পর্ব-২ এর পর থেকে
অতঃপর সিদ্ধান্ত হলো তাকে একটি বড় আকারের ক্যাটাপল ব্যবহার করে আগুনে নিক্ষেপ করা হবে। যখন ইব্রাহিম আলাইহিস সালামকে ক্যাটাপলের সাথে বাধা হলো তিনি তার সবটুকু ভরসা রাখলেন আল্লাহর উপর। এবং দোয়া করে বললেন: আমি আল্লাহর উপর ভরসা করছি, তিনিইতো শ্রেষ্ঠ সাহায্যকারী। এবং ইব্রাহিম আলাইহিস সালামকে আগুনের দিকে নিক্ষেপ করা হলো।
বৃষ্টির ফেরেশতা ভাবতে লাগল তখন আমার কাছে বৃষ্টি নিয়ে নেমে যাওয়ার হুকুম আসবে। আর কখন আমি এই আগুনটাকে নিভিয়ে দেব। কিন্তু আল্লাহর পরিকল্পনা ছিল ভিন্ন। সেই মুহূর্তের ভেতরেই তিনি আগুন কে হুকুম করে বললেন: আগুন তুমি ঠান্ডা হয়ে যাও। আর ইব্রাহিমের জন্য নিরাপদ হয়ে যাও এবং মুহূর্তের ভেতরেই আগুন তার রবের হুকুম পালন করে ঠান্ডা হয়ে গেল। এবং সে ছিল এক প্রশান্তিময় ঠান্ডা এবং ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আল্লাহ যদি আগুনকে শুধু অর্থাৎ ঠান্ডা হতে বলতেন তাহলে আগুন তার রবের হুকুম পালনের তাগিদে এমনভাবে ঠান্ডা হতো যে তাতে ইব্রাহিম আলাইহিসালাম আঘাত পেতেন। কিন্তু তার প্রতি সহানুভূতিশীল যে তিনি আগুনকে হুকুম করার সময় যোগ করলেন অসালামা এবং নিরাপদ শান্তিময় হয়ে যাও।
য়ার কারণে ইব্রাহিম আলাইহিসালাম ছিলেন সেখানে পুরোপুরি নিরাপদ। সবাই যখন আগুনের দিকে চেয়ে ছিল হয়তো ভাবছিল তাদের সমাজের ছেলেটা বখে যাওয়ার পর কি এক পরিণতি হলো। যখন ভাবছিল এই আগুন নিভে গেলে হয়তো ইব্রাহিমের লোক খুঁজে পাওয়া যাবে না। সেই ভাবনাগুলো ভেঙে দিয়ে অশরীরীর নেয় পাহাড়ের মতো উঁচু দাও দাও করে জ্বলতে থাকা আগুন থেকে হেঁটে হেঁটে পুরোপুরি অক্ষত অবস্থায় বের হয়ে আসেন ইবরাহীম আলাইহিস সালাম। সেই ঘটনার পর থেকে কেউ ইবরাহীম আলাইহিস সালামকে ¯পর্শ করার সাহস পেত না। সবার থেকে দূরে দূরে সরে থাকতে এবং তারই অলৌকিক ঘটনার কথা চারিদিকে ছড়িয়ে পরল।
সে সময় ব্যাবিলনের রাজার নাম ছিল নামরুদ। সে ছিল এক কঠোর স্বৈরাচারী শাসক। যার দাম্ভিকতা এতটা ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছিল সে নিজেকে প্রভু বলে দাবি করত। যখন তার কানে ইবরাহীম আলাইহিস সালামের আগুন থেকে জীবিত বের হয়ে আসার ঘটনা পৌঁছাল সে তাকে ডেকে পাঠালো। ইব্রাহিম আলাইহিসালাম রাষ্ট্রপর্যায় তৌহিদের বাণী প্রচার করার সুযোগ গ্রহণ করলেন। নমরুদ ইব্রাহিম কে জিজ্ঞেস করল, তুমি কার উপাসনা কর? আজ পর্যন্ত যত মানুষকেই এই প্রশ্ন করেছিল সবাই একই উত্তর দিয়েছিল আপনি আমাদের প্রভূ হে নমরুদ। কিন্তু ইব্রাহিম আলাইহিস সালামকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমার রব তিনি যিনি জীবন দেন এবং মৃত্যু দেন। নমরুদ এতটাই উদ্ধত মানসিকতা ধারণ করলো যে সে বললো আমি তো জীবন দেই এবং মৃত্যু দান করি।
এবং এরপর সে একজন মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত ব্যক্তি কে মুক্ত করে দিল এবং একজন নিরীহ ব্যক্তি কে মৃত্যুদন্ড দিয়ে দিলো এবং এর মাধ্যমে বোঝাতে চাইল জীবন এবং মৃত্যু তারই হাতে। ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম যখন দেখলেন নমরুদ এতটাই মাথামোটা যে সে তার এই বিচারহীনতাকে জন্ম এবং মৃত্যু দেওয়ার ক্ষমতা হিসেবে মনে করছে। তিনি তার রবের আর একটি বর্ণনা দিলেন। তিনি বললেন, আমার রবের হুকুমেই সূর্য পূর্ব দিক হতে উদয় হয় আর পশ্চিম দিক থেকে অস্ত যায়। তুমি কি এর বিপরীত করে দেখাতে পারবে। নমরুদ আসলেই নিজেকে সত্যিকার অর্থেই প্রভু ভাবত। সে কথা দিয়ে ইব্রাহিম আলাইহিস সালামকে হারাতে চাচ্ছিল না।
কারণ সেটা হলে সে সহজেই বলে দিতে পারতো আসলে সূর্য আমার হুকুমেই পূর্বদিক হতে উদয় হয়। পশ্চিম দিকে অস্ত যায়। কিন্তু সে যেহেতু আসলেই নিজেকে প্রভু মনে করত ইব্রাহিম আলাইহিস সালামের কথা শোনার পর প্রথমবার তার মাথায় এই ব্যাপারটা খেলা করলো আসলেই তো সূর্য পূর্ব দিকে ওঠে আর পশ্চিম দিকে অস্ত যায়। আমি তো কখনো এমনটা হওয়ার জন্য কখনো হুকুম করিনি। আর আমার হুকুমেতো এটা পরিবর্তন হবে না। তাহলে কার হুকুমে প্রতিনিয়ত এমনটা ঘটছে। (চলবে…)
সংকলনে: প্রকাশক,মেহেরপুর প্রতিদিন।