মেহেরপুরে প্রতিদিনিই বাড়ছে করোনা রোগীর সংখ্যা। গত ২৪ ঘন্টায় সর্বোচ্চ ২৮ জন শনাক্ত হয়েছেন। সারা দেশের তুলনায় মেহেরপুরে করোনা পজিটিভ এর সংখ্যা কম হলেও গত দশদিনে শনাক্ত হয়েছে প্রায় ৮০ জন। ঈদ- উল-আযহাকে এর জন্য দায়ি করছে অনেকে।
এছাড়াও ঈদ-উল-ফিতরেও বেশ বেড়েছে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন। এ পর্যন্ত করোনা পজিটিভ এর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮৯ জনে। অথচ রোগীর সংখ্যা বাড়লেও কমেছে সচেতনতা। মানা হচ্ছে না সামাজিক দূরুত্ব। স্বাস্থ্যবিধি মানার কোন বালাই নেই। দোকান-পাট শপিংমল, গণ পরিবহন সব ক্ষেত্রেই পাল্টেছে সচেতনতার চিত্র। কোনটাতেই মানা হচ্ছে না সরকারি বিধি নিষেধ।
শুরুর দিকে করোনা প্রতিরোধে প্রশাসনের কড়া নজরদারি থাকলেও বর্তমানে তা কমেছে। দেশে করোনা সংক্রমণের শুরুর দিকে মেহেরপুরে সংক্রমণ ঠেকাতে প্রশাসন যেমন জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল তেমনি মানুষজনও সচেতনভাবে সবকিছু মেনে চলেছেন। তার সফলতাও মিলেছিল। দেশে কোভিড রোগী শনাক্ত হওয়ার ৪০ দিন পর প্রথম মেহেরপুরে করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়। কিন্তু এখন করোনার সংক্রমণ বাড়তে থাকলেও মানুষের মধ্যে সচেতনতা কমছে।
মেহেরপুরে সংক্রমণ এড়াতে গত ২৪ মার্চ থেকে অঘোষিত লকডাউন শুরু হয়। এরপর এপ্রিলের শুরু থেকেই পুরোদমে মাঠে প্রশাসন নেমে পড়ে। জনপ্রতিনিধিরা মাঠে নেমে লিফলেট, মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ করা শুরু করে দেয়। মেহেরপুর পৌরসভার পক্ষ থেকে প্রায় প্রতিদিনই জীবাণুনাশক দিয়ে প্রধান প্রধান সড়ক ধুয়ে দেওয়া হতো। শহরের বিভিন্ন জায়গায় বুথ বসিয়ে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও লিফলেট বিলি করা হতো। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সামনে, মার্কেটের সামনে করা হয়েছিল হাত ধোয়ার ব্যবস্থা। সবার সমন্বয়ে করোনার প্রতিরোধ করে যাচ্ছিল সবাই।
গত ২২ এপ্রিল জেলার মুজিবনগর উপজেলায় প্রথম কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়। সংক্রমণ ঠেকাতে ঐ এলাকাকে লকডাউন ঘোষণা করে জেলা প্রশাসক। তখন গ্রাম-গঞ্জে আরও কড়াকড়ি জারি করা হয়। শহরের অটোরিকশা থেকে শুরু করে দোকানপাট, ওষুধের দোকান, কাঁচাবাজার নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা হয়। সঙ্গে সঙ্গে নগরের মানুষজনকে পৌরসভা, জেলা প্রশাসন, জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন সামাজিক ও ব্যক্তি উদ্যোগে ত্রাণ দেওয়া হয়। এ অবস্থা চলতে থাকে গত ৯ মে পর্যন্ত।
কিন্তু ঈদ-উল-ফিতরকে সামনে রেখে সীমিত পরিসরে দোকানপাট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার পর থেকে বাড়তে থাকে সংক্রমণ।
এ পযন্ত মেহেরপুরে মোট শনাক্তের সংখ্যা ২১৭ জন। এদের মধ্যে সুস্থ্য হয়েছেন ১১৮ জন, মৃত্যুবরণ করেছে ৮ জন, অন্যত্র গিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন ১৮জন, বর্তমানে চিকিৎসাধীন আছে ৭৪জন।
মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. মখলেছুর রহমান বলেন, দুই ঈদই করোনা ছড়িয়ে পড়ার জন্য বেশি দায়ি। বর্তমানে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন শুরু হয়েগেছে। কে আক্রন্ত আর কে সুস্থ এটা বলা মুশকিল। তাই আমাদের সকলকে অবশ্যই সচেতন হতে হবে আগের চেয়ে বেশি।
সিভিল সার্জন ডা. নাসির উদ্দিন বলেন, করোনা প্রতিরোধে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। জন সচেতনতার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিচ্ছি। ইতোমধ্যে যাদের পজিটিভ এসেছে তাদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। জেলা প্রশাসন জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ও পুলিশ বিভাগের সম্বনয়ে আমরা করোনা প্রতিরোধে কাজ করে যাচ্ছি। আমরা আশা করছি খুব অল্প সময়ের মধ্যে মেহেরপুর করোনা মুক্ত হবে।
জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ মুনসুর আলম খান বলেন, করোনা প্রতিরোধে সবার আগে আমাদের নিজেদের সচেতন হতে হবে। আমরা প্রতিনিয়ত সচেতনতা মূলক প্রচার অভিযান চালাচ্ছি। কোন কোন ক্ষেত্রে জরিমানাও করা হচ্ছে। তারপরও অনেকেই স্বাস্থ্যবিধি মানতে নারাজ। আমরা মাঠ পর্যায়ে আরও কড়া পদক্ষেপ গ্রহন করবো। সেই সাথে সবাইকে সচেতন হতে হবে।
মেপ্র/আরপি