সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪ শিক্ষার্থীর মাথার চুল শিক্ষিকা কর্তৃক কেটে দেয়ার ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে অভিযুক্ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষিকা ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন তার ওপর অর্পিত অতিরিক্ত ৩টি পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন।
রবি পরিচালনা বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তিনি এ দিন রাতে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান পদ, সহকারী প্রক্টর পদ ও প্রক্টরিয়াল বোর্ডের সদস্য পদ থেকে লিখিতভাবে পদত্যাগ করেছেন।
এছাড়া এ ঘটনা তদন্তে রবির রবীন্দ্র অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান লায়লা ফেরদৌস হিমেলকে প্রধান করে ৫ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই রাত থেকেই তদন্ত কমিটি তদন্ত কাজ শুরু করেছেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রবির রবীন্দ্র অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান লায়লা ফেরদৌস হিমেল। তিনি বলেন অতিদ্রুত তদন্ত কাজ শেষ করে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে। তার পরেই ওই শিক্ষিকার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এদিকে চাকরি থেকে স্থায়ীভাবে অপসারণ বা পদত্যাগ না করায় শিক্ষার্থীরা তাদের আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়ে দ্বিতীয় দিনের মতো বুধবার সকাল থেকেই রবি ক্যাম্পাসে তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। এর সঙ্গে তারা আমরণ অনশনও শুরু করেছে।
তারা শিক্ষিকা ফারহানা ইয়াসমিন বাতেনের স্থায়ী অপসারণ বা পদত্যাগ না হওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
এদিকে দুপুরে রবির দায়িত্বপ্রাপ্ত ভিসি আব্দুল লতিফসহ অন্যান্য শিক্ষক ও কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে ছুটে এসে দীর্ঘ সময় ধরে চেষ্টা করেও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ঘরে ফেরাতে পারেননি। এ সময় শাহজাদপুর পৌরসভার মেয়র মনির আক্তার খান লোদী তরু এসে শিক্ষার্থীদের নানাভাবে বোঝানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে ফিরে গেছেন।
শিক্ষার্থীদের একটাই কথা শিক্ষিকা ফারহানা ইয়াসমিনের চাকরি থেকে স্থায়ীভাবে অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত তাদের এ আন্দোলন চলবে। বুধবার দিনভর শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ আর স্লোগানে রবি ক্যাম্পাস মুখর ছিল।
এদিকে এদিন দুপুরে রবি কর্তৃপক্ষ কোনো সমাধান না দিয়ে ক্যাম্পাস ত্যাগের সময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সামান্য সময় ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। এছাড়া শিক্ষকা ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন মঙ্গলবার রাতে একটি মিডিয়ার এক ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে মিথ্যাচার করায় ও তার বক্তব্যে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অসন্তোষ প্রকাশ করে এর তীব্র নিন্দা জানান।
এ বিষয়ে রবির শিক্ষার্থী হাসিব, নাজমুল, হাবিবসহ অনেকেই জানায়, রবির ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষিকা ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন ও আমরণ অনশন চলবে।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী ছাত্ররা জানায়, গত রোববার দুপুরে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের প্রথম বর্ষের রাষ্ট্রবিজ্ঞান পরিচিতি বিষয়ের ফাইনাল পরীক্ষার হলে ঢোকার সময় ওই বিভাগের চেয়ারম্যান ও সহকারী প্রক্টর ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন আগে থেকে কাঁচি হাতে পরীক্ষার হলের দরজার সামনে দাড়িয়ে থাকেন। শিক্ষার্থীরা হলে প্রবেশের সময় যাদের মাথার চুল হাতের মুঠোর মধ্যে ধরা যায়, তাদের মাথার সামনের অংশের বেশ খানিকটা চুল তিনি কাঁচি দিয়ে কেটে দেন। এভাবে একে একে ১৪ জন শিক্ষার্থীর চুল তিনি কাচি দিয়ে কেটে দেন। এরপর পরীক্ষা হলে শিক্ষার্থীদের পরিবার তুলে গালিগালাজ করেন। এতে শিক্ষার্থীরা মানসিক ভাবে ভেঙে পড়ে।
এ ঘটনার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দিলে বিষয়টি ব্যাপক ভাইরাল হয়।
এছাড়া এ ঘটনার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা সোমবার দুপুরে পরীক্ষা বর্জন করে আন্দোলন করার চেষ্টা করলে রবির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষিকা ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন শিক্ষার্থীদের গালিগালাজ করে পরীক্ষার হলে যেতে বাধ্য করেন। এর প্রতিবাদ করলে তিনি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী নাজমুল হাসান তুহিনকে তার চেম্বারে ডেকে নিয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন ও রবি থেকে তাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করার হুমকি দেন।
এতে তার শিক্ষা জীবন শেষ হয়ে যাওয়ার ভয়ে তুহিন সোমবার রাত ৭টার দিকে দ্বারিয়াপুরের শাহমুখদুম ছাত্রাবাসের নিজ কক্ষে দরজা বন্ধ করে ৩৫টি ঘুমের বড়ি একসঙ্গে গুঁড়ো করে সেবন করে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। রাত ৮টার দিকে তার সহপাঠীরা বিষয়টি টের পেয়ে তাকে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে শাহজাদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে এনায়েতপুর খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। বর্তমানে সে ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তার অবস্থা এখনো আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।
এ ঘটনার পর শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে রাতেই রবি ক্যাম্পাসে ছুটে এসে বিক্ষোভ করে। গভীর রাত পর্যন্ত তাদের এ বিক্ষোভ চলে। পরে মঙ্গলবার সকাল থেকে তারা লাগাতার ভাবে এ বিক্ষোভ আন্দোলন শুরু করে।
এ বিষয়ে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের প্রভাষক রাজিব অধিকারী তার বক্তব্যে বলেন, এ ঘটনার পর আমিও দায় স্বীকার করে আমার ওপর অর্পিত অতিরিক্ত দায়িত্ব সহকারী প্রক্টরের পদ থেকে স্বেচ্ছায় অব্যাহতি দিয়েছি। এ ছাড়া এ ঘটনার পর থেকে আমি চরমভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছি। তিনি শিক্ষিকা ফারহানা ইয়াসমিন বাতেনের বিভিন্ন মিডিয়ায় দেওয়া বক্তব্যেও সমালোচনা করে দুঃখ প্রকাশ করেন।
এ বিষয়ে রবির অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত ভিসি ও ট্রেজারার আব্দুল লতিফ তার বক্তব্যে বলেন, শিক্ষার্থীদের এ যৌক্তিক দাবির সঙ্গে আমিও সহমতপোষণ করছি। তবে নিয়মের মধ্যদিয়ে সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে কিছু সময় লাগবে। এ সময় পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ধৈর্য ধরে শান্ত থাকার আহবান জানান তিনি।
এ বিষয়ে রবির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষিকা ইয়াসমিন বাতেন মোবাইল ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।