আগস্ট মাস নানা দিক বিবেচনায় বেদনাদায়ক মাস। বিশেষ করে ১৫ ও ২১ আগস্টের কারণে। ১৫ আগস্ট বাঙালি জাতির ইতিহাসে একটি কলঙ্কিত দিন। সবচেয়ে শোকের দিন । সোনার বাংলাদেশ গড়তে হবে বঙ্গবন্ধুর দেখানো আদর্শ ও পথ ধরে। একটি সফল রাষ্ট্র গঠনে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের বিকল্পনেই। বঙ্গবন্ধু প্রতিটি মুহূর্তের অনুপ্রেরণা।
১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসটি ২০১৮ সাল থেকে মাসব্যাপী উদযাপন হচ্ছে যা একটি সময়ের দাবি ছিল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব ও বিবেচনা করায় আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞতা জানাই। ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস শুধু বাঙালি জাতির নয় বরং সারা বিশ্বের। বিশ্ব মানবতার এক অপূরণীয় ক্ষতি ও এক হৃদয় বিদারক ক্ষমাহীন কলঙ্কিত অধ্যায় । আমাদের শপথ হোক সব বাঁধা পেরিয়ে দুর্নীতি মুক্ত সোনার বাংলা গড়ার যেমনটি চেয়েছিলেন বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
এই শোক হবে শক্তি, এই শোক হবে জাগরণ, এই শোক হবে বঙ্গবন্ধুর চোখে স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার অসীম প্রেরণা, এই শোক হবে হার না মানা লাল-সবুজ পতাকার চিরন্তন ঠিকানা। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের নয় এখন পৃথিবীর সম্পদ এবং বিশ্ব ইতিহাসের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। সুন্দর পৃথিবী গড়তে যুগযুগ প্রতীক্ষার পর কিছু মানুষ পৃথিবীতে আসে এবং নিজেকে নিঃস্বার্থভাবে মহান ত্যাগ আর বিসর্জন দিয়ে চলে যান।
যা ইতিহাসের পাতায় বীরত্বের প্রেরণা অনুসরণীয়-অনুকরণীয় অধ্যায় হয়ে থাকে। তেমনি গৌরবের এমন কিছু অস্বাভাবিক মৃত্যু সভ্যতাকে লজ্জায়ফেলে পরাজিত করে, সীমাহীন অনুতপ্ততা, অপূরণীয় ক্ষতি আর ক্ষমাহীন ঘৃণার উদাহরণ হয়ে থাকে । এমন একটি অধ্যায় ইতিহাসের মহামানবদের একজন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ।
বঙ্গবন্ধু আজ শুধু ব্যক্তি দল বা দেশের নয়, একটি বিশ্বমানবতা একটি অধিকার একটি আন্দোলন একটি বিপ একটি অভ্যুত্থানের প্রতীক গোটা বিশ্বের সম্পদ, একটি ঐতিহাসিক রাজনীতির সফল প্রতিষ্ঠানের নাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বিশ্বব্যাপী ঈর্ষণীয় এক জনপ্রিয় নেতা হয়ে ওঠেন। বিশ্ব ইতিহাসে একমাত্র নেতা বঙ্গবন্ধু এই নামটির সাথে মিশে আছে জীবনের ১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট হার না মানা পঁয়ত্রিশটি ছোট-বড় সংগ্রামের অমরকীর্তি গাঁথা জীবন্ত ইতিহাস শেখ মুজিবুর রহমান ।
১৫ আগস্টের সেই শিহরিত হৃদয়বিদারক শোকাহত ইতিহাসটি কি ছিল বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে জানতে হবে। প্রতিটি ছাত্র সমাজ যুবসমাজ সাংবাদিক সমাজ সভ্যসমাজকে এই ১৫ আগস্টের ইতিহাস অবশ্যই জানতে হবে এবং সিদ্ধান্ত নিতে হবে আমরা স্বাধীনতার পক্ষে থাকবো, মানবতার পক্ষে থাকবো, শোষিতের পক্ষে থাকবো নাকি অধিকার হরণ শোষণ সাম্রাজ্যবাদী দুর্নীতিবাজ বিতর্কিতদের পক্ষে থাকবো ?
