লুৎফর রহমানের ভুয়া খারিজের কপি যার নম্বর ৯৭৩ /১পি-১ম/১৯৯৫-১৯৯৬ হোল্ডিং নম্বর ২৫৮৭ দাগ ৪৪৫১ দেখিয়ে ২০১৪ সালে নিজ নামে খারিজ করেন কামরুজ্জামান লেলিন।
তবে, ইউনিয়ন ভূমি অফিস এবং উপজেলা ভূমি অফিসের ঐ ২৫৮৭ হোল্ডিং এ দেখা যায় ওই নামজারিটি মুশফিকুর রহমান, পিতার রুহুল আমিন, সাং: বাদিয়াপাড়া, গাংনী, মেহেরপুর নাম আছে। ঐ নামের স্থলে মীর কামরুজ্জামান তার বাবার নাম মীর মীর লুৎফর রহমান জালিয়াতি করে বসিয়ে দেন।
এছাড়া কামরুজ্জামানের তার বাবা মৃত মীর লুৎফর রহমান খারিজ টি অন্য আরেক জনের খারিজ দেখিয়ে করেছে যার নাম ছলিম উদ্দিন শেখ পিতা: পালান শেখ স্ংা নিজ, খতিয়ান ১০১১ দাগ ৪৪৫১।
ইউনিয়ন ভূমি অফিস ও উপজেলা ভূমি অফিসের ভলিউমের ১০১১ খতিয়ানে গেলে দেখা যায় ছলিম উদ্দিন শেখ পিতা পালান শেখ তার দাগ নম্বর ২৬৯৬ এখানেও দাগ নম্বর ২৬৯৬ এর জায়গায় জালিয়াতি করে ৪৪৫১ বসিয়ে দেওয়া হয়।
গাংনী উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিস সূত্র জানান, তিন জন ভুক্তভোগীর লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার দু’পক্ষের কাগজপত্র যাচাই বাছাই করা হয়। এসময় রুজিফা খাতুন ও মারজিয়া খাতুনের ৪৪৪৮ ও ৪৪৪৯ দাগের ২টি জমির খারিজ বহাল রেখে মীর কামরুজ্জামানের খারিজ বাতিল করা হলো।
এবং বানুয়ারা খাতুনের ৪৪৫১ দাগের জমিটি খারিজের ক্ষেত্রে বড় জালিয়াতি দেখা যাচ্ছে। আগামী ২১ তারিখ শুনানি শেষে এ জালিয়াতি সত্যতা পেলে মীর কামরুজ্জামান লেনিনের বিরুদ্ধে উপজেলা ভূমি অফিস আদালতে জালিয়াতি মামলা দায়ের করবে ।
উল্লেখ্য, এর আগে মেহেরপুর প্রতিদিন পত্রিকায় মীর কামরুজ্জামানের প্রতারণার বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে মেহেরপুর আমলী আদালতের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এস, এম, শরিয়ত উল্লাহ্ স্বপ্রণোদিত হয়ে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন এবং পিবিআই কে তদন্তের নির্দেশ প্রদান করেন। মামলাটি তদন্ত শেষে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।