এবার ১০ হাজার নয় এক হাজার হাজী অংশ নিচ্ছেন পবিত্র হজ পালনে। আগামী ৩০ জুলাই স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে পালিত হবে এবারের (২০২০ সালের) পবিত্র হজ।
করোনা মহামারীর কারণে এবছর সীমিত পরিসরে হজ পালনের জন্য বিশেষ স্বাস্থ্যবিধি জারি করেছে সৌদি আরবের জাতীয় রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ। এ কারণে নিবন্ধনকৃত ১০ হাজার হজযাত্রীর মধ্যে মাত্র এক হাজার হাজীকে নির্বাচিত করে গত ২৫ জুলাই থেকে আবাসিক কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। এখানেই শারীরিক সুস্থতাসহ হজের প্রাথমিক প্রস্তুতির কাজ সমাপ্ত করেছেন হাজীরা। এবারই প্রথম সৌদি আরবে অবস্থানকারী বিশ্বের ১৬০টি দেশের নাগরিকরা হজে অংশ নিচ্ছেন।
বিধি অনুযায়ী, হজ পালনকারীরা কাবা শরিফ ও কালো পাথর (হুজরে আসওয়াদ) চুমু খেতে বা স্পর্শ করতে পারবেন না। ৯ জিলহজ আরাফাতের ময়দান ছাড়া সব সময় মাস্ক পরিধান করতে হবে। এখানে হাজীরা যোহর এবং আসরের নামাজ একসঙ্গে আদায় করবেন।
এর আগে ৮ জিলহজ মীনায় পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করবেন। ৯-জিলহজ রাতে মুজদালিফায় রাত্রিযাপন করবেন। এখানে মাগরেব এবং এশার নামাজ একসঙ্গে আদায় করবেন। পর দিন ১০ জিলহজ শয়তানের উদ্দেশ্যে পাথর ছুড়ে মারবেন। এজন্য আগে থেকে জীবাণুমুক্ত প্যাকেটজাত পাথর ব্যবহার করতে হবে (সৌাদি কর্তৃপক্ষ এসব পাথর সরবরাহ করবেন)। তাই এবছর মুজদালিফা থেকে শয়তানকে ছুড়ে মারা কংকর সংগ্রহ করতে হবে না। এভাবে পর পর আরও দুই দিন শয়তানের উদ্দেশ্য কংকর মারতে হবে। এরপর মাথা মুন্ডন করে কোরবানি দিতে হবে। এছাড়া প্রথম দিনের কংকর মারা শেষ হলে, চলমান হজ কার্যক্রম শেষ না হওয়া পর্যন্ত সকল হাজীকে মীনায় নির্দিষ্ট আবাসনে থাকতে হবে।
সৌদি আরবের র্ধম মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে এসব জানানো হয়েছে। হজ পারমিট ছাড়া হজের জন্য পবিত্র স্থান মীনা, মুযদালিফা ও আরাফাতের ময়দানে প্রবেশ গত ২৫ জুলাই থেকে হজের পঞ্চম দিন ১২ জিলহজ পর্যন্ত নিষিদ্ধ থাকছে। এসময় কেউ নিয়ম ভঙ্গ করলে ১০ হাজার সৌদি রিয়াল জরিমান গুণতে হবে। একই নিয়ম দ্বিতীয়বার ভঙ্গ করলে জরিমানার পরিমাণ দ্বিগুণ হবে।
মহামারীর কারণে এবার কোনো বিদেশিকে হজ করতে যাওয়ার সুযোগ দিচ্ছে না সৌদি আরব। যারা আগে থেকে সেখানে (সৌদি আরবে) অবস্থান করছেন। শুধু তারাই হজ পালন করতে পারবেন। হজে ১ হাজারের মধ্যে ৭০০ জন বিদেশি মুসলিম নাগরিক এবং ৩০০ জন সৌদি নাগরিক অংশ নিচ্ছেন। এছাড়া অংশ গ্রহণকারী হাজীদের বয়স ২০ থেকে ৫৫ বছরের মধ্যে রাখা হয়েছে। এছাড়া মীনা, আরাফা, মুজদালিফা ও জামারার হজের কার্যক্রমে প্রতি দলে ২০ জন করে অংশ নেবেন। এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াতের সময়ও ২০ জন করে দল থাকবেন। এমনকি হজ কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর কারও ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনী ও হাপানি রোগের লক্ষণ বা উপসর্গ থাকলে তিনিও হজে অংশ নিতে পারবেন না।
ইতিপূর্বে হজ করেছেন এমন ব্যক্তিও এবার বিবেচিত হবেন না। হজ চলাকালে কারও মধ্যে করোনাভাইরাসের উপসর্গ দেখা গেলে তার ও সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের পরিস্থিতি চিকিৎসকের পর্যালোচনার পরই কেবল হজ শেষ করার অনুমতি দেওয়া হবে। তাদের জন্য আলাদা আবাসন, পরিবহন ও ভ্রমণ সূচির ব্যবস্থা করা হবে।
উচ্চ মাত্রার জ্বর, কফ, গলা ব্যাথা ও হঠাৎ ঘ্রাণ ও স্বাদ হারিয়ে ফেলার মতো উপসর্গ দেখা গেলে তাকে হজ পালন করতে দেওয়া হবে না। হজ পালনকারী ও হজে দায়িত্ব পালনকারীদের অবশ্যই সুরক্ষা মাস্ক পড়তে হবে। ব্যবহার শেষে সুনির্দিষ্ট স্থানে ফেলতে হবে।
হজ পালনকারীরা যেখানেই সমবেত হোন কেন দু’জনের মধ্যে অন্তত দেড় মিটার দূরত্ব রাখতে হবে। খাবার পানি ও জমজমের পানি একবার ব্যবহারযোগ্য কন্টেইনারে সংগ্রহ করা যাবে। মক্কা ও পবিত্র স্থানগুলোর পানি ঠান্ডা রাখার রেফ্রিজারেটর সরিয়ে ফেলা হয়েছে। হজ পালনকারীদের প্রত্যেককে আগে থেকে হজের সমাপ্তি পর্যন্ত প্যাকেটজাত পুষ্টিকর খাবার দেওয়া হবে।
আরাফাত ও মুযদালিফায় হজ পালনকারীদের অবশ্যই নির্ধারিত স্থানে অবস্থান করতে হবে। সে ক্ষেত্রে হজ বিধিবিধান কড়াকাড়িভাবে মেনে চলতে হবে। মীনার তাবু এলাকার ৫০ বর্গমিটারের মধ্যে ১০ জনের বেশি হজ পালনকারী থাকতে পারবেন না। এছাড়া কাবা ও কালো পাথরের চারপাশে অবরোধ দেওয়া থাকবে যাতে কেউ কাছে না যেতে পারে।
তাওয়াফের জন্য কাবার চারপাশ এবং সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মধ্যে দৌড়ানোর স্থানকে প্রতি দল হজ পালনকারী ব্যবহারের আগে ও পরে জীবাণুমুক্ত করা হবে। সূত্র-যুগান্তর