১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হলেও তাঁর মৃত্যু নেই কেননা একটি জাতি, রাষ্ট্রের স্বপ্নদ্রষ্টা এবং স্থপতি তিনি। যতদিন রাষ্ট্রের অস্তিত্ব থাকবে ততদিন এ ভূখন্ডের আকাশ বাতাস মাটি আর মানুষের মাঝে বেঁচে থাকবেন তিনি । বঙ্গবন্ধু একটি আদর্শের নাম মানবতার ফেরিওয়ালা। পৃথিবীর ইতিহাস পরিবর্তনে যে কজন মহান নেতা নিজেকে উৎসর্গ করেছেন তাদের মধ্যেঅন্যতম আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭৫সাল ১৫ আগস্ট শুক্রবার প্রথম প্রহর বাংলার আকাশে গভীর ষড়যন্ত্রের কালো মেঘ ।
বাংলাদেশের মাটিতে প্রশিক্ষিত ও শক্তিশালী বলে অহংকার করা পাকিস্তানি বাহিনীর অপমানজনক পরাজয় এবং অসহায় আত্মসমর্পণ কিছুতেই মেনে নিতে পারেনি পাকিস্তান সামরিক সরকার । তাই ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত তারা স্বাধীন বাংলাদেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থাকে আইএসআই দায়িত্বদেয়া হয়েছিল বঙ্গবন্ধুকে চিরতরে সরিয়ে দেওয়ার জন্য । পৃথিবীর শাসক সম্রজ্যবাদী শক্তিগুলোর সরাসরি মদদ ছিল।
বঙ্গবন্ধুর মতো আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়নেতাকে সরিয়ে দেওয়াটা সত্যিই অসম্ভব অকল্পনীয় ব্যাপার ছিল। কিন্তু সেটাই ঘটেছিল ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট। বিশ্বের প্রভাবশালী আমেরিকা সহ জাতিসংঘ মিশনের মাধ্যমে তারা এই বাংলাকে ফিরে পেতে চেয়েছিল কিন্তু পারেনি। সেই সাথে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শুধু বাঙালি জাতির বন্ধু নয় তিনি হয়েছিলেন গোটা বিশ্বের শোষিত মানুষের প্রকৃত বন্ধু আর
অন্যদিকে হয়েছিলেন শোষকদের শত্রু। পরাজিত সাম্রাজ্যবাদীরা বঙ্গবন্ধুর মতো মহান এবং উদার হৃদয়ের প্রিয় মানবতাবাদি নেতাকে কখনো মেনে নিতে পারেনি।
একদিকে সাম্রাজ্যবাদী অপমানজনক পরাজিত পাকিস্তানের প্রতিশোধ অন্যদিকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা কঠোর হুঁশিয়ারি সেই কিছু দুর্নীতিবাজ শিক্ষিত চক্র আর দেশীয় শত্রুদের মসনদ লোভের ঘৃণিত ষড়যন্ত্র সব মিলিয়ে বাংলার রাখাল রাজা বঙ্গবন্ধু কঠিন বিপদের সম্মুখীন হতে চলেছেন । যা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সংঘটিত হয়েছিল। পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম এক হৃদয়বিদারক ক্ষমাহীন কলঙ্কিত ঘটনা।
এসব ঘটনার আগে বঙ্গবন্ধুকে অনেক মিত্রই সতর্ক করেছিলেন এমনকি আমাদের বর্তমান প্রেসিডেন্ট তখনকার দিনের তুখোড় ছাত্রনেতা এবং এমপি আব্দুল হামিদও বলেছিলেন। কিন্তু অকুতোভয় উদার আত্মবিশ্বাসী মানুষটি উপেক্ষা করেছিলেন সব সতর্কবাণী। বলেছিলেন ওরা আমার সন্তান আমার কোন ক্ষতি করবেনা।
রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার লোভ সাম্রাজ্যবাদের ষড়যন্ত্র আর পাকিস্তানি সিআইএর গোপন তৎপরতা তাদের এদেশীয় দোসররা স্বার্থন্বেষী বিপথগামী কিছু সেনাবাহিনীর সদস্য এবং বঙ্গবন্ধুর খুব কাছের প্রাণের রাজনীতিবিদদের অন্যতম খলনায়ক খন্দকার মোশতাকএবং মেজর জিয়াসহ কিছু বিপথগামী সেনা অফিসার দিয়ে ১৫ আগস্ট স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বাঙালির সর্বকালের শ্রেষ্ঠ সন্তান বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু সহ সপরিবারে ১৮ জনকে হত্যা করা হয় ।
বঙ্গবন্ধু তার সহধর্মিণী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব পুত্র ক্যাপ্টেন শেখ কামাল লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল ১০ বছরের শিশুপুত্র শেখ রাসেল পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল বঙ্গবন্ধুর সহোদর শেখ নাসের ভগ্নিপতি কৃষক নেতা আবদুর রব সেরনিয়াবাত ভাগ্নে যুব নেতা শেখ ফজলুল হক মণি ও তার সন্তানসম্ভ্যবা স্ত্রী আরজু মনি বেবী সেরনিয়াবাত সুকান্ত বাবু আরিফ আব্দুল নাঈম খান এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সামরিক সচিব কর্নেল জামিল শাহাদাত বরণ করেন। (চলবে)