পর্ব-১ এর পর থেকে
ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম এমন কিছু করার পরিকল্পনা করলেন, যা সমাজের মানুষকে তাদের গুলো চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেবে। শহরের সবাই যখন চলে গেল উৎসবে ইব্রাহিম আলাইহিসালাম গেলেন মন্দিরে। যেখানে তার বাবার নিজ হাতে তৈরি বহু মূর্তির অবস্থান। সেখানে গিয়ে তিনি দেখলেন নানা আকৃতির, নানা ধরনের মূর্তি রাখা। সবার মাঝখানে রাখা ছিল সবচেয়ে বড় মূর্তিটি। যে কিনা ছিল তাদের প্রধান দেবতা। এরা যদি আসলেই মূর্তি না হয়ে দেবতা হয়ে থাকে তাহলে তাদেরকে যদি আমি আক্রমন করি তারা নিশ্চয়ই নিজেদের রক্ষা করতে পারবে। এই বলে ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম বিরাট হাতুড়ি নিয়ে একে একে সব মূর্তি ভাঙতে শুরু করলেন। স্বাভাবিকভাবেই মূর্তিগুলো নিশ্চুপ। যার প্রাণ নেই তার প্রতিক্রিয়া থাকবে কী করে। একে একে সব মূর্তি ভেঙে তিনি প্রধান মূর্তির গলায় ঝুলিয়ে দিলেন। একটি ঘর চারপাশে শত শত মূর্তির ভাঙা টুকরো মাঝখানে শুধু একটি প্রকান্ড মূর্তি তার গলায় ঝুলছে এক বিরাট হাতুড়ি। আর তার কিছুদূর সামনে দাঁড়িয়ে আছেন একজন যুবক। নাম তার ইবরাহীম আলাইহিস সাল্লাম এবং তাঁর হাত ধরেই পাল্টে যায় গোটা মানবজাতির ইতিহাস। শহরবাসীরা ফিরে এসে হতবাক। তাদের এমন সর্বনাশ কে করল। তারা যখন উৎসবে আনন্দ করছিল তখন কে এসে তাদের সব দেবতাদের এভাবে ধ্বংস করে দিল। একমাত্র আযারের ছেলে ইব্রাহিমই তো এলাকায় ছিল। বাকি সবাই তো তাদের সাথেই এই উৎসবে উপস্থিত ছিল। সবাই মিলে বলল ইব্রাহিমকে ডাকা হোক সে নিশ্চয়ই এ ব্যাপারে জানে। ইবরাহীম আলাইহিস সাল্লাম কে সবার সামনে হাজির করা হলো। এবং জিজ্ঞেস করা হলো এ ব্যাপারে কিছু জানে কিনা।
ইবরাহীম আলাইহিস সাল্লাম বললেন: আমি কি করে জানব, তোমরা বরং তোমাদের বড় দেবতাকে তাকে জিজ্ঞেস করো। হাতুরিটাতো ওর গলায় ঝুলছে। তার কথা শুনে শহরবাসীরা আরো রেগে গেল। এই মূর্তি কি করে বাকি মূর্তিদের ভাঙবে। যখন সে নিজেই নড়তে পারে না। যখন তার কোন প্রাণ নেই। ইবরাহীম আলাইহিস সাল্লাম বললেন: তোমরা নিজেরাই যখন জানো এই মূর্তিগুলো জীবিত নয়, তারা স্রেফ পাথর। তাহলে তাদের কেন অযথা প্রার্থনা কর। ইবরাহীম আলাইহিস সাল্লাম এর এই প্রশ্নগুলো সমাজের মানুষদের এতটাই ভাবিয়ে তুললো, যে তারা সংশয়ের মধ্যে পড়ে গেল।
আল্লাহ সূরা আম্বিয়াতে বলেন: এখানে আল্লাহ তাআলার যে শব্দ ব্যবহার করেছেন তারা তাদের অনুভূতি গুলোকে একেবারে আমাদের চোখের সামনে তুলে ধরতে সক্ষম হয়। আল্লাহ বলেন তারা নিজেদের অন্তরের দিকে তাকাল অর্থাৎ ইব্রাহিম আলাইহিস সালামের অত্যন্ত যুক্তিসংগত কথা শুনে তারা আসলে গভীরভাবে ভাবতে শুরু করল। এবং একপর্যায়ে তারা একে অপরকে দোষারোপ করা শুরু করলো। বলতে লাগলো নিশ্চয়ই তোমরা অন্যায় করেছো।
কিন্তু এরপর আল্লাহ বললেন: এই আয়াতের আক্ষরিক অনুবাদ হল, এরপর তারা তাদের মাথার ওপর ঘুরে গেল এখানে মূলত আল্লাহ বোঝাতে চেয়েছেন যে পরক্ষনেই তারা তাদের অবস্থান থেকে পুরোপুরি সরে আসলো। ইংরেজিতে যাকে বলা হয় ওয়ান এইট্টি ড্রিগ্রি ট্রান নেওয়া। তারা তাদের প্রথা, তাদের সামাজিক স্ট্যাটাস, পূর্বপুরুষদের রীতিকে প্রাধান্য দিল সত্যকে ঢেকে দিল এবং সবাই সম্মিলিতভাবে আওয়াজ তুলে বললো, ইব্রাহিমকে জ্যান্ত পুড়িয়ে ফেলা হোক। শহরের সবাই মিলে জ্বালানির কাঠ জোগাড় করতে লাগল। এবং ধীরে ধীরে কাঠের এক বিরাট স্তুপ হয়ে গেলো। এরপর তারা সেখানে আগুন জালালো এবং সে আগুন এত প্রকান্ড আকার ধারন করলো যে তারা বুঝতেই পারছিলো না। যে ইব্রাহিম আলাইহিস সালামকে সেই আগুনে নিক্ষেপ করবে কিভাবে। (চলবে…)
সংকলনে: প্রকাশক,মেহেরপুর প্রতিদিন।