প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, স্বাস্থ্যখাতে এরকম একটা ঝড় উঠবে তা কল্পনার অতীত ছিল। আসলে ভাইরাসসহ সংক্রামক রোগের কোনো পূর্বের অভিজ্ঞতা ছিল না। কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার যে গাইড লাইন অনুসরন করে আমরা স্বাস্থ্য সুরক্ষার নিজস্ব কিছু চিন্তাভাবনা থেকে আমরা কতগুলো পদক্ষেপ সঙ্গে সঙ্গে নিতে থাকি।
তিনি বলেন, আমরা স্কুল, কলেজসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিই। প্রত্যেকের যাতায়াত আমরা সীমিত করে দিই। আমরা বিমানবন্দর, সমুদ্রবন্দর বন্ধ করে দিই। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে এমন সব জায়গায় আমরা বিভিন্ন বিধি নিষেধ আরোপ করি।
গতকাল শনিবার বিকাল ৫টায় স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শুরু হওয়া সংসদ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে সারা বিশ্বে করোনা পরিস্থিতিতে আমরা সংক্ষিপ্ত আকারে অধিবেশন বসাচ্ছি। এটি একটা বিশেষ অধিবেশন হওয়ার কথা ছিল। করোনাভাইরাসে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। এ মহামারি মানুষকে বন্দী করে ফেলেছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে করোনা আসার সম্ভান পেয়েই আমরা নানা ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। বাংলাদেশে করোনা মোকাবিলায় স্বাস্থ্য অধিদফতর ও আইইডিসিআর যথাযথ কাজ করছে। করোনা চিকিৎসা সরকারিভাবে করা হচ্ছে। দেশের সব জায়গায় এখন করোনা নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে দেশে যেন খাদ্য ঘাটতি না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখছে সরকার। বর্তমানে ৫০ লাখ মানুষকে রেশন কার্ড দেয়া হচ্ছে। আরও ৫০ লাখ লোককে রেশন কার্ড দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হলে এক কোটি লোক খাদ্য সহায়তা পাবেন। আর এই এক কোটি লোকের পরিবারের সংখ্যা যদি পাঁচজন হয় তাহলে পাঁচ কোটি লোক খাদ্য সহায়তার আওতায় আসবেন।
মহামারী নভেল করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সারা দেশে অচলাবস্থার মধ্যে সংবিধানের ‘নিয়ম রক্ষায়’ শুরু হয় জাতীয় সংসদের সপ্তম অধিবেশন।
সংসদ অধিবেশনে সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও সরকারি ও বিরোধী দলের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। অধিবেশনে অংশ নেওয়া প্রধানমন্ত্রীসহ সব সদস্যই মাস্ক পরেন। অনেকের মাথায় সার্জিকাল টুপিও দেখা গেছে।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে একজন থেকে আরেকজনের ন্যূনতম দূরত্ব বজায় রাখার স্বার্থে পূর্ব পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তুলনামূলক কম সংখ্যক সদস্য অধিবেশনে অংশ নেন।
এর আগে কোরাম পূর্ণ হওয়ার জন্য ন্যূনতম প্রয়োজন ৬০ জন বা তার সামান্য কিছু বেশি সদস্য সংসদ অধিবেশনে উপস্থিত থাকবেন বলে আগেই সিদ্ধান্ত হয়। সংসদ কক্ষে আইন প্রণেতাদের আসনের মাঝে দূরত্বও দেখা গেছে। এজন্য সিনিয়র সংসদ সদস্য এবং ঢাকার বাইরে অবস্থানকারী সংসদ সদস্যদের উপস্থিত হতে আগেই নিরুৎসাহিত করা হয়।
সংসদে প্রবেশের সময় সংসদ সদস্যসহ সংশ্লিষ্টদের দেহের তাপমাত্রা পরীক্ষা করা হয় বলেও সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
অধিবেশনের শুরুতে স্পিকার নভেল করোনাভাইরাস পরিস্থিতি তুলে ধরেন। করোনভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারীদের জন্য তিনি শোক প্রকাশ করেন।
এই পরিস্থিতির মধ্যেও অধিবেশন আহ্বানের কারণ ব্যাখ্যা করেন স্পিকার। সম্ভাব্য সব স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে অধিবেশন আহ্বান করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এর পরপরই স্পিকার নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে সংসদ অধিবেশনের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করেন।
পরে তিনি সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মনোনয়ন দেন। এ অধিবেশনে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যরা হলেন- আ স ম ফিরোজ, আবুল কালাম আজাদ, এ বি তাজুল ইসলাম ও মেহের আফরোজ চুমকি। স্পিকার- ডেপুটি স্পিকারের অনুপস্থিতিতে এদের মধ্যে অগ্রবর্তীজন অধিবেশনে সভাপতিত্ব করবেন।
এরপর জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন সরকারি কর্ম কমিশনের বার্ষিক প্রতিবেদন উত্থাপন করেন। পরে সংসদে শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন স্পিকার। শোক প্রস্তাব উত্থাপনের পরেই স্পিকার সংসদ অধিবেশন সমাপনীর বিষয়টি সংসদকে অবহিত করেন।
সংসদের এক অধিবেশন শেষ হওয়ার পরবর্তী ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে আবার সংসদ বসার বাধ্যবাধকতা সংবিধানে রয়েছে। সর্বশেষ ষষ্ঠ অধিবেশন শেষ হয়েছিল ১৮ ফেব্রুয়ারি। সেই হিসেবে ১৮ এপ্রিলের মধ্যে সংসদের অধিবেশন বসার বাধ্যবাধকতা ছিল।
অধিবেশন চলাকালে সংসদ ভবনে জনসমাগম এড়াতেও নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে গণমাধ্যমকর্মীদের খবর সংগ্রহে সংসদে না যেতে অনুরোধ করা হয়। এছাড়া অধিবেশনের জন্য অত্যাবশ্যকীয় সংসদ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়া অন্যদের উপস্থিত না হতে নির্দেশনা দেওয়া হয়। সূত্র-বাংলাদেশ প্রতিদিন