সুবিধাবঞ্চিত হরিজন শিশু। পড়ালেখার সুযোগ হয় না তাদের। দারিদ্র্যের সঙ্গে যুদ্ধ করে বেড়ে ওঠে ওরা। দলিত এই জনগোষ্ঠীর শিশুদের জন্য কুষ্টিয়া শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ের পাশে ‘মঙ্গলালোকে’ নামের একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে।
সমাজের অবহেলা আর বৈষম্যের শিকার এ শিশুদের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়াতেই স্কুলটি গড়ে তুলেছেন মৌবন পরিচালিত নারী বাতায়ন নামের এক সংগঠন।
খোলা আকাশের নিচে চট বিছিয়ে বসে পড়ালেখা করবে হরিজন সম্প্রদায়ের ছেলেমেয়েরা।
গতকাল শনিবার বিকেলে সেখানকার অর্ধশতাধীক শিশুদের মাঝে খাতা, কলম, রং পেন্সিল, স্কেল, শিক্ষা উপকরণ, স্কুল ব্যাগ, খেলাধুলার জন্য ফুটবল ও লুডু বিতরণ করা হয়।
এ উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে নারী বাতায়নের এ্যাডমিন মোস্তাফা স্বপ্নীল, নারী বাতায়নের কর্মকর্তা আশিকুজ্জামান রনি, মৌবনের এক্সিকিউফ অফিসার মীর তনিমা, অনিক মাহমুদ, শিক্ষক শিলা আক্তার, জাতীয় শিশু সংগঠন (এনসিটিএফ) কুষ্টিয়ার সাধারণ সম্পাদক লামিয়া সুলতানা পাবনি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এরআগে এখানে একটি এনজিও দ্বারা পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলো। কিন্তু কয়েক বছর ধরে সেটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত ছিলো শিশুরা।
আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে বিরাজ সত্যসুন্দর স্লোগনকে সামনে রেখে ‘মঙ্গলালোকে’ নামে এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে শিশুরা প্রাথমিক শিক্ষায় শিক্ষিত হবে এবং সুন্দর হাতের লেখা ও ছবি অঙ্গন শিখবে হরিজন সম্প্রদায়ের ছেলেমেয়েরা।
লেখাপড়া করে অনেক বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখছে এ স্কুলের শিক্ষার্থী সিবা বাঁসফোর, অনিল বাঁসফোরসহ আরও অনেকে।
বাসিন্দা অভিভাবক বেগম বাঁসফোর বলেন, হরিজন সম্প্রদায়ের পড়াশোনা-বঞ্চিত ছেলেমেয়েরা এ স্কুলটিতে এখন পড়তে পারবে। এ যেন আমাদের খুশীর সংবাদ। আগে এ সম্প্রদায়ের ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা থেকে পিছিয়ে ছিল কিন্তু মৌবনের উদ্যোগে নারী বাতায়ন এখানে আমাদের ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার ব্যবস্থা করায় তাদের ধন্যবাদ।
নারী বাতায়নের সভাপতি ও মৌবনের নির্বাহী পরিচালক সাফিনা আন্জুম জনী বলেন, এ সম্প্রদায়ের শিশুরা অবহেলিত ও বৈষম্যের শিকার। তাদের পড়ালেখায় পারদর্শী করে তুলতে পারলেই তারা মানুষের মতো মানুষ হবে। তিনি আরও বলেন, হরিজন আমাদের দেশে একটি অবহেলিত সম্প্রদায়। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থানসহ সব সুবিধা হতে তারা বঞ্চিত। হরিজন সম্প্রদায়ের সাধারণ মানুষের মতো বাঁচার অধিকার রয়েছে। এটি সকলকে ভেবে দেখতে হবে।’ আমরা আমাদের সাধ্যমতো হরিজন সম্প্রদায়ের কোমলমতি শিশুদের শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টিতে সব ধরনের সহযোগিতা চেষ্টা করবো বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
নারী বাতায়নের কর্মকর্তা আশিকুজ্জামান রনি বলেন, হরিজন শিশুদের বর্ণমালা শেখার আগ্রহ আছে। কিন্তু বয়স্কদের মধ্যে অধিকাংশেরই শিক্ষা না থাকায় শিশুদের পড়াশোনা করানোর বিষয়ে তাঁদের আগ্রহ কম। এই নারী বাতায়নের মাধ্যমে তারা অন্তত প্রাথমিক শিক্ষাটা সম্পন্ন করতে পারবে।