মানবিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ইউনিভার্সাল এমিটি। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে মানুষের দুঃখ লাঘবে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে সংগঠনটি। করোনাকালে যখন পরিবারের মানুষগুলো ভয়ে নিজেকে করেছে গৃহবন্দী, মৃতুভয়ে যখন তারা আত্মীয় স্বজনদের পর্যন্ত ভুলে গিয়েছিল তখনও Universal Amity র মানবিক কর্মীরা মানুষের জন্য কাজ করে গেছে। খোলা আকাশের নিচে রাত কাটানো ক্ষুধার্ত মানুষগুলোর কষ্ট ঘরের বাহির করেছে একদল মানবিক কর্মীকে। সারাদেশে যখন লকডাউন চলছে তখনও মানবিক হতে পিছপা হয়নি তারা। বিবেক তাদের কাছে মৃত্যু ভয়ের চেয়ে অমানুষ হবার যন্ত্রণাকে বড় করে তুলেছে। তাইতো পিপিই পরে খাবার নিয়ে ছুটে গিয়েছে ঢাকার ফুটপাতে অপেক্ষমান অনাহারী মানুষগুলোর কাছে। একে একে ২০০ তম দিন পার করল ইউনিভার্সাল এমিটির ফুড-ফর-গুড প্রকল্প। এরই মধ্যে এ প্রকল্প ঢাকার সীমানা ছাড়িয়ে কাজ করেছে কুড়িগ্রাম ও খুলনাতে।
১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২০ এক ব্যতিক্রমী বিজয় উৎসব উদযাপন করেছে ইউনিভার্সাল এমিটি। নিজ হাতে রান্না করে ১২ টা ০১ মিনিটে খুলনা শহরের শতাধিক গৃহহীন অসহায় মানুষদের হাতে তুলে দিয়েছে খাবারের প্যাকেট আর একটি করে কম্বল দিয়ে জড়িয়ে নিয়েছে ভালোবাসার উষ্ণতায়।
২০১৫ সালে স্বেচ্ছাসেবী এই মানবিক সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হয় মেহেরপুর সদর উপজেলার শুভরাজপুর গ্রামের কৃতিসন্তান, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মেহেদি হাসানের হাত ধরে এবং তাঁর হাতে হাত মিলিয়ে এই মানবিক আন্দোলনকে বেগবান করেছে একদল মানবিক যোদ্ধা। কখনো তারা ছুটে বেড়াচ্ছে ক্ষুধার্তের ক্ষুধা নিবারণ করতে কখনো বা চরাঞ্চলের ঘূর্ণিদুর্গত গৃহহীনদের গৃহ নির্মাণ করে দিতে। কখনো আবার ইনকাম এইড প্রকল্পের মাধ্যমে দুঃস্থ পরিবারগুলোকে করে দিচ্ছে আয়ের ব্যবস্থা। বন্যা, ঘূর্ণিঝড়সহ যে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগে ছুটে যাচ্ছে মানবতার গল্প রচনার প্রয়াসে।#Aidforlife প্রকল্পের আওতায় মেহেরপুর সদর ও গাংনী উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে শারীরিক প্রতিবন্ধীদেরকে ৯ টি হুইল চেয়ার উপহার দেওয়া হয়েছে। উইন্টারকেয়ার প্রকল্পের আওতায় এ বছর উত্তরবঙ্গের পঞ্চগড়, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাটে প্রায় ২,০০০ কম্বল; খুলনার পাইকগাছা ও কয়রায় প্রায় ১০০০ কম্বল এবং সাতক্ষিরার আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর গ্রামে ৪০০ কম্বল বিতরণ করা হয়। এছাড়াও ঢাকায় ছিন্নমূলদের মাঝে গত ১১ ডিসেম্বর কম্বল বিতরণ করে সংগঠনটি।
আগামী সপ্তাহে গাইবান্ধা আর নীলফামারী জেলার কয়েকটি স্থানে আরও প্রায় হাজারখানেক কম্বল বিতরণ করার কথা রয়েছে। লাইফলাইন প্রকল্পের আওতায় ৩০ টি নলকূপ স্থাপনের মাধ্যমে সুপেয় ও নিরাপদ পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে প্রায় ১৫০ টি পরিবারের। কুড়িগ্রামের শতাধিক পরিবারের আয়ের ব্যবস্থা করে দিয়েছে গরু-ছাগল আর সেলাই মেশিন বিতরণের মধ্য দিয়ে। আর এই সকল মানবিক কাজ এগিয়ে চলেছে বেশকিছু মহৎপ্রাণ মানুষের আর্থিক সহযোগিতায়। সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতার মতে মানুষ নামের সার্থকতা তখনই আসবে যখন মানুষের মাঝে বৈষম্য থাকবে না। থাকবে না কোন ক্ষুধার্ত মানুষের আর্তনাদ। ছোট ছোট সহযোগীতার সম্মিলিত প্রয়াসে গড়ে উঠবে সত্যিকারের মানবিক পৃথিবী।