করোনার প্রাদুর্ভাবে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় সৌন্দর্য হারাচ্ছে মুজিবনগর কমপ্লেক্স। ভাঙতে বসেছে বেশ কিছু অবকাঠামো। যথাযথ দেখভালের অভাবে এমনটি হচ্ছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় অনেকেই। গত ২৬ মার্চ থেকে করোনার প্রাদুর্ভাবে মেহেরপুরে অঘোষিত লকডাউন শুরু হয়।
এরপর থেকে আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন মুজিবনগরসহ মেহেরপুরের সবকটি পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা করেন জেলা প্রশাসন। যা এখনও চলমান রয়েছে। আসন্ন ঈদ-উল আযহাতেও বন্ধ থাকবে বলে নিশ্চিত করেছেন উপজেলা প্রশাসন। দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকার ফলে এবং ঠিক দেখভালের অভাবে সৌন্দর্য হারিয়েছে বেশ কিছু অবকাঠামো।
বিশ্বের দীর্ঘতম মানচিত্রের চারিপাশের লাইটের বক্স প্রায় সব গুলো ভাঙ্গা। আবার কোথাও কোথাও বৃষ্টির পানিতে ময়লার স্তুপ জমে আছে। পরিচর্যা নেই বাগানটিতেও। অযন্ত অবেহেলায় পড়ে আছে বেশ কিছু মৃত গাছ। সেই সাথে পুরো বাগানজুড়ে আগাছাই ভরপুর। এছাড়াও কমপ্লেক্সের ভিতরে মুজিবনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠেও জমেছে হাটু পানি।
মুজিবনগরের স্থানীয় কয়জন ব্যক্তি জানান, দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকার ফলে অসাধু কিছু মানুষের আনাগোনা থাকে মুজিবনগরে। তারাই মূলত এইসব লাইটের বক্স গুলো ভেঙেছে। কয়েকজন আনছার সদস্য পর্যবেক্ষণে থাকলেও তাতে কোন লাভ হয়না। ১৭ এপ্রিল আসলেই মুজিবনগর সুন্দর ভাবে সাজানো হয়। আর ১৭ এপ্রিল শেষ হয়ে গেলে আগের মতই হয়ে যায়। কিন্তু মুজিবনগরের সুনাম ধরে রাখতে সারা বছরই কমপ্লেক্সটা সুন্দর ভাবে সাজিয়ে রাখাটা গুরুত্বপূর্ণ।
মুজিবনগর সৃতিসৌধ পরিচর্যাকারী সুভাস মল্লিক জানান, মুজিবনগর কমপ্লেক্স বাংলাদেশের মধ্যে একটি ঐতিহাসিক স্থান। এই জায়গাটি সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও সাজিয়ে রাখা দরকার। কারণ এখানে দূর-দূরান্ত থেকে পর্যটক আসে। এই জায়গাটি অপরিষ্কার থাকলে নিজের কাছেও খারাপ লাগে।
মুজিবনগর কমপ্লেক্স এ নিরাপত্তায় থাকা আনসার ব্যাটেলিয়ান কমান্ডার জানান, গতবছর ১৭ এপ্রিলের সময় মুজিবনগর কমপ্লেক্স এ লাইটিং সহ বিভিন্ন জিনিস দিয়ে খুব সুন্দর ভাবে সাজানো হয়েছিলো। কিন্তু ১৬ এপ্রিল বিশাল এক ঝড়ে সবকিছু ভেঙে এলোমেলো হয়ে যায়। তার পরে কিন্তু এই বছর করোনার কারণে সেইভাবে ১৭ এপ্রিল পালিত হয়নি। তাই সেভাবে মেরামত করা হয়নি। তবে এই বছরে গণপূর্ত থেকে মানচিত্রের দেয়ালে থাকা বাল্বগুলো নষ্ট হয়ে যাওয়ায় নতুন করে সারানোর জন্য বাল্ব খুলে নিয়ে যায়। কিন্তু অনুষ্ঠান না হওয়ায় পরবর্তিতে সেগুলো লাগানো হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার উসমান গনি বলেন, এখানে দেখভালের জন্য একটাও লোকবল এখন নিয়োগ দেওয়া হয়নি। আমি উপজেলায় নির্বাহী অফিসার হিসাবে যোগদান করার পর কিন্তু উপজেলা পরিষদ থেকে লেবার দেখে মুজিবনগর কমপ্লেক্স পরিষ্কার করে আসছি। তাছাড়া করোনার কারণে সেভাবে পরিষ্কার করা হচ্ছে না। তবে আবার নতুন করে কমপ্লেক্স খুলে দেওয়া হলে সুন্দর ভাবে কমপ্লেক্সটি পরিষ্কার করা হবে। আর বাল্ব এর যে বিষয়টি আছে। সেগুলোর দায়িত্ব কিন্ত গণপূর্তর। আমি গণপূর্ত বিভাগের সাথে কথা বলবো যেন নতুন করে ভেঙে যাওয়া বাল্বগুলো আবার লাগানো হয়।
তবে ১৭ এপ্রিলের আগে সেগুলো লাগানো হয়েছিলো। ১৭ এপ্রিলের পর হয়তো বাল্বগুলো কেটে গিয়েছে কিংবা যেভাবেই হোক চুরি হয়ে যেতে পারে। আর এগুলো নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য আমাদের ৪০ জন আনসার ব্যাটেলিয়ন আছে। আমি তাদের সাথেও কথা বলবো যাতে করে নিরাপত্তা যেন আরও জোরদার করা হয়।