দেশের সব সরকারি হাসপাতালে ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাপনা চালু করা হচ্ছে। সেবাগ্রহীতার সব তথ্য স্থায়ীভাবে সার্ভারে সংরক্ষিত থাকবে। হাসপাতালে গেলে আলাদা আইডি নম্বরে রোগী, চিকিৎসক এবং চিকিৎসা ব্যবস্থার সব তথ্য থাকবে। দ্বিতীয়বার গেলে পুরোনো রোগের কোনো তথ্য দিতে হবে না রোগীকে। এক ক্লিকে ডেটাবেজ থেকে সব তথ্য পাওয়া যাবে। উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতাল থেকে শুরু করে বিশেষায়িত সব সরকারি হাসপাতালে এ ব্যবস্থাপনা চালু করার পরিকল্পনা করেছে সরকার।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রোগীকে কী কারণে কোন ওষুধ প্রদান করা হয়েছে, কোন মেডিকেলে পরীক্ষা করা হয়েছে– এসব তথ্য সংরক্ষিত থাকবে। খুব সহজেই আগের রোগের ইতিহাস পর্যালোচনা করে চিকিৎসা দেওয়া যাবে। প্রযুক্তিনির্ভর স্বাস্থ্য ব্যবস্থা চালু করা হলে জনগণ সহজে সেবা পাবে, কমে আসবে হয়রানি ও চিকিৎসা ব্যয়। একজন রোগী দেশের যে কোনো সরকারি হাসপাতালেই তাঁর নিজস্ব ই-হেলথ রেকর্ডের মাধ্যমে এ সেবা ব্যবস্থাপনায় যুক্ত হতে পারবেন। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উন্নত প্রযুক্তিনির্ভর অবঠাকামো তৈরির সঙ্গে সেবার মান উন্নয়নে মনোযোগী হতে হবে। একই সঙ্গে অপ্রয়োজনী পরীক্ষা-নিরীক্ষা বন্ধ, চিকিৎসক ও রোগীর মধ্যে সম্পর্ক আরও উন্নত করা জরুরি।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে ডিজিটাল স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থাপনা চালুকরণ শীর্ষক প্রকল্পের অগ্রগতির বিষয়ে চলতি মাসের শুরুতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের বৈঠক হয়েছে। উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব চলতি বছর জানুয়ারিতে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। গত মার্চে আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগ থেকে পর্যবেক্ষণ প্রদান করে পুনর্গঠিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী বছরের শুরুতে এ প্রকল্পের কাজ চালু হতে পারে। প্রথমে পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে ১০০টি হাসপাতালে ওপেন মেডিকেল রেকর্ড সিস্টেম নামে একটি সোর্স সফটওয়্যারের মাধ্যমে এটি বাস্তবায়ন করা হবে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, এর মাধ্যমে হাসপাতালের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। এই প্রকল্পের আওতায় ৬২৩টি সরকারি হাসপাতালের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ক্রয় করতে হবে। নতুন করে সাড়ে চার হাজার লোক নিয়োগ, এক লাখ স্বাস্থ্যসেবাদানকারী কর্মীকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। ধীরে ধীরে সরকারি সব হাসপাতালকে ডিজিটাল স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার আওতায় নিয়ে এসে শেয়ার্ড হেলথ রেকর্ড প্রবর্তন করা হবে। কেউ চাইলে নিজের হেলথ রেকর্ড দেখতে পারবে এবং যে কোনো প্রতিষ্ঠানে গ্রহণ করা সেবার তথ্য এতে সংরক্ষিত থাকবে। চিকিৎসাসেবা দ্রুত ও সহজলভ্য এবং সেবার মান উন্নত হবে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক এ কে আজাদ খান সমকালকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী ডিজিটাল বাংলাদেশের যে স্বপ্ন দেখছেন, ‘ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাপনা’ তাতে নতুন মাত্রা যোগ করবে। একই সঙ্গে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে চিকিৎসকের মানসিকতায় পরিবর্তন আনতে হবে। প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে চিকিৎসায় রেফারেল পদ্ধতি চালু করা সহজ হবে। বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের স্বাস্থ্যসেবা থাকবে মানুষের হাতের নাগালে।
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন সমকালকে বলেন, ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সঙ্গে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থায় জনগণের আস্থা ফেরাতে হবে। চিকিৎসকের উন্নত প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করা এবং অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও আধুনিক চিকিৎসার সুযোগ তৈরি করতে হবে। অস্ত্রোপচার থেকে শুরু করে সব রোগের উন্নত চিকিৎসার যন্ত্রপাতির ব্যবস্থা করা এখন খুবই জরুরি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমের পরিচালক শাহাদাত হোসেন বলেন, এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য উপজেলা থেকে শুরু করে বিশেষায়িত সব সরকারি হাসপাতালে ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা। এর মাধ্যমে দেশে আস্তে আস্তে আধুনিক স্বাস্থ্যসেবা অবকাঠামো তৈরি হবে। এর সঙ্গে উন্নত চিকিৎসাসেবা যুক্ত হলে চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়া কমবে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় ডিজিটাল হেলথ বাস্তবায়ন শুরু করে। ডিজিটাল হেলথ সেবা ব্যবস্থার মাধ্যমে সারাদেশে সব কমিউনিটি ক্লিনিকে ল্যাপটপ ও ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া হয়েছে। গ্রামীণ স্বাস্থ্যকর্মীদের হাতে এখন ছোট কম্পিউটার আছে। এসবের মাধ্যমে অনলাইনে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহসহ টেলিমেডিসিন, স্বাস্থ্য শিক্ষা এবং মনিটরিং কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।
দেশের সব সরকারি হাসপাতাল ইন্টারনেটে যুক্ত। কোনো ডাটা এখন আর কাগজে আসে না, অনলাইন তথ্যভান্ডারে যুক্ত হয়। হাসপাতালগুলোতে আধুনিক টেলিমেডিসিন সেবা চালু হয়েছে। সব হাসপাতালে ভিডিও কনফারেন্সিং সিস্টেমে যুক্ত করা হয়েছে। মোবাইল ফোনে সার্বক্ষণিক স্বাস্থ্য পরামর্শ দেওয়ার জন্য স্বাস্থ্য কল সেন্টার ১৬২৬৩ প্রবর্তন করা হয়েছে। নতুন প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা আরও একধাপ এগিয়ে যাবে।