এক সময়ের স্বচ্ছল গরু ব্যবসায়ী, রয়েছে দ্বোতলা বাড়ি। সংসারে রয়েছে স্ত্রী ও প্রতিষ্ঠিত সন্তান সন্ততি। ছেলে ও স্ত্রীর প্রতারণার শিকার হয়ে জমিজমা বাড়িঘর সব হারিয়ে পথে পথে ঘুরে বেড়ানো ছলেমান অবশেষে ঠাঁই নিয়েছে হাসপাতালে। ঘরের গেটে তালা দেয়ার কারনে এক মাস ধরে হাসপাতালে কাটছে বৃদ্ধ ছলেমানের দিন। বৃদ্ধ ছলেমান(৬৫) মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলার মটমুড়া ইউনিয়নের মহম্মদপুর গ্রামের মৃত খেদু বিশ্বাসের ছেলে।
বৃদ্ধ ছলেমান জানান, আমার দুই ছেলে। বড় ছেলে সুমন লেখাপড়া শেষে ঢাকায় একটি গার্মেন্টসে বড় পদে চাকরি করে। ছোট ছেলে রিপন গ্রামে কৃষি কাজ করে। বড় ছেলের সাথে ঢাকায় থাকে স্ত্রী ইশারন নেছা।বছর খানেক আগে আমার ব্রেইন স্ট্রোক হয়। আমাকেও আমার বড় ছেলে ঢাকায় নিয়ে যায়। কয়েকমাস পর অপারেশন করার কথা বলে ডাক্তারখানায় নিয়ে যায়। এবং একটি ষ্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করিয়ে নেয় বড় ছেলে সুমন ও স্ত্রী ইশারন নেছা।
তিনমাস ঢাকায় থাকার পর আমাকে আবার ছোট ছেলে রিপনের কাছে গ্রামে রেখে যায়। কিছুদিন পর আমার ছোট ছেলে জানতে পারে ১৩ শতক জমিসহ দুই তলা ঘরসহ সব কিছু লিখে নিয়েছে। পরে বিষয়টি বড় ছেলেকে জানতে চাইলে সব রেজিস্ট্রি করে নেয়ার কথা স্বীকার করে এবং ঘরবাড়ি ছেড়ে চলে যেতে বলে। আমি বাড়ি ছাড়তে না চাইলে ঢাকায় থেকে বাড়ি এসে আমাকে জোর করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে ঘরে তালা ঝুলিয়ে দেয়। আমি নিরুপায় হয়ে বেশ কয়েকদিন রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়িয়েছি। ভিক্ষাও করতে হয়েছে। আমি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে গাংনী আমাকে গাংনী উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান বাবলুর তত্ত্বাবধানে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করায়। একমাস যাবৎ আমি গাংনী হাসপাতালের বেডে পড়ে আছি। এপর্যন্ত স্ত্রী সন্তান আমার কোনো খোঁজ নেয়নি। হাসপাতালের খাবার খায় আর বেডে শুয়ে থাকি। ডাক্তার আসে,ছুটি দেয়। আমি আবার ভর্তি হই। এভাবেই এক মাস হাসপাতালেই দিন যাপন করছি।
ছলেমানের ছোট ছেলে রিপন আলী জানান,আমি আমার বাবাকে আমার কাছে রাখতে চাই। কিন্তু তিনি আমার কাছে থাকতে চাইনা। জমি ও বাড়ি লিখে নেয়ার কারনে আমার বাবা পাগল প্রায়। আমি আমার বড় ভাই সুমনের বিচার দাবী করছি।
মহম্মদপুর গ্রামের মো: রকিবুল ইসলাম বলেন, ছলেমানের বিষয়টি বেশকিছু দিন আগে শুনেছিলাম। তবে একজন অসুস্থ ও বৃদ্ধ মানুষকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়া খুবই অমানবিক।
পার্শবর্তী গ্রামের সমাজ সেবক ও সাংবাদিক জুলফিকার আলী বলেন, ছলেমান যখন অসুস্থ হয়ে বিছানায় কাতরাচ্ছে, তখন তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়ার বিষয়টি অমানবিক। এখন সে হাসপাতালে ঠাঁই নিয়েছে। প্রতারকদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। যে পিতা মাতা সন্তানকে বড় করেছে,লেখাপড়া শিখিয়েছে। সেই বাবা আজ বাড়িতে আশ্রয় না পেয়ে পথে পথে ঘুরছে। ছলেমানের বড় ছেলে সুমন ও স্ত্রী ঢাকায় থাকায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
মটমুড়া ইউপি সদস্য পলিয়ারা খাতুন বলেন,ছলেমান একসময় গরু বেচা কেনা করে ভাল টাকা আয় করতো। এখন সে প্যারালাইজড রোগী। তাকে তার স্ত্রী ও বড় ছেলের যে প্রতারণা করেছে তাদের শাস্তি হওয়া দরকার।
মটমুড়া ইউপি চেয়ারম্যান সোহেল আহমেদ বলেন, ছলেমানের সাথে তার ছেলে ও স্ত্রী যা করেছে তা একজন মানুষ করতে পারেনা। সুমন ও তার স্ত্রীর সাথে যোগাযোগ করার চেস্টা করছি। যোগাযোগ করতে পারলে ছলেমানকে বাড়িতে তুলে দেয়ার চেস্টা করবো।
উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান বাবলু বলেন, বৃদ্ধ ছলেমান অসুস্থ হয়ে রাস্তার পার্শ্বে পড়েছিল।আমি তাকে হাসপাতালে ভর্তি করি। এখনও আমি তাকে নিয়োমিত দেখাশোনা করছি। তার ছেলের সাথে যোগাযোগ করতে পারছিনা।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সুপ্রভা রানী জানান, একমাস হলো ছলেমান নামের একব্যক্তি পুরুষ ওয়ার্ডের ৫ নম্বর বেডে ভর্তি রেখেছি। এখন সে কিছুটা সুস্থ। তবে এমুহূর্তে পরিবারের কেউ তার পাশে আসেনি।
গাংনী উপজেলা ন্র্বিাহী কর্মকর্তা প্রীতম সাহা বলেন, আমি ছুটিতে আছি। বিষয়টি আপনার মাধ্যমে জানতে পারলাম। বিষয়টি খুবই অমানবিক। আমি এসে বিষয়টি দেখবো।