মেহেরপুরের ট্রেজারি অফিসার ও এনডিসি রাকিবুল ইসলামের স্বাক্ষর জাল করে পাঠানো চাহিদার ১৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকার স্ট্যাম্প আসার দুইদিন পর সেই স্ট্যাম্প মেহেরপুরের জেলা প্রশাসক ফেরত পাঠিয়েছেন।
স্বাক্ষর জাল করার এ কাণ্ডটি ঘটিয়েছেন নেজারত শাখার প্রধান অফিস সহকারী (বড় বাবু) রফিকুল ইসলাম। এ ঘটনার পর থেকে তিনি পলাতক রয়েছেন। তাকে সাময়িক ভাবে বরখাস্ত করেছেন জেলা প্রশাসক।
প্রসঙ্গত, চাহিদা পাঠানোর মাত্র সাত দিনের মধ্যে স্ট্যাম্প চলে আসে মেহেরপুরে। কিন্তু চাহিদা পাঠানোর পর এক মাস পর্যন্ত সময় লাগে স্ট্যাম্প আসতে। ডাকবিভাগের একটি মহলের সাথে যোগসাজশে নাজির রফিকুল ইসলাম এ কাজ করেছেন বলে গুঞ্জন উঠেছে।
জানা গেছে, নেজারত ডেপুটি কালেক্টর ও ট্রেজারি অফিসার রাকিবুল ইসলামের স্বাক্ষর জাল করে নেজারত শাখার প্রধান অফিস সহকারী (বড় বাবু) রফিকুল ইসলাম বাংলাদেশ ডাক বিভাগে (বিপিও) ১৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকার স্ট্যাম্প চাহিদা প্রেরণ করেন। সেই চাহিদার স্ট্যাম্প বৃহস্পতিবার মেহেরপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পৌঁছায়। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের প্রধান অফিস সহকারী (নাজির) রফিকুল ইসলাম সেই স্ট্যাম্প গ্রহণ করেন।
স্ট্যাম্প সরবরাহ করতে আসা বাংলাদেশ ডাক বিভাগের সহকারী পরিদর্শক আবুল বাশার দেওয়ান জানান- স্ট্যাম্প ট্রেজারিতে সংরক্ষণ না করে বাইরে সংরক্ষণ করায় তার সন্দেহ হয়। তিনি ট্রেজারি অফিসার এনডিসি রাকিবুল ইসলামকে বিষয়টি অবহিত করলে তিনি স্ট্যাম্প এর চাহিদা প্রদান ও গ্রহণের করার বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানান। জেলা প্রশাসক শনিবার মধ্যরাতে স্ট্যাম্পগুলো ফেরত পাঠিয়ে দেন বাংলাদেশ ডাকবিভাগ ঢাকাতে। এ ঘটনার পর থেকে নেজারত শাখার প্রধান অফিস সহকারী (নাজির) রফিকুল ইসলাম পলাতক রয়েছেন। এদিকে এ ঘটনায় মেহেরপুর সদর থানায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে থেকে একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।
মেহেরপুরের ট্রেজারি অফিসার ও এনডিসি রাকিবুল ইসলাম বলেন, চাহিদা পাঠানোর মাত্র সাত দিনের মধ্যে স্ট্যাম্পগুলো চলে এসেছে। যেটা কখনোই এক মাসের আগে সম্ভব নয়। আশে পাশের জেলা গুলোর চাহিদা একত্রিত করার পর তবেই ডাক বিভাগের গাড়ি আসে। এছাড়া জেলা প্রশাসকের ট্রেজারি শাখা থেকে যে চাহিদাপত্র পাঠানো হয় তার থেকে কম দেয়। কিন্তু এক্ষেত্রে চাহিদা শতভাগ পাঠিয়েছে তারা। কয়েকবার সরকারি ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করার পর তবেই স্টাম্প আসে। এক্ষেত্রে কোনটিই করা হয়নি। বিষয়টি জেলা প্রশাসক স্যার জানতে পেরে স্ট্যাম্পগুলো ফেরত পাঠিয়েছেন।
মেহেরপুর সদর থানার ওসি শাহ দারা খান বলেন, স্বাক্ষর জাল করে স্ট্যাম্প আনার ঘটনায় থানায় একটি জিডি হয়েছে।
এ ব্যাপারে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট হাফিজ আল আসাদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে ডিসি স্যার জানেন।
জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ মুনসুর আলম খান বলেন, ট্রেজারি অফিসার ও এনডিসির স্বাক্ষর জাল করে নেজারত শাখার প্রধান অফিস সহকারী রফিকুল ইসলাম ১৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকার স্ট্যাম্পের চাহিদা পাঠানোর বিষয়টি জানতে পারার পর তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, স্ট্যাম্প ডাক বিভাগের সম্পদ। আমরা যেহেতু চাহিদা পাঠায়নি সেহেতু তারা আইনগত ব্যবস্থা নেবে।
প্রসঙ্গত, নাজির রফিকুল ইসলাম কে নিয়ে স্ট্যাম্প জালিয়াতির আলোচনা-সমালোচনা অনেক আগে থেকেই শোনা যায়। তবে এ ঘটনায় বিষয়টি পরিস্কার হয়েছে। আর এই স্ট্যাম্প জালিয়াতি করেই জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের একজন নাজির হয়েছে কোটি কোটি টাকা সম্পদের মালিক। পরিবারের বিভিন্ন সদস্যদের নামে বেনামে রয়েছে সম্পদ । ইটভাটা, বেসরকারি ব্যাংকের এজেন্ট, ডেইরি ফার্ম, সিড কোম্পানী, ট্রাকসহ রয়েছে শত শত বিঘা জমি। এলাকায় দান খয়রাত করার প্রবণতাও তার মধ্যে রয়েছে। যে কারণে এলাকার মসজিদ, ঈদগাহ কমিটিতে গ্রামবাসী তাকে সভাপতি বানিয়েছেন।