বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দেলনের মুখে শেখ হাসিনার পতনের পর ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডুর বিভিন্ন গ্রামে রাজনৈতিক প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে ব্যক্তিগত শত্রুতার জেরধরে প্রশাসনিক সংকটকালীন সময়ে বিভিন্ন গ্রামে আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীদের উপরে হামলা বাড়িঘরে লুটপাট ও অগ্নি সংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
গত ৫ আগস্ট থেকে প্রতিদিন এই ঘটনা অব্যাহত আছে। ভোক্তভোগীদের তথ্যমতে গত ৯ আগস্ট কুলবাড়িয়া বাজারের ব্যবসায়ী কামাল হোসেন (৬০) কে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে আহত করলো একই গ্রামের বিএনপির কর্মী রফিকুল ইসলাম রফি। কামাল হোসেন গত শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে ফেরার পথে কুলবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে পৌছালে আকস্মিক ভাবে তাকে রড দিয়ে পিটিয়ে আহত করে। কামাল হোসেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা বলে জানা গেছে। আহত অবস্থায় তার স্বজনরা তাকে উদ্ধার করে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তিকরে। আহত কামাল কুলবাড়িয়া গ্রামের মৃত শুকুর আলী মন্ডলের ছেলে।
আহত কামাল হোসেন জানান, কুলবাড়িয়া গ্রামের মৃত জের আলী মন্ডলের ছেলে ও সাবেক বিএনপি নেতা মৃত মসলেম মন্ডলের ছোট ভাই রফি মন্ডল আমাকে কুলবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে থেকে সাইকেল চালানো অবস্থায় মাজায় লোহার রড দিয়ে বাড়ি মেরে ফেলে দেয়।এরপর বাম হাতে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলাপাথারি মারতে থাকে এসময় আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। পরে স্থানীয় লোকজন আমার পরিবারকে খবর দিলে আমার ছেলে আমাকে উদ্ধার করে নিয়ে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। আমি বর্তমানে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছি।
এদিকে হরিণাকুণ্ডু উপজেলার তাহেরহুদা ইউনিয়নের ভবানীপুর গ্রামের মৃত নজীর বীরের ছেলে বীর বছিরের বাড়ীতে পুরাতন বিরোধের জের ধরে জামায়াত কর্মী এনায়েতুল্লার নেতৃত্বে একদল জামায়াত কর্মী হামলা চালায়। স্থানীয়রা জানান বীর বছিরের সাথে এনায়েতুল্লার পূর্বশত্রুতা ছিল। এর জের ধরে এনায়েতুল্লা বছিরের কাছে পাওনা টাকা দাবি করে তখন বীর বছির রাগান্বিত হয়ে তার উপরে তেড়ে আসে এবং মারধর করার চেষ্টা করে এসময় এনায়েতুল্লাহ তার কর্মী সমর্থক নিয়ে বছিরের বাড়িতে হামলা চালাই এবং বাড়িঘরে ব্যাপক ভাংচুর ও লুটপাট করে তবে বছিরকে হাতে না পাওয়ায় তার প্রাণে রক্ষা হয়। বছির আওয়ামী লীগের কর্মী বলে জানা যায়। এব্যাপারে উভয় পক্ষ থানায় মামলা দায়েরের চেষ্টা করেও থানায় কর্মবিরতি থাকার কারনে তা পারেননি।
এছাড়া বিভিন্ন ইউনিয়নে জামায়াত বিএনপি’র উৎশৃঙ্খ কিছু কর্মী-সমর্থকদের হামলার ভয়ে আওয়ামী লীগের নেতা কর্মী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা গা ঢাকা দিয়েছে।
এছাড়া গত ৫ আগস্ট উপজেলার গুড়পাড়া ভাতুড়িয়া গ্রামে দুইটি বাড়িতে ভাংচুর ও অগ্নি সংযোগ করেছে স্থানীয় জামায়াত ও বিএনপির কর্মীরা। দুর্বৃত্তরা ভাংচুর ও অগ্নি সংযোগ করেছে এ্যাড. সালমা ইয়াসমিনের গ্রামের বাড়ি ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের কর্মী রবিউল ইসলামের বাড়িতে। এব্যাপারে তারা ভয়ে মুখ খুলতে পারছেনা। এ্যাড, সালমা জানান আমার কারও সাথে কোন শত্রুতা নেয় আমার দোষ আমি একজন আওয়ামী লীগের কর্মী। সন্ত্রাসীরা আমার গ্রামের বাড়িঘরে ভাংচুর লুটপাট করেছে এবং আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। সেখানে ভাই ও বৃদ্ধা মা থাকেন। এছাড়া চাদপুর ইউনিয়নের বেড় বিনি, শেখপাড়া বিন্নিসহ বিভিন্ন গ্রামে আওয়ামী লীগের কর্মী সমর্থকদের বাড়িঘরে হামলার ঘটনা ঘটছে।
এ ব্যাপারে জামায়াত বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে আমরা শান্তিতে বিশ্বাসী সমাজে শান্তি বজায় রাখতে চাই। কেউ ব্যক্তিগত ভাবে অপরাধ করলে আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি। তারা জানান, যদি পুরাতন কোন দেনা পাওনা থাকে সেটা আইনের মাধ্যমে সমাধান করার চেষ্টা করেন। কেউ আইন হাতে তুলে নেবেননা। কারও গায়ে হাত দেবেন না এর দায় ভার দল নিবে না, দল থেকে তাকে বহিস্কার করা হবে বলে জানান।