ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডুতে ভায়না ইউনিয়ন ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক শিখরকে মারধরের ঘটনায় বিএনপির এক সমর্থককে কুপিয়ে আহত করেছে আওয়ামী লীগ সমর্থক নেতাকর্মীরা।
এ ঘটনার জেরে উপজেলার লক্ষীপুর গ্রামে অন্তত অর্ধশতাধিক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও সমর্থকদের বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয়েছে। লুটপাট করা হয়েছে শতাধিক বাড়িঘরের আসবাবপত্র, নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার ও গরু ছাগল। বিএনপি সমর্থকরা এসব ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে বলে দাবি আওয়ামী লীগ সমর্থকদের। আজ রোববার ভোরে উপজেলার ভায়না ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়রা জানায়, গতকাল শনিবার বিকেলে ওই এলাকার বাঁকচুয়া লক্ষ্মীপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠে ভায়না ইউনিয়ন ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক শিখরকে মারধর করে ওই ইউনিয়নের স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি নাসিরুল ইসলাম ও ছাত্রদলের সভাপতি রিপনসহ কয়েকজন।
এ ঘটনার জেরে সন্ধ্যায় লক্ষ্মীপুর গ্রামের ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিন্টু মালিতাকে কুপিয়ে আহত করে আওয়ামী লীগ সমর্থকরা। এ নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরে রোববার ভোরে ওই ইউনিয়নের তৈলটুপি, ভায়না, বাগআচড়া, দোবিলা, মালিপাড়াসহ বিভিন্ন গ্রাম থেকে কয়েকশত বিএনপি নেতাকর্মী এসে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের বাড়িঘর ভাঙচুর এবং লুটপাট করে।
উপজেলা কৃষকলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিপুল হোসেন দাবি করেন, ভোরে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে গ্রামের ঘুমন্ত নিরীহ আওয়ামী লীগ সমর্থকদের বাড়িঘরে অতর্কিত হামলা করে বিএনপি সমর্থকরা। এ সময় অন্তত অর্ধশতাধিক বাড়িতে ভাঙচুর ও তান্ডব চালোনা হয়। প্রায় শতাধিক বাড়ির আসবাবপত্র, নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার, ও গরু ছাগল লুট করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
তবে ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ অস্বীকার করে ভায়না ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক সিরাজুল ইসলাম মাস্টার বলেন, কে বা কারা এসব করেছে সেটি আমরা জানিনা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমাদের নেতাদের নামে মিথ্যা প্রচারণার কারণে আমাদের কয়েকজন কর্মীর সাথে আওয়ামী লীগের সমর্থকদের বাকবিতন্ডা হয়। তার জেরে আমাদের মিন্টু মালিতা নামে এক নেতাকে কুপিয়ে আহত করেছে। আমরা তার চিকিৎসা নিয়ে ব্যস্ত।
ভায়না ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাজমুল হুদা তুষার দাবি করেন, গতকাল শনিবার রাত থেকেই আওয়ামী লীগ সমর্থকদের বাড়িঘরে হামলা ও লুটপাটের পরিকল্পনা চলছিলো বলে আমরা জানতে পেরেছিলাম। পরিস্থিতি সামাল দিতে আমরা অনেকবার সেনাবাহিনী, পুলিশ ও প্রশাসনকে জানিয়েছি । তবে কেউ সেখানে যায়নি। ভোর ৫টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত একটানা লক্ষ্মীপুর ও বাঁকচুয়া গ্রামে বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট চলে। যদি আগে থেকেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আমাদের কথার গুরুত্ব দিতো তাহলে এই তান্ডব হতো না। এখন আতঙ্কে শত শত মানুষ বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেছে বলেও দাবি করেন তিনি।
এদিকে খবর পেয়ে বেলা সাড়ে বারোটার দিকে ঘটনাস্থলে যান সেনাবাহিনীর সদস্যরা। তারা গ্রামের লোকজনের সাথে কথা বলেন। শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে উভয়পক্ষকে আহব্বান জানান।
হরিণাকুণ্ডু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ জিয়াউর রহমান বলেন, খবর পেয়ে সেখানে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে ওই এলাকার পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। কোনো পক্ষ থানায় মামলা বা অভিযোগ দেয়নি। তবে অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।