চট্টগ্রামে হাটহাজারী বাসস্ট্যান্ড চত্বরে সালেম (২০) নামে এক মাদ্রাসাছাত্রকে মারধর করেন ছাত্রলীগকর্মীরা।
রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে হাটহাজারী বাসস্ট্যান্ড চত্বরে এ ঘটনা ঘটে।
মাদ্রাসাছাত্র সালেম হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা ইদ্রিসের ছেলে বলে জানা গেছে।
এদিকে হাটহাজারী মাদ্রাসার আন্দোলনরত ছাত্র ও হেফাজত নেতৃবৃন্দরা চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে হরতাল পালিত হচ্ছে। সকাল থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত উপজেলার কোথাও হরতালের সমর্থনে বিক্ষোভ মিছিল দেখা যায়নি। তবে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে হাটহাজারী বাসস্ট্যান্ড চত্বরে ছাত্রলীগের কর্মীরা মাদ্রাসাছাত্র সালেমকে মারধর করে।
এ সময় দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে এবং ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সরিয়ে দেন। ওই ঘটনার রেশ ধরে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি মহাসড়কের ত্রিবেণী মোড়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা পুলিশের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা জড়ালে চট্টগ্রামের এসপি রাশিদুল হক বিষয়টি সুরাহা করেন।
ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা ইদ্রিস জানান, মাদ্রাসাছাত্ররা হাটহাজারী বাসস্ট্যান্ড চত্বরে অবস্থান নিলে ছাত্রলীগকর্মীরা তাদের বাধা দেন। এ সময় তারা আমার ছেলেকে মারধর করেন। পরে পুলিশ সদস্যরা তাকে উদ্ধার করেন এবং ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সরিয়ে দেন।
এ ছাড়া বেলা সাড়ে ১০টার দিকে চট্টগ্রাম রাঙামাটি মহাসড়কে ব্যারিকেড দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ সড়ক বন্ধ করে দেওয়ার পর পর হাটহাজারী মাদ্রাসার সামনে আবারও বিক্ষোভ করেন ছাত্ররা।
হরতালের কারণে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। এর আগে থেকেই সংঘর্ষের কারণে চট্টগ্রাম খাগড়াছড়ি মহাসড়ক বন্ধ করে দেন মাদ্রাসাশিক্ষার্থীরা।
এদিকে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে হাটহাজারীর বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ, র্যা ব ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে সাত প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত গত শুক্রবার দুপুর থেকে মাদ্রাসাছাত্র ও পুলিশের সংঘর্ষে চারজন নিহতের হওয়ার ঘটনা থেকে চট্টগ্রাম মহাসড়ক বন্ধ রয়েছে আজ রোববার বেলা ১০টা থেকে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধের চেষ্টা করছেন হরতাল পালনকারীরা।
হেফাজতের ঢাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতালের কারণে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স ও বয়স্ক মানুষদের দুর্ভোগ বাড়ছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, যাত্রী সাধারণ পায়ে হেঁটে নিজেদের গন্তব্যে পৌঁছেছেন। সকাল ৬টা থেকে সাড়ে ৭টা পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কোথাও গাড়ি চলাচল নেই, মাঝেমধ্যে অটোরিকশা চলাচল করছে। সড়কে পুলিশের সাজায়া যানসহ পুলিশ, র্যা ব বিজিবি টহল দিতে দেখা গেছে।
রোববার সকাল পৌনে ৭টার দিকে কথা হয় পোশাককর্মী সালমা বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, হরতালের কারণে পায়ে হেঁটে চাকরিতে যেতে হচ্ছে। আমাদের কষ্টের শেষ নেই। এগুলো দেখবে কে? বললেন তিনি।
ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন মো. আবু তাহের। হাটহাজারী থানার সামনে তার সঙ্গে দেখা হলে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, আমার বাড়ি ফটিকছড়ি উপজেলার খিরাম এলাকায়। চিকিৎসার জন্য ঢাকায় গিয়েছিলাম। কিন্তু হরতালের মধ্যে ঢাকা থেকে আসতে পারলেও চট্টগ্রাম শহর থেকে বাড়ি যেতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বিশেষ করে হাটহাজারী সদর থেকে।
হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রুহুল আমিন যুগান্তরকে বলেন, হরতালের শুরু থেকেই আমরা মাঠে আছি। তা ছাড়া তিন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে সাত প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে হাটহাজারী মডেল থানার ওসি মো. রফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার জন্য সতর্ক রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। উপজেলার প্রতিটি পয়েন্ট পুলিশে মোতায়েন রয়েছে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সাদা পোশাকেও পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।